মাত্র ছয়টি ম্যাচে বাংলাদেশের ডাগ আউটে দাঁড়িয়েছেন পিটার বাটলার। কিন্তু এর আগে কখনও সেভাবে হাসিমুখে সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়নি ৫৮ বছর বয়সী বৃটিশ কোচকে। অথচ ভারতকে হারানোর পর যখন দশরথ রঙ্গশালার সম্মেলন কক্ষে ঢুকলেন, ফর্সা কোচের মুখে ছিল স্নিগ্ধ হাসির আভা।
একটা জয় কি দারুণভাবেই না ভুলিয়ে দিতে পারে অতীতের সব দুঃখ! সব ক্ষত। সেই কারণেই কিনা দুদিন আগে মনিকা চাকমার করা অভিযোগের দেওয়াল ভুলে গেলেন কোচ। দুর্দান্ত একটা জয়ের পরও সব কৃতিত্ব দিলেন সাবিনা, মারিয়াদের। হয়ে গেলেন বিনয়ের অবতার।
যখন দলের মধ্যে গৃহদাহের সুর, তখন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে ফুটবলারদের জন্য কি বার্তা ছিল আপনার? প্রশ্নের জবাবে বাটলার বলেন, “ কখনও কখনও কিছু বলা জরুরী হয় না। কখনও কখনও চুপ থাকতে হয়। কিছুই বলো না। এবং শান্ত থাকো। আজ রাতে জয়ের সব কৃতিত্ব দেব এই মেয়েদের। আমি তো শুধু একজন সাধারণ কোচ যে একটা দলের দায়িত্বে আছি। এবং মেয়েদের শুধু ট্রেনিং সেশনে অনুশীলন করাই। আজ রাতে ওদের বলেছি, মাঠে যাও এবং নিজেদের মেলে ধরো। আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলো। আসলে যেটা ওদের বলতে চেয়েছি সেটা হলো, দলের মধ্যে ঐক্য দরকার। ওই ঐক্যটা ধরেই মাঠে খেলে আসো।”
কাঠমান্ডুর দি সোলটি হোটেলে আবাস জাতীয় নারী দলের। এই হোটেলে সকালে নাস্তার টেবিলে মারিয়া, সানজিদাদের চিত্র জগতের তারকাদের সঙ্গে তুলনা করেন। যতভাবে ফুটবলারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফেরানো যায় শুধু সেই চেষ্টায় করে গেছেন কোচ।
সংবাদ সম্মেলনে এসে সেই গল্পটাও করলেন বাটলার, “আপনারা জানেন, আজ সকালে নাস্তার সময় ডাইনিংয়ের ওখানে গিয়ে মেয়েদের বলেছিলাম, গুড মর্নিং সিনিয়র’স, গুড মর্নিং জুনিয়র’স। গুড মর্নিং ফিল্ম স্টার্স। সিনিয়র্স এবং জুনিয়র্স, এগুলো আমার কাছে কিছু নয়। কেননা, আমি জানি, তাদের কাছ থেকে আমি কী বের করে আনতে পারি। আমি দলে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আবহ আনার চেষ্টা করেছি। এ কারণেই মেয়েরা আজ সত্যি ভালো খেলেছে।”
পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার মাসুরা ও মিডফিল্ডার মারিয়াকে বেঞ্চে রেখেছিলেন। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে একাদশে নামাতেই আক্রমণের পসরা সাজায় ফুটবলাররা। ম্যাচ শেষে এই দুই ফুটবলারের প্রশংসা ঝরল কোচের কন্ঠে, “মাসুরা ও মারিয়া অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। স্বপ্না ভালো করেছে। আমি মনে করি, মারিয়াও ভালো খেলেছে। আমরা মারিয়াকে যেভাবে জানি, আজ সে সেভাবে খেলেছে এবং মাসুরাও। দীর্ঘদিন পর মাসুরা এমন খেলেছে, যেভাবে আমরা তাকে চিনতাম।”
মাত্রই টুর্নামেন্টে একটা জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এখনই তাই উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে চান না বাটলার, “ এই ম্যাচ জেতায় অবশ্যই আমি একটা খুশি দলের কোচ; তবে আমি বাস্তববাদী। আমি উচ্ছ্বাসে ভেসেও যাই না, আবার ভেঙেও পড়ি না। বিষয়গুলো পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে। দেখুন…আমি এই মেয়েদের নিয়ে আসলেই ভীষণ, ভীষণ গর্বিত। তবে আমরা সবেমাত্র সেমি-ফাইনালে উঠলাম। আমি জানি, আরেকটি ম্যাচ আসবে, সেটা পার করা কঠিন কাজ হবে।”