Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা প্রস্তাব শিক্ষক নেটওয়ার্কের

আনু মুহাম্মদ
অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা প্রস্তাব করে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবি তোলা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক পরিবর্তনের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তাতে কীভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে।

দুদিন আগে দ্রোহযাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই রূপরেখা তুলে ধরেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আনু মুহাম্মদ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গুলি করে বাংলাদেশে কেউ টিকতে পারেনি। এই সরকার ইতিহাসের শিক্ষা নেয়নি।

“আমরা তাদের শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা স্থস্তান্তর করার আহ্বান জানাই। কীভাবে সরকার দায়িত্ব ছাড়বে, তারই একটি প্রাথমিক রূপরেখা আমরা প্রকাশ করছি।”

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানানো এই শিক্ষক বলেন, “আমাদের ইতিহাস মনে রাখতে হবে- আমাদের ইতিহাস শুধু মার খাওয়ার ইতিহাস নয়, আমাদের ইতিহাস প্রতিরোধেরও ইতিহাস, নতুনত্ব নির্মাণেরও ইতিহাস। সেই ইতিহাস নির্মাণে শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে ভূমিকা পালন করব।”

রূপরেখায় যা আছে

১. অবিলম্বে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর সম্মতিক্রমে, নাগরিক ও রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষক, বিচারপতি, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের অংশীজনদের নিয়ে একটি জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-শ্রেণির অন্তর্ভুক্তিমূলক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই সরকারের সদস্য নির্বাচনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। এই সরকারের কাছে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করবে।

২. শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর অংশীজনদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনসমূহের সমন্বয়ে সর্বদলীয় শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি ছায়া সরকার গঠিত হবে। তারা এই অন্তর্বতীকালীন সরকারের জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, যেন দেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয় এবং এই গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত দাবি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ ধরনের ছায়া সরকার নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও অব্যাহত থাকতে পারে।

৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো পালন করবে, সেগুলো হলো-

ক. জুলাই হত্যাকাণ্ড এবং জনগণের ওপর নৃশংস জোরজুলুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে।

খ. সাম্প্রতিক সময়ে করা মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও হয়রানিমূলক মামলা বাতিল করবে এবং এসব মামলায় আটক সবাইকে মুক্তি দেবে।

গ. সরকার গঠনের ৬ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান সভা (কনস্টিটিউশনাল এসেম্বলি) গঠনের জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। নির্বাচিত সংবিধান সভা এমন এক গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রস্তাব করবে যে সংবিধানে স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, জনবিদ্বেষী, বৈষম্যমূলক কোনও ধারা থাকবে না। সেই সংবিধানের ভিত্তিতে সরকার অবিলম্বে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করবে।

৪. শিক্ষার্থী-নাগরিকদের অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর মধ্যে সংলাপের ভিত্তিতে একটি ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে হবে, যেখানে বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার মেলবন্ধনে জনগণের বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথ নির্দেশ করা হবে।

প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, মূল অংশীজনের তালিকা প্রণয়ন এবং শিক্ষার্থী জনতার ছায়া সরকার গঠনের প্রয়োজনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত বলে জানান আনু মুহাম্মদ।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই প্ল্যাটফর্মের সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন চলমান সহিংসতার দিকটি তুলে ধরে বলেন, “এই আক্রমণের ফলে সংবাদ মাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী গত ১৬ জুলাই থেকে প্রায় তিনশর কাছাকাই মানুষ শহীদ হয়েছে সরকারি দল ও তার অঙ্গ সংগঠনের সশস্ত্র ব্যাক্তি এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে। গণঅভ্যুত্থান আমরা অনেক দেখেই। কিন্তু ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে এত প্রাণহানি বাংলাদেশ আর কখনও দেখেনি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান বলেন, “এই ভয়ংকর নিপীড়দের বিপরীতে অসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে শিক্ষার্থীরা। শত নিপীড়ন ও প্রলোভন সত্ত্বেও তাদের একা অটুট। সরকার এবং তাদের গুণ্ডাবাহিনীর অব্যাহত নারকীয় আক্রমণের পরও প্রতিবাদ বন্ধ হয়নি।

“আজকে আর এ আন্দোলন কেবল কোটা-সংস্কারের প্রশ্নে আটকে নেই, জুলাই হত্যাকােণ্ডর বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আজ এক গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক শিক্ষার্থীদের সকল দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে এই স্বৈরাচারী সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু বলেন, “কেবল শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন বাংলাদেশের মুক্তি আনবে না। পুনঃপুনঃ স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বেড়ে ওঠা বন্ধ করবে না। কারণ আমাদের সংবিধানের মধ্যেই একব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী ব্যবস্থা বিকাশের সুযোগ লুকায়িত আছে।

“এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র বেদখল হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধকে পুনরুদ্ধার করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের নাম নিয়ে কিংবা না-দিয়ে ফুটপাট, অন্যায়, দুর্নীতি, প্রাণ-প্রকৃতি বিধ্বংসী উন্নয়নের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী কায়দায় জনগণের ওপর আক্রমন আর চলবে না।”

বুয়েটের অধ্যাপক আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকে জনগণের হাতে ফেরত নিয়ে আসতে হবে যেন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় রাষ্ট্রের বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রূপান্তর করা যায়। যে রুটি-রুজির বৈষম্যের প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তাদের দেখানো পথেই বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। এই বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রূপান্তর কীভাবে হবে সে আলোচনাই এখন মুখ্য।

“এই রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন জন-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে এক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। সংগ্রামরত শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলনকারী শিক্ষক, পেশাজীবী, শ্রমজীবী মানুষ, শ্রমিক সংগঠন, নারী সংগঠন- সকলকে সম্মিলিতভাবে এই নতুন বন্দোবস্ত বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সকল অন্তর্ঘাত পরাজিত করে এই যাত্রা অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত