দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন কারণে সারা বছরই উত্তাল থাকে। যেখানে তারুণ্য সেখানে উদ্দীপনা, উত্তেজনা থাকবেই। কিন্তু যেসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তাল হয়ে ওঠে তা দেশের জন্য সুখকর নয় বরং সমাজে আতঙ্ক ছড়ায়। কখনও র্যাগিং-নিপীড়ন বিরোধী, কখনও ধর্ষণ বিরোধী, কখনও হল দখল, কখনও চাঁদার ভাগ, কখনও নিয়োগ বাণিজ্যবিরোধী আর কখনও প্রতিপক্ষকে হামলা করে তাড়িয়ে দেওয়া— এসবই হলো উত্তেজনার কারণ। শিক্ষার নীতি, শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কিছু আন্দোলন হয় কিন্তু সেগুলো তেমন গুরুত্ব পায় না প্রচারমাধ্যমে।
এসব কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয়েছে যে— বিশ্ববিদ্যালয় মানে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব। অনুগত ভিসি, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন আর দুর্বিনীত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন— এই ত্র্যহস্পর্শে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্রমাগত নিম্নমুখী। অথচ একটা দেশের ভবিষ্যৎ বলতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৃষ্ট জ্ঞান আর পাস করে বেরিয়ে আসা দক্ষ যুব শক্তি ছাড়া অন্য কিছু কি আছে? সে কারণেই দেখা যায় যে, দেশ বা সভ্যতা যত উন্নত তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তত উন্নত। এই উন্নতি শুধুমাত্র দালানকোঠার নয়, শিক্ষার মান এবং পরিবেশের। দেশের জনগণ তাদের ট্যাক্সের টাকা বিনিয়োগ করে পরবর্তী প্রজন্মকে জ্ঞান, মেধায়, দক্ষতায় বিকশিত করবার জন্য। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় হলো সামাজিক বিনিয়োগের সর্বোৎকৃষ্ট স্থান।
মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান বলে পরিচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিক্ষোভ এবং ছাত্র রাজনীতি এখন ব্যাপক আলোচনার বিষয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্ররা হত্যাকারীদের এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্ররা দাবি জানায় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আপাতত প্রশমিত হয় আর ছাত্রলীগ এই ঘটনার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দায় থেকে সাময়িক রেহাই পায়।
একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, এই বুয়েটেই ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে নিহত হয়েছিল সাবেকুন নাহার সনি। তখনও প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে বন্ধ হয়েছিল ছাত্রদলের কার্যক্রম। আর আবরার হত্যাকাণ্ডের বেশ কয়েকবছর আগে থেকেই বাম প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ওপর হামলা-নির্যাতন চালিয়ে ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল ছাত্রলীগ। যে কারণে ক্যাম্পাসে বিরাজ করছিল বিরোধী মতাবলম্বী সংগঠনের শূন্যতা। ফলে বাম প্রগতিশীল রাজনীতির এই শূন্যতা ও ছাত্রলীগের একচ্ছত্র আধিপত্য ও সন্ত্রাসের বলি হতে হয়েছে আবরার ফাহাদকে। তাই আবরার হত্যার পরপরই শিক্ষার্থীরা যে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সেই আন্দোলনের মধ্যে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব বিরোধিতা ছিল প্রবল।
বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে, ছাত্ররা মনে করে ছাত্রলীগ করলে হলে থাকার সুযোগ পাওয়া যায়, ডাইনিং-ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া যায়, ক্যাম্পাসে বুক ফুলিয়ে হাঁটা যায়, সহপাঠীদের ওপর কর্তৃত্ব ফলানো যায়, নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়, শিক্ষা শেষে চাকরি মেলে— এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা রকম সুযোগ তৈরি হয়। একদিকে যৌবনের উন্মাদনা অন্যদিকে সুবিধার হাতছানি। ফলে ক্ষমতার মদমত্ততায় বেপরোয়া হয়ে উঠার সুযোগ তৈরি হয়। এই পরিবেশে একটি সাধারণ পরিবার থেকে আসা ছাত্রও অনেকের ভীতির কারণ হয়ে ওঠে। আর এদেরকে পরিচালনাকারী ছাত্রলীগ নেতারা এতটাই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে যে, ভাইস চ্যান্সেলর থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা পর্যন্ত সবাই তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে। এর ফলাফল হিসেবে নির্মাণকাজের ঠিকাদারি, কেনাকাটায় এরা হস্তক্ষেপ করতে থাকে এবং মনে করে এটা তাদের অধিকার। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের কমিশন নিয়ে টেলিফোন আলাপের কথা ফাঁস হয়েছিল। এই ঘটনা শাসক দলকে এতটাই বিব্রত করেছিল যে, তারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদচ্যুত করেছিলেন। কিন্তু চাঁদাবাজির প্রবণতা বন্ধ করতে পারেননি। ফলে পরবর্তীকালেও নানা ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিল।
বাস্তবে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশে এমন কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ, যেখানে ছাত্রলীগ ক্ষমতার দাপট দেখায় না, বিরোধী মতকে দমন করে না এবং বিচিত্র সব অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হয় না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয় সম্পৃক্ত থাকে অথবা সহায়তাকারী হিসেবে থাকে। কিন্তু দায় চাপে শুধু ছাত্র সংগঠনের ওপর। যেমন জাহাঙ্গীরনগরের কমিশন বিষয়ক কেলেঙ্কারিতে যেমন তৎকালীন উপাচার্যের নাম ছিল, তেমনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীগোষ্ঠীর হাতে নিহত ছাত্রলীগের আরেকজন নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর হত্যাকাণ্ডে একজন প্রক্টরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। এছাড়াও গণরুমে নির্যাতন, গেস্টরুম সংস্কৃতি, র্যাগিংসহ নানা ঘটনায় এবং ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অকালে প্রাণ হারানোর ঘটনাও আছে। সমালোচনা হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে সন্ত্রাসীরা কোনও দলের তো নয়ই— তাদের দলেরও নয় কিন্তু ছাত্রলীগের ক্ষমতার আধিপত্য ধরে রাখার লড়াইয়ে মৃত্যুর মিছিল থামেনি।
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সকলেই গৌরবোজ্জ্বল অতীতের কথা উল্লেখ করেন। এই অতীত ইতিহাস হলো অধিকার প্রতিষ্ঠা—ভাষা, শিক্ষা, স্বাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের ইতিহাস, শাসকদের শিক্ষা সংকোচনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস। দেখা গেছে, শাসকদলের অনুসারীরা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে সবসময় আর ছাত্রদেরকে লড়তে হয়েছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের গুণ্ডামি আর পুলিশের নিপীড়নের বিরুদ্ধে। যেমন আইয়ুব খানের আমলে এনএসএফ এবং খোকা পাচ পাত্তুর-এর গুণ্ডামি, স্বাধীনতার পর ডাকসুর ব্যালট ছিনতাই, মুহসীন হলের সাত ছাত্র হত্যা, সামরিক শাসকদের ক্ষমতায় থেকে ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দখল করার চেষ্টা করা— সব কিছুকেই মোকাবিলা করেছে গণতন্ত্রকামি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো আর এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চেতনা আর অধিকারবোধ অর্জিত হয়েছে ছাত্র সমাজের মধ্যে।
কিন্তু আনুগত্য আর অধিকারবোধ পরস্পর বিপরীত। তাই যারা আনুগত্য চায় তারা ছাত্র আন্দোলনের এই চরিত্রকে কলুষিত করার চেষ্টা করে নানা অনৈতিক সুবিধার জাল বিছিয়ে। ফলে লড়াই সংগ্রামে অর্জিত ছাত্ররাজনীতির সংগ্রামী ধারাকে শাসকশ্রেণির দলসমূহের দ্বারা কলুষিত হয়ে এসেছে বারবার। এদের সন্ত্রাস, দখলদারি মনোভাব, গায়ের জোরে ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখা এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে নির্যাতন, হাত পায়ের রগ কাটা ও নিহত হওয়ার ঘটনা দেখে ছাত্ররাজনীতি ও সন্ত্রাসকে একাকার করে ফেলেছে সাধারণ ছাত্রদের অনেকে। এ কারণেই ছাত্ররাজনীতির প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করে অনেকেই বলছেন— ছাত্ররাজনীতি চাই না। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, তাদের মূল ঘৃণা সন্ত্রাস চাঁদাবাজির প্রতি আর আকুতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ পাওয়ার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ বলতে কি তারা চিন্তার স্বাধীনতা, বিতর্ক করার পরিবেশ, যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশকে মনে করেন না? অবশ্যই তা মনে করেন কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কাছে তা পাওয়া যাবে বলে ভরসা করেন না।
ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে যখন ছাত্রলীগ কথা বলছে তাকে সন্দেহের চোখে দেখছে সাধারণ ছাত্ররা। এতোদিন নীরব থেকে কেন তারা ঘটা করে ক্যাম্পাসে গেল তার কারণ হিসেবে সামনেই বুয়েটে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে সে কথা বলছে অনেকে। অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই বুয়েটের এ সকল উন্নয়ন প্রকল্পে নিজেদের ভাগ-বাটোয়ারা নিশ্চিত করতেই ছাত্রলীগের বর্তমান এই তৎপরতা বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতির ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যহার এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবি, হাইকোর্টের রায় এবং উন্নয়ন প্রকল্পের খবর একই সূত্রে গাঁথা কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এখন সবাই বলছেন, ছাত্ররাজনীতির গুণগত মান ধ্বসে গিয়েছে, দলীয় লেজুরবৃত্তি থেকে ছাত্র রাজনীতিকে মুক্ত করতে হবে ইত্যাদি। যারা এসব বলছেন, তারা নিশ্চয়ই ছাত্রদেরকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা মনে করেন না। সমাজে বাস করে সমাজ দ্বারা প্রভাবিত হবে না এতো হতে পারে না। হয় সে সমাজের প্রচলিত চিন্তাকে গ্রহণ করবে নতুবা নতুন চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সমাজ পাল্টানোর সংগ্রাম করবে— এর বাইরে আর কোনও অবস্থান তো থাকতে পারে না। ফলে ছাত্রসংঠনের রাজনীতি কেমন হবে তা নির্ধারিত হয় কোন মতাদর্শের ভিত্তিতে সে সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে তা দ্বারা।
প্রতিটি রাজনৈতিক দল কোনও না কোনও শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে। আওয়ামী লীগ যে রাজনীতি করছে, তা হলো পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করা। এটা করতে গিয়ে আর ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে যে নির্বাচন তারা করছে তার প্রভাব কি তাদের ছাত্রসংগঠনের ওপর পড়ে না? পড়ে। সে কারণেই ক্যাম্পাসগুলিতে ভিন্ন মত ও দলের ওপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রশ্ন ও প্রতিবাদহীন পরিবেশ বজায় রাখাই ছাত্রলীগের রাজনীতি।
শিক্ষানীতি, শিক্ষা কারিকুলামসহ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের দাবি নিয়ে আন্দোলন তাদের কাজ নয় বরং কোনও আন্দোলনকে দমন করার উদ্দেশ্যেই তাদের সকল শক্তি নিয়োগ করা হয়। আর এর বিপরীতে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ, শিক্ষা সংকোচনসহ ছাত্র-শ্রমিক-কৃষকসহ আপামর মানুষের সংকট নিরসনের দাবিতে পরিচালিত রাজনীতি অর্থাৎ শোষণ-বৈষম্যহীন বাংলাদেশ তথা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি কি কেউ করবে না? কেউ কি বলতে পারবে না, যেভাবে দেশ চলছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়? বিশ্ববিদ্যালয় পড়া মুখস্ত করানোর প্রতিষ্ঠান নয়— বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো ছাত্র সমাজকে প্রশ্ন করতে শেখানো।
কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার মানুষকে প্রশ্ন করতে দেয় না। বাক স্বাধীনতা হরণ করে। একেই ভয় পায় সব যুগের শাসকশ্রেণি। ফলে তারা কখনও আইন দ্বারা বাক স্বাধীনতা হরণ করে কখনও সকল প্রকার সন্ত্রাসী অপশক্তি দিয়ে কণ্ঠরোধ করে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই আজ সময়ের দাবি। শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া শিক্ষার পরিবেশ থাকে না। তাই সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস শুধু শিক্ষার জন্য নয়— সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন মানুষ তৈরির জন্য প্রয়োজন।
বর্তমান রাজনীতির চিত্র দেখে ভীতসন্ত্রস্ত কিংবা রাজনীতিবিমুখতা নয়, আদর্শভিত্তিক পাল্টা রাজনৈতিক শক্তি নির্মাণের মধ্য দিয়েই এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। ফলে বুয়েটসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ শিক্ষার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সর্বস্তরের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকসহ সর্বস্তরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শুধু ক্যারিয়ার সর্বস্ব, সমাজের প্রতি দায়হীন, দক্ষ হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া, দেশের মানুষের প্রতি উদাসীন অথবা দুর্বৃত্ত কোনওভাবেই দেখতে চাই না।
যে কোনও আন্দোলনের একটা ফলাফল আছে। সেটা সাময়িক বা সুদুরপ্রসারী যাই হোক না কেন। সাময়িক উত্তেজনায় মানুষ যা চায় কিংবা চোখের সামনে দৃষ্টান্ত দেখে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সে ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে দেখার ইচ্ছা বা সময় থাকে না। বিরক্তি বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যখন ঘটে তখন যাচাই বাছাই করার মানসিকতা বা ধৈর্য থাকে না। ফলে তার আকুতি থাকে কিন্তু প্রকাশটা সবসময় যথাযথ হয় না।
বুয়েটের ছাত্র আন্দোলনের আকুতি হলো সন্ত্রাস থেকে মুক্তি— একে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি মনে করলে তা হবে ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত।
লেখক: সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাসদ।
ইমেইল: rratan.spb@gmail.com