সাতদিন বন্ধ থাকার পর বিকল্প পথে শুরু হয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল। মিয়ানমার থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনার পর আতঙ্কে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এ পথে চলাচলকারী নৌযান।
বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে এ রুটে যাত্রী আনা-নেওয়া এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যাত্রী পারাপার করা ট্রলারগুলোকে নিরাপত্তা দিচ্ছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। যদিও পণ্যবাহী কোনও ট্রলার বৃহস্পতিবার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাট থেকে ৩টি ট্রলারে করে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিরাপত্তায় অন্তত তিন শতাধিক মানুষ টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়। বিকাল ৩টার দিকে ট্রলারগুলো টেকনাফের মুন্ডারডেইল সাগর উপকূলে পৌঁছায়।
সেই সময়ে সাগর উত্তাল থাকায় যাত্রীদের ট্রলার থেকে সরাসরি কূলে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। পরে কয়েকটি ডিঙ্গি নৌকা সাগরে গিয়ে ট্রলার থেকে যাত্রীদের তীরে নিয়ে আসে।
ইউএনও আদনান জানান, সাগরের বিকল্প পথে যাত্রী পারাপার শুরু হলেও পণ্যবাহী কোনও ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে টেকনাফ ছাড়েনি।
গত ৭ দিন দ্বীপে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল জানিয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, এখন বিকল্পভাবে ট্রলার চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি মিলছে। যে ট্রলারগুলো টেকনাফ গেছে ওই সব ট্রলারে টেকনাফে থাকা মানুষ ফিরে আসবে।
খাদ্য সংকট সমাধানের বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, “মুলত কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে বড় জাহাজে করে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে যাবেন। এটা ব্যবসায়ী এবং জাহাজ মালিকরা মিলে করবেন। প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন।
“এছাড়া এখন বঙ্গোপসাগর হয়ে যেসব ট্রলারে যাত্রী আসা-যাওয়া করছে ওখানে কিছু পণ্য নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফলে খাদ্য সংকট হবে না।”
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। তাদের খাদ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য যায় টেকনাফ থেকে। মানুষ ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নৌযান। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে প্রতিদিনই দ্বীপের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন ট্রলারে। খাদ্যপণ্য পরিবহনেও ব্যবহৃত হয় ট্রলার।
দ্বীপের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, টেকনাফের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে আছে মিয়ানমারের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠি। গোষ্ঠিটি কোনোভাবেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ট্রলার বা স্পিড বোট চলাচল করতে দিচ্ছে না।
গত ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। গুলিতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি।
এরপর ৮ জুন পণ্যবাহী ট্রলারে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধ রাখা হয় সব ধরনের নৌযান চলাচল।