চায়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে এই অর্থকরী ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘জাতীয় চা দিবস’ উদযাপন এবং জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
তার সরকারের সারাদেশে বিদ্যুতায়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন গ্রাম গঞ্জের মানুষ অনেক বেশি তথ্য পান। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রাত ১১টা ১২টা পর্যন্ত সমাজ, রাজনীতি,অর্থনীতি ও বিশ্ব পরিস্থিতির আলোচনায় চায়ের কাপে ঝড় ওঠে।
“চায়ের কাপে এই ঝড় দিন দিন বাড়ছে, কাজেই চায়ের চাহিদাও বাড়ছে। সেজন্য উৎপাদনও বাড়াতে হবে। আর এটা করার জন্য যা যা করার দরকার অবশ্যই আমরা তা করব। আপনাদের সবরকম সহযোগিতা করব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
বিশ্বব্যাপী চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চা পাতা বাল্কে বিক্রি না করে এর মূল্য সংযোজন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষের রুচি এখন বদলে গেছে। বিভিন্ন ধরনের চা এখন পাওয়া যায়। সুগন্ধি চা তৈরি করুন। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্বাদের চায়ের চাহিদা এখন অনেক বেশি। চা উৎপাদনের পাশাপাশি এদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।”
মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটায় এখন বিভিন্ন ধরনের চা পাওয়া যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “হারবাল টি, মসলা টি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য অ্যারোমা টি উৎপাদন করা প্রয়োজন। কারণ, বিভিন্ন অ্যারোমা চায়ের কদর অনেক বেশি। তাছাড়া তুলসি, আদা, লেবু, তেজপাতা, এলাচ,লং, দারুচিনি প্রভৃতির সাহায্যে আমরা যে চা বানাই সে চাও প্যাকেটজাত করা যায়।”
সরকারপ্রধান বলেন, “আমি যারা চা মালিক এবং ব্যবসায়ীগণ রয়েছেন, তাদেরকে, বিশেষ করে মালিকদের বলব, আপনারা ভ্যালু অ্যাড করেন। বাল্কে চা বিক্রির পরিবর্তে যদি ভ্যালু অ্যাড করেন, তাহলে আপনারা ভালো দাম পাবেন। উপার্জন করতে পারবেন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এবং বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, পাট পাতা থেকে চা তৈরিতে গবেষণা চলছে এবং সীমিত আকারে উৎপাদন হচ্ছে। এটি নিয়ে আরও গবেষণা করে এর উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন।
চা শ্রমিকদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়ার এবং তাদের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়াসহ তাদের সন্তান-সন্ততিদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য চা বাগানের স্কুলগুলোর উন্নয়নে মালিকপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, চা বাগানে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত, যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও অনেকেই রয়েছেন। কাজেই তাদের জীবনমান উন্নত করা, আর্থিক দিক দেখা, ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত দেখা কিন্তু মালিকদের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, “অভিভাবকের মত আপনারা সেটা দেখবেন, আমরা সেটাই চাই। পাশাপাশি চা শ্রমিকরা আর ভাসমান থাকবে না, সে বিষয়টিও দেখার দায়িত্ব আমাদের।”
মালিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চা শ্রমিকদের প্রতি যত্নবান হলে তাদের থেকে বেশি কাজ আদায় করিয়ে নিতে পারবেন। তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, চিকিৎসাসহ নানা বিষয় দেখবেন। চা শ্রমিকদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই, আপন ভূমি নেই। আমরা তাদের সেই মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেব। কেউ ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না– আমাদের পরিষ্কার কথা।”
চা খুব পছন্দ করেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “চা আমার খুব প্রিয়। আমি চা পান করি। কারণ, জাতির পিতা চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। আর বিশেষ করে, চা শ্রমিকরা নৌকায় ভোট দেন। অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের অন্য দিকে নিতে পারে নাই। তাদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।”
সরকারপ্রধান বলেন, উত্তরাঞ্চলে চায়ের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সেটাকে সম্প্রসারণ এবং যত্ন করা, কীভাবে আরও চা উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া চা বোর্ড, ক্ষুদ্র চাষিদের প্রযুক্তি সহায়তা, প্রণোদনা, সবদিক থেকে সরকার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। পঞ্চগড়ের পাশাপাশি লালমনিরহাটেও চা বোর্ডের স্থায়ী অফিস নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “পঞ্চগড়ে আঙ্গিনায়ও চা হচ্ছে। তারা তরকারিও ফলায়, চায়ের গাছও লাগায়। আমাদের অর্থকরী ফসল হচ্ছে চা। যেটা দেশের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিতে সহায়তা করছে। চায়ের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।”
চা উৎপাদনে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ২০২৩ সালে রেকর্ড ১০২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল বলেও এ সময় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি ও শ্রমিকদের মাঝে আটটি ক্যাটাগরিতে ‘জাতীয় চা পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান করেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন, চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে চা শিল্পের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে চা মেলারও উদ্বোধন করেন এবং পরে বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং চা মেলা পরিদর্শন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম বাঙালি হিসেবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করে বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করেন। সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকার ২০২১ সাল থেকে জাতীয় চা দিবস উদযাপন করে আসছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশের সংকল্প, রপ্তানিমুখী চা শিল্প’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশে চতুর্থবারের মত এবছর ‘জাতীয় চা দিবস-২০২৪’ উদযাপন হচ্ছে। বাসস
