Beta
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

গ্রিন কোজি কটেজে মৃত্যুর কারণ বিষাক্ত ধোঁয়া

লাশ
চিকিৎসকরা বলছেন, বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার কারণে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের। মৃতদেহগুলো দেখেছেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, বেশিরভাগেরই শরীরে তেমন পোড়ার চিহ্ন নেই।

চিকিৎসকরা বলছেন, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে শ্বাসনালী পুড়ে এবং কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ে। সহজ বাংলায় বললে, বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করাই তাদের মৃত্যুর কারণ। আর সে কারণেই বেশিরভাগের শরীর পুড়ে না গেলেও তারা মারা গেছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনও বলছেন কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ের কথা।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বদ্ধ ঘর থেকে বের হতে না পারলে ওই ধোঁয়া শ্বাসনালিতে চলে যায়। বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় প্রত্যেকেরই তা হয়েছে। যাদের বেশি হয়েছে, তারা মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তারা কেউই শঙ্কামুক্ত নন।”

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মো. মামুন খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের এখানে যে ১০ জন এসেছেন প্রথমে, তারা সবাই স্পট ডেড। অর্থাৎ তাদের আনাই হয়েছে মৃত। আর এদের সবার মৃত্যু হয়েছে শ্বাসনালী পুড়ে গিয়ে। তাদের কারও এক্সটার্নাল বা বাহ্যিকভাবে তেমন কিছু হয়নি।”

এই ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদও জানালেন একই কথা।

তিনি বলেন, “আমাদের কাছে যেসব রোগীরা এসেছেন তাদের বেশিরভাগই শ্বাসনালী পুড়ে গিয়েছে। অনেকেরই দেখবেন বাহ্যিকভাবে পোড়া নেই, কিন্তু ভেতরটা পুড়ে গিয়েছে, ভেতরে পুরোটা বার্ন হয়ে গিয়েছে।”

আগুন
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন, ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে ঘন ধোঁয়া। সেই আগ্রাসী আগুন নেভাতে ছোড়া হচ্ছে পানি। ছবি : হারুন অর রশীদ

ঢাকার রেস্তোরাঁগুলো বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম দাহ্য পদার্থ দিয়ে সাজানো থাকে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, “এসব ইন্টেরিয়র সামগ্রীর কারণে কার্বন মনোক্সাইড এবং ডায়াক্সাইড পয়জনিং হয়। এটা এমন বিষ যা নার্ভ এবং নার্ভ সিস্টেমকে প্যারালাইজড করে ফেলে। তখন মানুষ আর শ্বাস নিতে পারে না।”

কার্বন মনোক্সাইডকে ভীষণ বিপজ্জনক মন্তব্য করে ডা. তানভীর বলেন, “সাধারণত সাত থেকে আট মিনিটের মধ্যে এতে মৃত্যু হয়। এই গ্যাস শরীরে প্রবেশ করে কিডনির কাজ বন্ধ করে দেয়।”

মস্তিষ্কে যদি আট মিনিটের মধ্যে বাতাস না পৌঁছায় তাহলে মানুষ মারা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেটা কোভিডের সময় দেখা গিয়েছে। এজন্য অক্সিজেনের এত হাহাকার ছিল। আর অক্সিজেন না নিতে পারার কারণে পুরে শরীরে কার্বন মনোক্সাইড ঢুকে যায় এবং তখন মৃত্যু হয়।

“তারা শ্বাস নিতে পারছিলেন না, হাত পা চলছি না। কারণ ফুসফুসে এই বিষ ঢুকে গিয়েছিল। এই কারণে স্পটেই মারা যান সবাই।”

এ ধরনের আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের হাত-পা শক্ত হয়ে যায় বলেও জানান তিনি।

চিকিৎসাধীন রোগীদের কেউ কেউ বাহ্যিকভাবে ভালো থাকলেও এখনই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানান ডা. তানভীর। যেকোনো সময় তাদের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কার কথা জানান এই চিকিৎসক।

ডা. তানভীর আহমেদ জানান, চিকিৎসাধীন ১০ জনের মধ্যে একজন রয়েছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। বাকিরা পোস্ট অপারেটিভে। তাদের সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাই অন্ততপক্ষে ২৪-৪৮ ঘণ্টা না গেলে বোঝা যাবে না। কারণ সবার শরীরে বিষ, এটা পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাবে না।”

আগুনে পুড়ে গেছে ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ নামের ভবনটি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

এ ধরনের পোড়ার ক্ষেত্রে বয়সে তরুণ হলে তাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে যদি কারও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে তাহলে শরীর থেকে বিষাক্ত গ্যাস ক্লিয়ার হতে সময় লাগে। অনেক সময় পুরোপুরি পরিস্কার হয়ও না।

“তাই যারা ভর্তি রয়েছেন তাদের নিয়েও শঙ্কা থেকে যায়। কারণ সেকেন্ডারি ইফেক্টের জন্য যদি তাদের শরীরের অন্য প্রত্যঙ্গগুলো কাজ না করতে শুরু করে তাহলে ধীরে ধীরে অন্য সমস্যা তৈরি হবে।”

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে লাগা এই আগুন তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর নেভায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নেভাতে কাজ করে ১৩টি ইউনিট।

পাঁচ বছর আগে বনানীর এফ আর টাওয়ারে এমনই এক আগুনে মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জনের। বেইলি রোডের সাত তলা গ্রিন কোজি কটেজ শপিং মলে আগুনে মারা গেলেন তার প্রায় দ্বিগুণ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত