Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি বাতিল, যে ব্যাখ্যা দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা

পাঠ্যপুস্তক ভবন।
পাঠ্যপুস্তক ভবন।
[publishpress_authors_box]

আপত্তি এসেছিল ইসলামী নেতাদের কাছ থেকে, তার মধ্যেই ১২ দিনের মাথায় পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জনে গঠিত কমিটি বাতিল করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত এই সরকার গত ১৫ সেপ্টেম্বর স্কুলের পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জনে ১০ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করেছিল।

শনিবার সেই কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানালেও তার কোনও কারণ দেখায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

তবে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দাবি করেছেন, কোনও চাপের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

কমিটি গঠন, প্রতিক্রিয়া

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়ন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), যা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকে।

এই পাঠ্যপুস্তক সংশোধন এবং পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খ ম কবিরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

গঠিত কমিটিতে কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান, সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী, সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এ এফ এম সারোয়ার জাহান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. ইয়ানুর রহমান (সদস্য সচিব)।

বিশেষজ্ঞ হিসাবে কমিটিতে রাখা হয়েছিল- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমকে।

আওয়ামী লীগ আমলে প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রমের কড়া সমালোচক ছিলেন কামরুল হাসান মামুন এবং রাখাল রাহা । তারা দুজনসহ সামিনা লুৎফা ও মোহাম্মদ আজম আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের কড়া সমালোচক ছিলেন, আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়।

এই কমিটি গঠনের পর আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী জামে মসজিদের খতিব আহমাদুল্লাহ সরব হন।

তিনি এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “ধর্মপ্রাণ মানুষের সন্তানরা কী পড়বে, তা ঠিক করবে চিহ্নিত ধর্মবিদ্বেষীরা! এটা শহীদদের রক্তের সঙ্গে সুস্পষ্ট বেইমানি।”

ওই পোস্টের মন্তব্যে ‘ধর্মবিদ্বেষী’ হিসাবে কামরুল হাসান ও সামিনা লুৎফাকে চিহ্নিত করেন কেউ কেউ। ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে তাদের অবস্থানকে ইঙ্গিত করেই তাদের ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ বলা হয়।

কমিটি নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন আহমদুল্লাহ।

এরপর বাংলাদেশ ইমাম সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান এক বিবৃতিতে কমিটিতে কামরুল হাসান মামুন ও সামিনা লুৎফাকে রাখা নিয়ে আপত্তি তোলেন। তিনি দুজন ইসলামী বিশেষজ্ঞকে কমিটিতে রাখার দাবি জানান।

তাদের দাবির কারণেই কী কমিটি বাতিল হলো- শনিবার জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব ইয়ানুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কেন বাতিল হয়েছে, তা আমার জানা নেই।”

তিনি যেমন এই কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন, আবার তার শনিবার স্বাক্ষরেই কমিটি বাতিলের অফিস আদেশটি আসে।

সেই আদেশে বলা হয়, ‘নির্দেশক্রমে’ বাতিল করা হলো।

বিষয়টি নিয়ে সামিনা লুৎফা ও কামরুল হাসান মামুনের সঙ্গে সকাল সন্ধ্যা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

‘ভুল বোঝাবুঝি’

পরে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, কমিটি নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে।

ইসলামী নেতাদের চাপের মুখে কমিটি বাতিল হয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এই কারণে বাতিল করা হয়নি।”

তাহলে কেন এই সিদ্ধান্ত, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপাখানায় দিতে হাতে সময় খুব কম। তাই এখন বড় পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তাই এখন প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বই ছাপাতে দেওয়া হচ্ছে।

প্রণীত বইগুলো নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় সমালোচনার সূত্র ধরে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “সেখানে দেখছি, মাত্র চার-পাঁচজন মিলে সবগুলো বই দেখছে। কম সময়ের মধ্যে অনেক ভুল ছিল। ইতিহাসের অতিরঞ্জন ছিল। সেটায় খুব ছোটো চেঞ্জ হয়েছে।

“এছাড়া অংক ও বিজ্ঞান, এগুলো বিষয়ে সংশোধন করার সময় পাওয়া গেছে।”

তাহলে কী কী পরিবর্তন আসছে- সে বিষয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “বই যখন ছাপা হবে, তখনই বোঝা যাবে যে কতটুকু সংশোধন হলো।”

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

এই কমিটি সংস্কারের জন্য ছিল না জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের সংস্কারের জন্য সময় প্রয়োজন, সেটা পরবর্তীকালে সময় নিয়ে করার সুযোগ রয়েছে।

“সম্ভবত কমিটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এখানে সংস্কারের বিষয় না।”

বড় সংস্কারের জন্য প্রত্যেক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার ইসলামী চিন্তাবিদদেরও সহযোগিতা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের প্রস্তাবও এসেছে জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “এগুলো কোনোটাই এখন নেওয়া সম্ভব না। পরবর্তীতে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কাজ করা হবে।”

আওয়ামী লীগও করেছিল কমিটি

আওয়ামী লীগ আমলে প্রণীত এই পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারদের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলে ইসলামী দলগুলোর মধ্য থেকে আপত্তি উঠেছিল।

বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠনের পর শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পাঠ্যবই সংশোধনে কমিটি গঠন করেছিলেন।

সেই কমিটিতে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রশীদকে আহ্বায়ক করা হয়েছিল। সদস্য ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর কফিল উদ্দীন সরকার, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ, এনসিটিবির সদস্য মোহাম্মদ মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল হালিমকে।

সেই কমিটিতে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিত্ব না থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কমিটির সদস্যরা ধর্মীয় বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাগুলো বুঝতে চাননি বলে প্রকাশ পেয়েছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত