কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে বিকল্প পথে কক্সবাজারের টেকনাফের সঙ্গে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নৌযোগাযোগ সচল হয়েছে। যাত্রী ও জরুরি পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ হয়ে সেন্ট মার্টিনে চলছে এসব নৌযান।
শনিবার সকালে শাহপরীরদ্বীপ থেকে জরুরি পণ্য ও যাত্রী নিয়ে সেন্ট মার্টিন গেছে দুটি ট্রলার। অন্যদিকে সেন্ট মার্টিন থেকে রোগীসহ ১৫ যাত্রী নিয়ে শাহপরীরদ্বীপ এসেছে দুটি স্পিডবোট।
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘাতের মধ্যে নাফ নদীতে চলাচলরত নৌযান লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সম্প্রতি টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বিকল্প পথে উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে হলেও টেকনাফের সঙ্গে সেন্ট মার্টিনের নৌযোগাযোগ পুনরায় সচল হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
তিনি জানিয়েছেন, শনিবার সকালে শাহপরীরদ্বীপের বদরমোকাম এলাকা হয়ে দুটি ট্রলার সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ট্রলার দুটি বেলা ১২টার দিকে দ্বীপে গিয়ে পৌঁছায়। এই ট্রলার দুটিতে তিনশ’ গ্যাস সিলিন্ডার, কিছু খাদ্যপণ্য ও ৩০-৪০ জন যাত্রী ছিল। এর আগে বৃহস্পতিবার দ্বীপের ৩৫ শিক্ষার্থীসহ ৯২ জন যাত্রী নিয়ে দুটি ট্রলার শাহপরীরদ্বীপে আসে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, শনিবার প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে দ্বীপ থেকে রোগীসহ ১৫ যাত্রী নিয়ে দুটি স্পিডবোট নিরাপদে শাহপরীরদ্বীপে পৌঁছেছে।
এই দুই জনপ্রতিনিধি বিকল্প পথে সীমিত পরিসরে নৌযান চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, কোস্ট গার্ড, বিজিবি, নৌ বাহিনীর সার্বিক নজরদারি ও নিরাপত্তায় দ্বীপে আসা-যাওয়া স্বাভাবিক হচ্ছে। এতে এখনও কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও স্বস্তিতে দ্বীপবাসী। যদিও বিকল্প পথটিতে উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে হয় এবং এতে কিছুটা ঝুঁকিও রয়েছে, তারপরও দ্বীপের প্রয়োজনে একে মঙ্গল মনে করছেন তারা।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের মধ্যে গত ১ জুন বিকালে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার পথে পণ্য ও যাত্রীবাহী একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপর গত ৫ জুন সেন্ট মার্টিনে ভোট শেষে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে সাগরের একই এলাকায় আবারও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া গত ৮ জুন এবং সর্বশেষ ১১ জুনও সাগরের একই এলাকায় বাংলাদেশের দুটি নৌযান লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।
এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে হক ১২ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জরুরি সভা করে বিকল্প পথে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন মধ্যে যাত্রী আসা-যাওয়া এবং জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পণ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গত ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূল ব্যবহার করে যাত্রী আসা-যাওয়া শুরু হয়। পরদিন কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজে পণ্য পাঠানো হয় সেন্ট মার্টিনে।