সাফের দ্বিতীয় ম্যাচে বুধবার ভারতের বিপক্ষে সন্ধ্যা ৫-৪৫ মিনিটে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু এই ম্যাচের আগেই দলের মধ্যে ভয়াবহ অন্তঃকোন্দলের অভিযোগ বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারের। সিনিয়র ফুটবলারদের বিরুদ্ধে দলীয় ঐক্যে ভাঙনের অভিযোগ করেছেন কোচ। আসলেই দলের প্রকৃত অবস্থা কি? কেমন আছে টিম হোটেলে বাংলাদেশের মেয়েরা। সে সব নিয়ে কথা বলেছেন সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের উইঙ্গার সানজিদা আক্তার
সকাল সন্ধ্যা : আপনাদের মতো সিনিয়ররা তো বাটলারের দলে সেভাবে সুযোগ পাচ্ছেন না। অথচ এক সময় আপনিও নিয়মিত একাদশে থাকতেন। এখন কেন আপনাকে নিচ্ছেন না কোচ?
সানজিদা আক্তার: এখন কিছু বলতে চাই না। এই বিষয়ে সব কিছু পরে কথা বলব।
সকাল সন্ধ্যা : মাঝমাঠে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে সফল জুটি মনিকা চাকমা ও মারিয়া মান্দা। কিন্তু মনিকার সঙ্গে ইদানিং স্বপ্না রানীকে খেলাচ্ছেন পিটার বাটলার। যদিও তাদের জুটির রসায়নটা জমছে না। এটা নিয়ে কি বলবেন?
সানজিদা : এসব নিয়ে ওরা কোচের সঙ্গে কথাও বলছে। ওরা নাকি বলেছে, মারিয়াকে একাদশে রাখতে। ওদের কথা নাকি শোনেন নি কোচ। অবশ্য মাসুরা আপু, মারিয়া, আমরা এসব নিয়ে কোচকে কিছুই বলিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে কেমন খেলেছে দল সেটা তো সবাই দেখেছে। এক কথায় জঘন্য। এই সমস্যাগুলো অনেক আগে থেকেই চলছে দলের মধ্যে।
সকাল সন্ধ্যা : এসব নিয়ে টিম মিটিংয়ে আপনারা কিছু বলেন না?
সানজিদা : দেখুন পিটারের অধীনে যে ফ্রেন্ডলি ম্যাচগুলো হয়েছে সেখানে আমাদের নিয়ে যা হলো সেসব নিয়ে তো একটু ধারণা পাওয়া উচিত। চাইনিজ তাইপের ম্যাচের একাদশ দেখেই মেজাজ খারাপ হয়েছিল। আমরা সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলার। কিন্তু এখন দলে সুযোগ পাইনা।
সকাল সন্ধ্যা : এই যে বেঞ্চে বসে থাকেন দিনের পর দিন। এতে খারাপ লাগে না?
সানজিদা : সেটা আপনি যদি একজন ফুটবলার হতেন তাহলে বুঝতে পারতেন। যদিও আপনার জায়গা থেকে কিছুটা হয়তো বুঝতে পারছেন। দিনের পর দিন বেঞ্চে বসে থাকতে কি কষ্ট, সেটা আমরা যারা বসে থাকি তারাই বুঝি।
সকাল সন্ধ্যা : কোচ কি আপনাদের এই সাইকোলোজি বুঝতে পারেন?
সাগরিকা : উনি না খেলাতে খেলাতে আমাদের কোন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা উনিও বুঝতে পারছেন না। মিটিংয়ে আমাদের নামও নেন না কোচ। আসলে আমাদের একদম দেখতে পারেন না উনি। আমরা যারা সিনিয়র আছি তাদের মোটেও পছন্দ করেন না।
সকাল সন্ধ্যা : দলের অন্দরমহলের খোঁজখবর মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ কি রাখেন না?
সানজিদা : এখন এসব বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। যেহেতু সামনে আরও ম্যাচ আছে। তাছড়া ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা আছে এখনও। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এই ম্যাচের পর সব কিছু জানানো হবে আপনাদের।
সকাল সন্ধ্যা : আপনারা নাকি টিকটক করেন। পারফরম্যান্স ভালো না আপনাদের। কোচের এমন বক্তব্যে কি বলবেন?
সানজিদা : আমরা নিজে থেকে যে ইচ্ছা করে যে বেঞ্চে বসে আছি বিষয়টা মোটেও এমন না। এটাও বুঝতে হবে। আসলে বিষয়টা মোটেও তেমন না। আমরা অনুশীলনে সবটুকু উজাড় দিয়ে পরিশ্রম করি। কেউ বলতে পারবে না আমরা ফাঁকি দিই এতটুকু। কিন্তু আমাদের সমস্যা কোথায়, কেন বাদ দেন- কোচ কেন বাদ দেন আমরা কিছু জানি না। আমাদের সঙ্গে উনি আলাদা করে বসেনও নি। যদিও সিনিয়র হিসেবে এটা আমাদের পাওনা।
সকাল সন্ধ্যা : পিটার বাটলার বলেছেন, তিনি নতুনদের সুযোগ দিতে চান। আপনার কি মত?
সানজিদা : নতুনরা কি এমন করেছেন দলের জন্য, এটা তো সবাই দেখছে। এমনিতেই এসব দেখে মেজাজ টেজাজ গরম আছে। ভারতের সঙ্গে ম্যাচে কি হয় দেখি আমরা। কিছু একটা হোক আগে। ওই দিন তো পাকিস্তানের সঙ্গে এমন ফল হওয়ার কথা ছিল না। ভাগ্য ভালো অতিরিক্ত সময়ে শামসু (শামসুন্নাহার জুনিয়র) গোলটা দিয়েছিল।
সকাল সন্ধ্যা : সিনিয়রদের বাদ দিলে কি আদৌ দলের পারফরম্যান্সে উন্নতি হবে?
সানজিদা: দেখুন ভারতে সিনিয়র ফুটবলার যারা খেলা ছেড়ে দিয়েছিল তাদের ডেকে এনে খেলাচ্ছে। যাতে ভারত আবারও সাফ জেতে। বালা দেবীর বয়স কত (৩৪ বছর)। আমি যখন ন্যাশনাল টিমে খেলা শুরু করি, বয়সভিত্তিক দলগুলোতে প্রথম খেলতে শুরু করি ওই সময় মারিয়া কৃষ্ণা দি (কৃষ্ণা রানী সরকার)- আমরা কিন্তু সিনিয়র জুনিয়র দুই দলেরই একাদশে খেলতাম। মাঠেও ভালো পারফরম্যান্স করেছি। ওই সময়ের আগে থেকে ভারত, নেপালের এসব সিনিয়র ফুটবলার খেলছেন। তারা এখনও মাঠে দিব্যি খেলে চলেছেন। আর আমরা কয়দিন হলো খেলছি? আমাদের কি এমন বয়স হয়েছে? আমাদের পারফরম্যান্স আছে তারপরও আমাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমরা কোচের গুডবুকে নেই।
সকাল সন্ধ্যা : তাহলে কি আপনারা দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন?
সানজিদা : আমাদের গড় বয়স ২৩-২৪ হবে। এখনই আমাদের খেলাচ্ছেন না কোচ।২৬ -২৭ বছর বয়স হলে উনি কি করবেন সেটাই ভাবছি।
সকাল সন্ধ্যা: দলের সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু, মাহমুদা আক্তার অনন্যা- উনারা তো গোলাম রব্বানীর সহকারী ছিলেন দীর্ঘদিন। তাদের কি মত?
সানজিদা : এগুলো সব জানতে পারবেন। আপনাদের সব জানানো হবে। এখন টুর্নামেন্টের মাঝপথে কিছুই বলতে চাই না। সময় এলে সব জানানো হবে।
সকাল সন্ধ্যা: বাটলার আপনাদের সেভাবে মূল্যায়ন করছেন না যেটা পেতেন গোলাম রব্বানী ছোটনের কাছে। তাহলে কি তাকে কোচ হিসেবে পেতে চান?
সানজিদা : ছোটন স্যারকে প্রত্যেক ফুটবলারই চায়। এটা শুধু আমাকে না, যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই উত্তরটা পেয়ে যাবেন। আমার বিশ্বাস সবাই একই কথা বলবে।