Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

থাই এয়ারে মাঝ আকাশে যাত্রীর মৃত্যু, চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ

thai air
[publishpress_authors_box]

থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে ফিরছিলেন সাজ্জাদ হোসেন। থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে দেশে ফেরার সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মধ্য আকাশেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

জাহাজের ক্যাপ্টেন দ্রুত বিমানটি ঢাকার বদলে কাছাকাছি হিসেবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে নামান। কিন্তু তার আগেই তিনি মারা যান।

সাজ্জাদ হোসেনের অবস্থা নিশ্চিত করতে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে। কিন্তু সেই সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু নিশ্চিত হতে না পেরে আবার সব যাত্রীকে নিয়ে রাত ৩ টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় বিমানটি।

জরুরি অবতরণের তিন ঘণ্টা পর আবার মৃত যাত্রীকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বলেছেন, “দেখুন, বিমানবন্দরে ইসিজি করার ব্যবস্থা থাকে না। আমরা শুধু ডাক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখি। ফলে ইসিজি না করে একজন যাত্রীর মৃত্যু সনদ দেওয়ার সুযোগ নেই। সেজন্য থাই এয়ারওয়েজের পরামর্শে তাকে আবার ঢাকায় পাঠানো হয়।”

তাহলে তিন ঘণ্টা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে থামার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের কর্তব্যরত ডাক্তার দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেন তার মৃত্যু হয়েছে। জরুরি অবতরণের পরই তা নিশ্চিত করা গেছে। আর যেই সময়ে ফ্লাইট নেমেছে সেই সময়ে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। জরুরি অবতরণের জন্যই আমরা খোলা রাখি।”

একই কথা বলেন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমার রাতের ডিউটি ছিল। উড়োজাহাজে উঠে যাত্রীর সবকিছু দেখে প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত হই। উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন এবং বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে তা জানায়। কিন্তু একজন রোগির হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ইসিজিসহ বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। সেই ব্যবস্থা আমাদের নেই। ফলে অনেক সময় পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও আমরা ডায়াগনোসিসের অভাবে সনদ দিয়ে বলতে পারি না।”

চট্টগ্রামের ফ্লাইটে কেউ অসুস্থ হলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে মৃত্যু সনদ দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “ফ্লাইটের যাত্রীরা সবাই ঢাকার। যিনি মারা গেছেন তিনি ও ফ্লাইটটি যাচ্ছিল ঢাকায়। তাদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠাইনি।”

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, থাই এয়ারওয়েজ ঢাকা-ব্যাংকক রুটে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। একটি দিনে, আরেকটি রাতে। রাতের ফ্লাইটটি ব্যাংকক থেকে এসে ঢাকায় পৌঁছে রাত একটায়। পরে সেই ফ্লাইট যাত্রী নিয়ে রাত তিনটায় ঢাকা থেকে ব্যাংকক রওনা দেয়। এই ফ্লাইটটি ব্যাংকক থেকে রওনা দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সাজ্জাদ নামের যাত্রীর হার্ট অ্যাটাক হয়। বিষয়টি জানার পর মেডিকেল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেন উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন। সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে অবহিত করেন এবং জরুরি অবতরণের অনুমতি চান। তখন রাত ১২ টা ৪০ মিনিট। এরপর বিমানটি রাত একটায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের জরুরি অবতরণ করে। অবশ্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রাত ১টায় থাই এয়ারের বিমানটি চট্টগ্রামে নিরাপদে অবতরণ করে। বিষয়টি দ্রুত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে অবহিত করা হয়। রাত ১ টা ৩১ মিনিটে বিমানটির গেইট ওপেন হয়। বিমানবন্দরের কর্তব্যরত ডাক্তার রাত ১ টা ৪০ মিনিটে বিমানের ভিতরে প্রবেশ করেন। ডাক্তার রোগীকে দেখে প্রাথমিকভাবে মৃত বলে ধারণা করে এবং বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারকে অবহিত করেন যে ইসিজি ছাড়া নিশ্চিত মৃত্যু ঘোষণা করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তিনি রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করার পরামর্শ দেন।”

তিনি বলেন, “পরবর্তীতে থাই এয়ারওয়েজের ঢাকা এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান রোগীকে অনবোর্ডেই ঢাকায় নিয়ে গিয়ে তারা পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। এরপর  বিমানটি হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া সেই যাত্রীসহ সবাইকে নিয়েই রাত ৩টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।”

এমন পরিস্থিতিতে থাই এয়ারের একাধিক যাত্রী বলছেন, “তাহলে তিন ঘণ্টা চট্টগ্রামে অবতরণ করে লাভটা কী হলো! মৃত্যু নিশ্চিতের যদি ব্যবস্থাই না থাকে তাহলে চট্টগ্রামে না নেমে ঢাকায় নামলেইতো সবদিক থেকে ভালো হতো।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত