Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
চার কৃষক মুক্ত

স্বজনরা বলছে মুক্তিপণের কথা, পুলিশ বলছে অভিযান

ss-teknaf-10-03-24
[publishpress_authors_box]

কক্সবাজারের টেকনাফে অপহৃত পাঁচ কৃষকের মধ্যে চারজনকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধারের দাবি করলেও স্বজনরা বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে শনিবার মধ্যরাতে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে চারজনকে। আরেকজনের জন্য আরও পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।

যদিও চারজনের মুক্তির জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা কাকে বা কী মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে- তা নিয়ে দুই ধরনের তথ্য জানিয়েছেন অপহৃতদের স্বজনরা।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী পাহাড়ী এলাকায় ক্ষেত পাহারায় থাকা পাঁচজনকে অপহরণ করা হয় গত ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোরে। মুখোশ পরা একদল দুর্বৃত্ত অস্ত্রের মুখে তাদের তুলে নিয়ে যায়।

তখন স্বজনরা জানিয়েছিল, মোবাইলে কল দিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ নুরের জন্য ১৫ লাখ এবং বাকি চারজনের জন্য ১৫ লাখ টাকা।

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি জানিয়েছেন, শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের শালবন ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পশ্চিমের গহীন পাহাড় থেকে চারজনকে উদ্ধার করা হয়।

তারা হলেন- হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী এলাকার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে মো. জিহান (১৩), ফকির আহম্মদের ছেলে মো. রফিক (২২) ও মো. ছৈয়দুল্লাহর ছেলে মো. শামীম ও নুরুল আমিনের ছেলে আব্দুর রহমান। জিম্মি রয়েছেন একই এলাকার আব্দু রকিমের ছেলে মোহাম্মদ নুর।

পুলিশ বলছে, মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি তারা অবহিত নন। উদ্ধার হওয়াদের চোখ-মুখ ও হাত-পা খোলা ছিল।

মুক্ত চারজন জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তরা ছেড়ে দেওয়ার আগে তাদের চোখের বাঁধন খুলে দেয়।

কাকে, কোথায় দেওয়া হয় মুক্তিপণ

স্বজনদের একটি পক্ষ জানিয়েছে, মুক্তিপণের টাকা রাতে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির হাতে দেওয়ার পরই ছেড়ে দেওয়া হয় চারজনকে। আরেক পক্ষ বলছে, মুক্তিপণের টাকা পাহাড়ের একটি স্থানে পৌঁছে দেওয়ার পর ছাড়া হয় তাদের।

টেকনাফের হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, পুলিশ যে চারজনকে উদ্ধার করেছে তাদের জন্য স্বজনরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে স্বজনরা পরিষ্কার করে কিছুই বলছে না।

ফেরত আসা চারজনের মধ্যে দুইজনের নিকট আত্মীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তারা জানায়, একজন ইউপি সদস্যের হাতে এই টাকা পৌঁছানোর এক ঘণ্টার মধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হয় চারজনকে। সেই চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের পরিবার টাকা দিয়েছে। মো. জিহানের পরিবার থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয়নি।

ফেরত আসা চারজন জানিয়েছেন, মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগেই তাদের চোখের বাঁধন খুলে দেয় দুর্বৃত্তরা। জিম্মি হওয়ার পর বেশিরভাগ সময় তাদের চোখ বাঁধা ছিল। কেবল খাওয়ার সময় খোলা হতো।

ফেরত আসা চারজনের মধ্যে অপর দুইজনের স্বজনরা বলছেন, মুক্তিপণের টাকা পাহাড়ের পাদদেশে এক স্থানে রাখা হয়েছিল। সেখানে চক্রটি টাকা পাওয়ার পরপরই ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

ফেরত আসা দুইজন বলছেন, পুরো অপহরণের ঘটনাটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী শাহ আলম, নুরুল আবছারের নেতৃত্বে হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছে, নুরুল আবছার ২০১৬ সালের মে মাসে টেকনাফের নয়াপাড়া শালবান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত আনসার ক্যাম্পে হামলাকারীদের একজন। ওই সময় এক আনসার কমান্ডারকে হত্যা করে লুট করা হয়েছিল অস্ত্র। ওই মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করে ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে জামিনে বের হন নুরুল আবছার।

চারজনের জন্য মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি পুলিশকে নিশ্চিত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি।

তিনি জানান, অপহরণের পর পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান শুরু করে। শনিবারও পুলিশ-র‌্যাব যৌথ অভিযান চালায়। রাতে পুলিশের অভিযানের মুখে দুর্বৃত্তরা চারজনকে ছেড়ে দিয়েছে। অপহৃতদের একজন এখনও জিন্মি রয়েছে। তাকে উদ্ধারে অভিযান চলছে।

ওসি জানান, টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে উদ্ধার চারজনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত