চলচ্চিত্র অঙ্গনের নানা সংকট এবং তা থেকে উত্তরণের আলোচনায় বুঁদ ছিল টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (টেজাব) এর উদ্যোগে আয়োজিত সংলাপ।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীর চিত্রশালায় ওই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে চলচ্চিত্র নির্মাতাসহ চলচ্চিত্র সংস্কারে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
টেজাবের সভাপতি নাজমুল আলাম রানার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ জয়ের সঞ্চালনায় ‘চলচ্চিত্রের চাঁদমারি : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রবন্ধ পাঠ করেন চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু।
সংলাপে অতিথি ছিলেন- পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াত, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সিনেপ্লেক্স এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর খালেদ আহমেদ শাম্মি, রায়হান রাফি, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, চলচ্চিত্র বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য, নির্মাতা ও প্রযোজক আরিফুর রহমান, অভিনেতা, শিক্ষক ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্য তিতাস জিয়া, এফডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান খান প্রমুখ।
সংলাপে উপস্থিত হয়ে অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন “সিনেমা সত্য জানার প্রশস্ত একটি পথ। সেই সিনেমা এখন ভয়াবহ দিকে রূপ নিচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে নানা প্রতিবন্ধকতা ভেবে আমরা যদি থেমে থাকি তাহলে আমাদেরই ক্ষতি। কারণ পুরো বিশ্বে সিনেমা কিন্তু থেমে নেই। বাংলাদেশে টিভি নাটক আগের তুলনায় অনেক কম। তাই বলে নাটক কি বন্ধ হয়ে গেছে? এখন ইউটিউবসহ ওটিটির নানা মাধ্যম এসেছে। সঙ্গে বাজেটও বেড়েছে। সেগুলোতে শিল্পী-কলাকুশলীরা কাজের সুযোগ পাচ্ছে। এটা সত্য, সংস্কৃতি তার পথ খুঁজে নেয়। কিন্তু আমাদের কাজের মান বাড়ছে না। চলচ্চিত্রে আমরা যদি কাজের মান বাড়াতে পারি তাহলেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারবো।”
কথা বলছেন তারিক আনাম খান।
তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি ভারতীয় শিল্পীদের কথা বলি তাহলে রজনীকান্তের কথা বলতেই হয়। কীভাবে তিনি এই বয়সেও কাজ করে চলেছে। তাদের নিয়ে গল্প হচ্ছে। সেগুলো গল্প আবার সুপারহিট তকমা পাচ্ছে। এখনো তার সিনেমা দেখার জন্য ভোর চারটায় মানুষ লাইন ধরে টিকিট কাটছে। কী আছে সেই সিনেমায়? আমাদের এমন জয়গা তৈরি করতে হবে।”
প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, দেশে সিনেমার মার্কেট আছে শত কোটি টাকার। যেসব সিনেমা হল চালু আছে, সেগুলোতে যদি টানা দুই মাস যদি মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ঠিক মতো চলে, তবে শত কোটি টাকা ব্যবসা করা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “ফিল্মে কিছু পলিসি আছে এগুলো অতি দ্রুত পরিবর্তন করা উচিত। যদি তা করা যায়, তবে যে কোন সিনেমা থেকে মোটামুটিভাবে মোটামুটি আয় করা সম্ভব। গল্পের প্রয়োজনে অনেক সময় ভায়োলেন্স বা সত্যটা দেখাতে গেলে সেটা দেখানো যায় না। নতুন যে সার্টিফিকেশন বোর্ড হয়েছে আগের থেকে এখানে কী কী পার্থক্য এবং ‘ল’ আছে সে বিষয়গুলো ভালোভাবে জানানো উচিত।”
সরকারকে বক্স অফিস ও ই-টিকেটিং এর ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে শাহরিয়ার শাকিল বলেন, “বাংলাদেশের যে সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমো হলগুলো রয়েছে, সেগুলোতে কত টাকার টিকেট বিক্রি হচ্ছে তা ঠিকঠাক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। হলে প্রতিনিধি পাঠানো হয়। আবার প্রতিনিধিকে পাহারা দেয়ার জন্য আরেকজন প্রতিনিধি পাঠাতে হয়। এতে করে সরকার ঠিকভাবে ট্যাক্স পাচ্ছে না। সরকার যদি বক্স অফিস ও ই টিকেটিং ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে সঠিক ট্যাক্স পাবে এবং আমরা ব্যবসা করতে পারব।”
প্রযোজক আবদুল আজিজের কথায়, “সরকার প্রতিবছর বিশ কোটি টাকা সিনেমায় অনুদান দিচ্ছে। এটা বন্ধ করে তিনটি সিনেপ্লেক্স করে দেয়া উচিত। এতে ইন্ডাস্ট্রি টিকবে। যেভাবে অনুদান দেয়া হয় এতে ইন্ডাস্ট্রির কোনো লাভ হয় না। পাশাপাশি যৌথ প্রযোজনার নিয়মগুলো পরিবর্তন করা উচিত। এতে বড় বাজেটের সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব হবে। যৌথ প্রযোজনার সিনেমাগুলো দিয়েই আমরা অতীতে দেখেছি দর্শকের ঢল নেমেছে।”
গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, “আমাদের দেশে সিনেমা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দরকার। যেখানে পুরো বিশ্বের সিনেমার বড় বড় লোকদের নিয়ে ক্লাস করানো হবে। এই কাজটা খুব বেশি বড় কাজ নয়। সরকার যদি মনে করে এবং রাজনৈতিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তাহলেই এটা সম্ভব। আর দেশে ব্যক্তিগতভাবে হলেও আমাদের কিছু স্টুডিও দরকার। যেখানে আমরা পয়সা দিয়ে হলেও কাজ করতে পারবো। এছাড়া সিনেমা সংক্রান্ত একটি সার্ভার খুবই প্রয়োজন, সেখান থেকে পুরো দেশে আমরা চলচ্চিত্র পরিবেশন করতে পারবো।”
কাজী হায়াৎ বলেন, “ঈদের ‘দুয়েকটা ছবি বাদে কোনো ছবিই ব্যবসা করছে না। ফলে পুরো বছর দর্শক থাকছে না। আমরা দর্শক ধরে রাখতে পারছি না। দর্শক থাকলে সিনেমা হল, ডাবল স্ক্রিন, সিনেপ্লেক্স থাকবে। কিন্তু সেই দর্শকদের জন্য তো আমরা কিছু করতে পাচ্ছি না। তাদের তো আমরা ভালো ছবি দিতে পারছি না। সিনেমা বাঁচাতে হলে আমাদের ভালো কন্টেন্ট দরকার। তাহলেই সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।”
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে কর্মরত বিনোদন সাংবাদিকদের নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ‘টেলিভিশন এন্টারটেইনমেন্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেজাব)’।
বিনোদন সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক বিকাশ এবং কর্মক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতে সংগঠনটি তাদের যাত্রা শুরু করেছে।