রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের কাছ থেকে বকেয়া ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৩ কোটি টাকা পাওনা আদায়সহ ১৪ দফা দাবিতে মাঠে নেমেছে টেলিটক ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ।
রবিবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক মো. রেজাউল করিম জাহাঙ্গীর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টেলিটকের ডিলার হাউজের সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ (এসআর), সুপারভাইজার ও ব্যান্ড প্রোমোটারদের (বিপি) ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বকেয়া ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
রেজাউল করিম জাহাঙ্গীর বলেন, “আমাদের মাসিক এসআর, সুপারভাইজার এবং বিপিদের বেতন বাবদ ক্ষতিপূরণ টেলিটকের বর্তমান জিএম সর্বশেষ অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর ২০২১ সালে দিয়েছেন।
“কিন্তু জানুয়ারি ২০২২ সাল থেকে বেতন বাবদ ক্ষতিপূরণ সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছেন। টেলিটক প্রথমে প্রত্যেক ডিলারের কাছ থেকে জামানতস্বরূপ এক লাখ টাকা করে নেয় এবং পরে পল্লী বিদ্যুৎ বা টেলিচার্জ বাবদ সারা বাংলাদেশের ডিলারদের কাছ থেকে ২০১৯ সালে ডিলার প্রতি ৩ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট নেয়।”
বছরখানেক পর কিছু ‘অসাধু’ কর্মকর্তা পল্লীবিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘পাওয়ার বাই টেলিটক’ হিসেবে চুক্তি করে। এতে ডিলারদের বিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা কমতে শুরু করে এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় বলে অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, “তাদের এই কর্মকাণ্ড দেখে আমরা টেলিটককে বাঁচিয়ে রাখতে, টেলিটকের মার্কেটকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে কয়েকবার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনা করি। কিন্তু তারা আমাদের বিষয়গুলো আমলে নেয়নি।”
অনেক ডিলার এসব স্বেচ্ছাচারিতা সহ্য করতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন বা অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় অনেক ডিলারের সঙ্গে প্রশাসন ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
টেলিটক থেকে অব্যাহতি নেওয়া ডিলারদের জমা করা জামানতের টাকা, বকেয়া ক্ষতিপূরণ, বিভিন্ন সময় পাওনা সিম কমিশনের টাকা চাওয়া হলে টেলিটক ম্যানেজমেন্ট অব্যাহতি নেওয়া ডিলারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, এ অভিযোগও করা হয়।
তিনি বলেন, “সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট টেলিটকের এমডি ও জিএমের সঙ্গে আমাদের ন্যায্য দাবি সংক্রান্ত বৈঠকে তারা কোনও আশানুরূপ সমাধান দিতে পারেননি। তাই আমরা ডিলাররা বাধ্য হয়ে আমাদের সব পাওনা এবং টেলিটককে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি।”
আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বর্তমান ও সাবেক ডিলারদের ন্যায্য পাওনা আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ না করা হলে দেশের সব ডিলাররা লিফটিং এবং মার্কেটিং বন্ধ রাখবে, এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
টেলিটক ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের ১৪ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- প্রত্যেক ডিলার থেকে নেওয়া পল্লী বিদ্যুৎ বা টেলিচার্জ বাবদ অতিরিক্ত জামানত সাড়ে ৭ কোটি টাকা অবিলম্বে ফেরত দেওয়া; ডিলার এবং রিটেলারদের পাওনা শতবর্ষ, বর্ণমালা স্বাগতম এবং অপরাজিতা প্যাকেজের ইউজেস কমিশন অবিলম্বে পরিশোধ করা এবং অপরাজিতা প্যাকেজের এসএএফ কমিশন প্রদান করা; টেলিটক থেকে অব্যাহতি নেওয়া সব ডিলারের জামানতসহ সব পাওনাদি অবিলম্বে পরিশোধ করা এবং কিছু অসাধু কর্মকর্তা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আগেই ৩০ শতাংশ টাকা অগ্রিম নিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতো, সেই ৩০ শতাংশ টাকা অবিলম্বে ফেরত দেওয়া।
এসময় টেলিটকের সংস্কারের বিষয়েও কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে রয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী মার্কেটে সিম সরবরাহ, নতুন প্যাকেজের সিম বাজারজাত করা, টেলি পে অ্যাপ আপগ্রেড ইত্যাদি।
এছাড়া মাদার সিম থেকে এসআর সিমে টাকা ট্রান্সফার করার পর অবিক্রিত টাকা মাদার সিমে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা; রিটেলারদের এনএমপি করার সুযোগ দেওয়া এবং প্রত্যেকটা এনএমপি জন্য কমিশন প্রদান করা; দ্রুততম সময়ে সব টুজি টাওয়ারকে ফোরজিতে রূপান্তর করা এবং ডাটা ব্যবহারের জন্য স্পেশাল স্টুডেন্ট সিম প্যাকেজ চালু করা।