অন্তর্বর্তী সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ছায়া সরকার গঠন করবে ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সকাল সন্ধ্যার সাথে শুক্রবার একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, শিক্ষক নেটওয়ার্কের ভেতর এখন যে চিন্তাটা আছে তা হলো ছায়া সরকার (গঠন) করা।
ছায়া সরকার মানে একটি খুবই সক্রিয় এবং শক্তিশালী কার্যকরী ভূমিকা পালন করা- একথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ছায়া সরকার মানেই একটি রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করা।
হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা ছিল শিক্ষক নেটওয়ার্কের।
গত ২ আগস্ট ছাত্র জনতার ‘দ্রোহযাত্রা’ কর্মসূচি থেকে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন আনু মুহাম্মদ। সেই সমাবেশের পর এক দফার দিকে গতিমুখ পায় এই আন্দোলন। সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখাও ঘোষণা করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
ছায়া সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে আনু মুহাম্মদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ছায়া সরকার বলতে বোঝায় যেটা গদিনসীন সরকার না। সে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতাশীল সরকার না। কিন্তু জনগণের পক্ষে একটি পাল্টা সরকার রাখা হচ্ছে, যা সরকারকে মনিটরিংয়ের উপর রাখবে।
“সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে যেকোনও কার্যক্রম হচ্ছে জনগণের পক্ষ থেকে তা দেখভাল করাই (ছায়া সরকারের) কাজ। সেখানে যদি ভুল হয়, যদি দুর্বলতা থাকে সেগুলোকে আইডেন্টিফাই করছে।”
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছায়া সরকার থাকার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, “সেখানে সরকারই ছায়া সরকার গঠন করে।”
যুক্তরাজ্যে বিরোধী ছায়া মন্ত্রিসভার নিয়ম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রয়েছে। মূলত বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সমন্বয়ে এই ছায়া মন্ত্রিসভা হয়। তাদের প্রধান কাজ যুক্তরাজ্যের নির্বাচিত মন্ত্রিসভার কাজ যাচাই করা। প্রতিটি ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যকে সাধারণত একটি পদ দেওয়া হয়, যা মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচরাচর বিরোধী দলের নেতা দ্বারা নিযুক্ত হন। তারা সাধারণত ছায়ামন্ত্রী হিসেবে পরিচিত।
ছায়ামন্ত্রীরা বিকল্প নীতি তৈরি করে, সরকারকে তার কর্ম ও প্রতিক্রিয়ার জন্য জবাবদিহি করে এবং তাদের নিজস্ব নির্দিষ্ট নীতির ক্ষেত্রে বিরোধী দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। ছায়ামন্ত্রীদের হাউস অব কমন্স বা হাউস অব লর্ডসের সদস্যদের থেকে নেওয়া হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট রাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ১০ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অনতিবিলম্বে করণীয় ছয়টি এবং দীর্ঘমেয়াদে করণীয় ১৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
অবিলম্বে সরকারের করণীয় ছয়টি প্রস্তাবনার মধ্যে ছিল– আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা; বিভিন্ন উপাসনালয় ও স্থাপনায় হামলা ঠেকানো এবং বিচার করা; জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ জনগণের ওপর জুলুমের জন্য দায়ীদের জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তদন্ত ও বিচার শুরু করা; কোটা আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং নিহতের পরিবারকে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করা; সাম্প্রতিক সময়ের হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া এবং শিল্প-কলকারখানা খুলে দিয়ে সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ২০০৫-২০২১ পর্যন্ত বাংলাদেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খনি বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
সেসময় এশিয়া এনার্জিকে বাংলাদেশ থেকে বহিঃস্কার ও উন্মুখ খনি নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দফা সম্বলিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সরকার ও জনগণের মধ্যে যেটি ফুলবাড়ী সমঝোতা চুক্তি নামে পরিচিত।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সেই ফুলবাড়ী সমঝোতা চুক্তিতে জনগণের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হবে শনিবার সন্ধ্যায়