মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে বুধবার রাতে মৃত্যু হয় টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান রতন নবল টাটার। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্ম বিভূষণে ভূষিত এই শিল্পপতির মরদেহ এখন আছে দক্ষিণ মুম্বাইয়ে ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারফরমিং আর্টস (এনসিপিএ) ভবনে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত সেখানেই থাকবে।
এরপর রতন টাটার মরদেহ নেওয়া হবে মুম্বাইয়ের ওয়ারলি এলাকায়। সেখানে তার শেষকৃত্য হবে। উপস্থিত থাকবেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
মৃত্যুর আগে রতন টাটার শরীর ভালো ছিল না। ভর্তি হয়েছিলেন ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। গুঞ্জন উঠেছিল, তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোও জানিয়েছিল, গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রতন টাটা ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে।
অবশ্য মৃত্যুর দুদিন আগে সোমবার এসব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছিলেন ৮৬ বছর বয়সী ভারতের এই আলোচিত ব্যবসায়ী। হয়তো ভেবেছিলেন, শেষ যাত্রার সময় এখনও আসেনি।
তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেদিন সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে জানিয়েছিলেন, “আমি জনগণ ও সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করছি, ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে।”
তিনি বলেন, “আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সাম্প্রতিক গুজব সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, এই দাবিগুলো ভিত্তিহীন।
“আমাকে নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। বার্ধক্যজনিত ও শারীরিক অন্যান্য কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। আমি ভালো আছি।”
এরপর সোশাল মিডিয়ায় নিজের ফলোয়ারদের উদ্দেশে রতন টাটা লেখেন, “আমার জন্য আপনারা চিন্তা করেছেন, এর জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।”
এদিকে, রতন টাটার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে ভারতের ব্যবসায়িক অঙ্গন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোশাল মিডিয়ায় বলেন, “শ্রী রতন টাটাজী ছিলেন দূরদর্শী ব্যবসায়িক নেতা, সহাভূতিশীল ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ। তিনি ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়িক পরিবারে স্থিতিশীল নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।
“বোর্ডরুমের বাইরেও রতন টাটার অবদান লক্ষণীয়। তার নম্রতা, উদারতা ও সমাজকে উন্নত করার প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতির কারণে তিনি বহু মানুষের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন।”
রতন টাটার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “রতন টাটা ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি। ব্যবসা এবং পরোপকার উভয় ক্ষেত্রেই তিনি দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন।”
ভারতের সামনের সারির ব্যবসায়ী গোষ্ঠী মাহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে বলেন, “রতন টাটার অনুপস্থিতি আমি মেনে নিতে পারছি না। আমরা এখন কেবল তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যেতে পারি।”
ভারতের আরেক শিল্পপতি গৌতম আদানি বলেন, “রতন টাটার মতো কিংবদন্তি কখনোই জনমানস থেকে হারিয়ে যাবে না।”
অন্যদিকে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আরপিজি এন্টারপ্রাইজেসের চেয়ারম্যান হর্ষ গোয়েঙ্কা টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যানকে ‘সততা ও নৈতিকতার বাতিঘর’ হিসেবে অভিহিত করেন।