বিশ্বজুড়ে রোজাদার মুসলিমরা সাধারণত খেজুর ও পানি খেয়ে ইফতার শুরু করেন। এরপর দেশ ও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ করেন তারা।
একেক দেশে ইফতারের আয়োজন ভিন্ন ভিন্ন হলেও, এবার খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মুদ্রাস্ফীতির আঁচ লেগেছে সবখানে। বিশ্বের ১৯০ কোটি মুসলিমকে এবার ইফতারে প্রিয় অনেক পদ বাদ দিতে হচ্ছে এই কারণে।
বিগত এক বছরে ইফতারের বিভিন্ন উপকরণের মূল্য কতটা বেড়েছে তা জানতে আল জাজিরা বিশ্বের ১৪টি দেশের বিভিন্ন সুপারমার্কেট চেইন থেকে কয়েক ডজন উপকরণের মূল্যের তুলনা করেছে।
এই তুলনা থেকে বোঝা যায়, মুসলিমরা এখন কীভাবে ইফতার করছেন। কোন কোন দেশের কী অবস্থা সেই তুলনামূলক চিত্রও পাওয়া যায়।
আর্জেন্টিনা
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে স্থানীয় পর্যায়ে অন্যতম খাবার ‘বিফ আসদো’। এটি গ্রিল মাংসের ছোট ছোট টুকরোকে চিমিচুরি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। চিমিচুরি হলো ধনেপাতা দিয়ে তৈরি এক ধরনের ঝাল ডিপিং সস।
এর সঙ্গে আছে ‘এমপানাদাস’ নামের জনপ্রিয় পেস্ট্রি। এটি তৈরি হয় গরুর মাংস ও শাকসবজি দিয়ে। আর ডেজার্ট হিসেবে আছে ‘ডালসে দে লেচে’ প্যানকেক। এর স্বাদ মিষ্টি এবং ক্রিমি ক্যারামেল সস দিয়ে তৈরি। পরিবেশনের সময় এর সঙ্গে তাজা ফল দেওয়া হয়।
পানীয় হিসেবে আর্জেন্টিনার মানুষ প্রায়শই ইয়ারবা মেট গাছ থেকে তৈরি ঐতিহ্যবাহী ভেষজ চা উপভোগ করেন।
আর্জেন্টিনা বিশ্বের সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির দেশগুলোর মধ্যে একটি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যমূল্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশটিতে ২০২৩ সালে যে ইফতারের দাম ছিল ১ হাজার ৭৮২ পেসো (২ ডলার), ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ২০০ পেসো (প্রায় ৯ ডলার)। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ইফতারের খাবারের দাম বেড়েছে চারগুণেরও বেশি।
অস্ট্রেলিয়া
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ অস্ট্রেলিয়ায় ইফতারের অভিজ্ঞতা দেশটির বহুসংস্কৃতির প্রতিফলন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা স্বাদের অপূর্ব মিশেল এখানে লক্ষ্য করা যায়।
এই খাবারের কেন্দ্রে রয়েছে ‘হালাল স্ন্যাক প্যাক’। এটি রাস্তার জনপ্রিয় খাবার থেকে শুরু হয়ে এখন স্থায়ী খাবারে পরিণত হয়েছে। গরম চিপসের উপরে পাতলা করে কাটা ভেড়ার মাংস এবং রসুন ও বারবিকিউ সস দিয়ে তৈরি খাবারটি অস্ট্রেলিয়ায় বেশ জনপ্রিয়।
এছাড়া শাকসবজি দিয়ে তৈরি মজাদার মসুর ডালের স্যুপও বেশ জনপ্রিয় দেশটিতে। আর মিষ্টি খাবার হিসেবে আছে ‘ল্যামিংটন’। এটি চকলেটের প্রলেপ দেওয়া জ্যাম ভর্তি ও শুকনো নারকেল দিয়ে তৈরি করা এক ধরণের স্পঞ্জ কেক।
গ্রীষ্মকালে রোজার সময় রোজাদারদের পানিশূণ্যতা দূর করতে পরিবেশন করা হয় কর্ডিয়াল নামের এক ধরনের পানীয়। এটি বিভিন্ন ফলের রস দিয়ে তৈরি।
অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো অস্ট্রেলিয়াও মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০২৩ সালে ইফতারের খাবারের খরচ ছিল প্রায় ১১ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। কিন্তু ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
মাংস ও ডিম সহ প্রধান উপকরণগুলোর দাম বৃদ্ধির কারণে ইফতারের খাবারের দাম বেড়েছে।
বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা
ইউরোপের সর্বোচ্চ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা। দেশটির খাবারের বৈচিত্র্যে আছে এর বহুসংস্কৃতির দারুণ এক প্রতিফলন। দেশটির বাসিন্দাদের ইফতারের টেবিলে একটি মজাদার খাবার হলো ‘পিটা ক্রোম্পিরুশা’। ময়দা, আলু, পেঁয়াজ ও বিভিন্ন মসলার মিশ্রণে তৈরি হয় খাবারটি।
খাবারের প্রথম ধাপে থাকে হালাকা জাতীয় উপকরণ। এর মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের সালাদ, ডিম ও শাকসবজি। এরপর পরিবেশন করা হয় ‘তোপা’। এটি গলানো পনির ও মাখন দিয়ে তৈরি একটি খাবার। খাবারের একেবারে শেষে পরিবেশন করা হয় মিষ্টি খাবার। এর মধ্যে রয়েছে ‘হুরমাশিকা’। এটি চিনির রসে ভেজানো এক ধরনের মিষ্টি।
ইফতারের সমাপ্তি ঘটে ‘সোক অড ড্রেনজিনা’ দিয়ে। এটি কর্নেলিয়ান চেরি গাছের ফল দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় পানীয়।
এবারের রমজানে এই খাবারের একক পরিবেশনে প্রায় ২ দশমিক ৯ বাম (দেড় ডলারের বেশি) ব্যয় হবে। ২০২৩ সালে একই খাবারের দাম ছিল ২ দশমিক ৭ বাম (দেড় ডলারের কম)। অর্থাৎ খাবারের দাম ৭ শতাংশ বেড়েছে।
আলু, চিনি ও মাখনের দাম বাড়ায় ২০২৪ সালে বসনিয়ান ইফতারের খাবারের দাম বেড়েছে।
মিশর
শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য এবং রন্ধনপ্রণালীর ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ দেশ মিশর। দেশটির ইফতার টেবিলে অন্তর্ভুক্ত থাকে ভাত, গরুর মাংসের কিমা এবং মশলা দিয়ে ভরা আঙ্গুরের পাতা দিয়ে তৈরি স্থানীয় খাবার।
পুষ্টিকর স্যুপের জন্য, রসুন ও ধনেপাতা দিয়ে রান্না করা ‘কাটা মোলোখিয়া’ (পাট পাতা) সবসময়ই মিশরীয়দের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। স্যুপের পর মিষ্টি ও পনিরের ডেজার্ট কুনাফা পরিবেশন করা হয়। এটি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা জুড়ে খাওয়া একটি জনপ্রিয় ডেজার্ট।
পিপাসা দূর করতে কমর আল-দ্বীন নামক ঐতিহ্যবাহী খুবানি পানীয় মিশরের সবার পছন্দ।
মিশর বর্তমানে রেকর্ড মাত্রার মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে গত রমজানের তুলনায় এবার অনেক উপাদানের দাম, বিশেষ করে ঘি ও চিনির দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
এই রমজানে উপরে উল্লিখিত খাবারের একক পরিবেশনে প্রায় ৬৮ মিশরীয় পাউন্ড (১ দশমিক ৪ ডলার) খরচ হবে। ২০২৩ সালে, একই খাবারের খরচ ছিল ৩৯ মিশরীয় পাউন্ড (শূন্য দশমিক ৮ ডলার)। অর্থাৎ খাবারের দাম বেড়েছে ৭৪ শতাংশ।
ভারত
ভারতে ইফতারের জন্য বিভিন্ন ধরণের খাবার পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হলো ঘুগনি। এটি মটরশুঁটি বা ছোলার তৈরি। এতে পেঁয়াজ, টমেটো এবং বিভিন্ন মশলা দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে পেঁয়াজ ভাজা ও কাচামরিচ দিয়ে তৈরি পাকোড়া ও সুজির হালুয়া।
খাবারের স্বাদ পাল্টানোর জন্য দেওয়া হয় গোলাপজল, লেবু ও পুদিনা পাতার রস মিশ্রিত এক ধরনের পানীয়।
এবারের রমজানে এসব খাবারের একক পরিবেশন তৈরি করতে প্রায় ১৪৯ রুপি (১ দশমিক ৮ ডলার) খরচ হবে। গত বছর একই খাবারের খরচ ছিল ১৬২ রুপি (১ দশমিক ৯ ডলার)। অর্থাৎ খাবারের দাম এক বছরে ৯ শতাংশ কমেছে।
পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার কারণেই খাবারের দাম কিছুটা কমেছে দেশটিতে। অন্য খাবারের দাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক রয়েছে।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়ানো ও দাম কমানোর লক্ষ্যে গত ডিসেম্বরে দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে দাম অর্ধেকেরও বেশি কমে যায়। ৩১ মার্চে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ২৩ মার্চ নিষেধাজ্ঞাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানো হয়।
ইন্দোনেশিয়া
ছয় হাজার বাসযোগ্য দ্বীপ নিয়ে গঠিত বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ইফতারের ঐতিহ্য অনুষঙ্গ হলো ‘বুবুর’। এটি ভাতের পোরিজ যা টুকরো করা মুরগি, বাদাম, শাকসবজি এবং বিভিন্ন মশলা দিয়ে তৈরি।
এর সঙ্গে আছে গাজর, বাঁধাকপি ও মটরশুটির মতো বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি ‘বকওয়ান’, নারকেলের দুধ, চিনি, পান ও কলা দিয়ে তৈরি মিষ্টি ডেজার্ট।
খাবারের একেবারে শেষে থাকে খেজুরের রস, তরমুজ ও নারকেল দিয়ে তৈরি পানীয় ‘এস তিমুন সুরি’।
এ বছর এই খাবারের একক পরিবেশন তৈরি করতে প্রায় ৬৬ হাজার রুপিয়া (৪ দশমিক ২ ডলার) খরচ হবে। গত বছর খরচ ছিল ৬২ হাজার রুপিয়া (৩ দশমিক ৯ ডলার)। খাবারের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া একটি মুসলিমপ্রধান দেশ। সেখানে ‘রেন্ডাং’ একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি নারকেলের দুধ, গরুর মাংস ও মশলা দিয়ে তৈরি একটি ঝাল ও সুস্বাদু খাবার।
মালয়েশিয়ার মানুষ ‘সায়ুর লোদেহ’ খেতে পছন্দ করে। এটি নারকেলের দুধ, বেগুন, মটরশুঁটি ও বাদাম দিয়ে তৈরি একটি সুগন্ধি সবজি স্টু। এছাড়া অনেক মালয়েশিয়ান ‘সিরাপ বান্দুং’ পান করেন। এটি গোলাপজল মিশ্রিত দুধ।
সব খাবারের শেষে দেওয়া হয় ‘সেরি মুকা’ নামে জনপ্রিয় একটি ডেজার্ট। এটি ভাত ও পান দিয়ে তৈরি এক জাতীয় কাস্টার্ড।
২০২৪ সালে এই খাবারের একক পরিবেশন তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সব উপাদানের পেছনে খরচ হবে প্রায় ৬ দশমিক ৯ রিঙ্গিট (দেড় ডলার)। ২০২৩ সালে একই খাবারের জন্য খরচ হতো প্রায় ৬ দশমিক ৪ রিঙ্গিট (১ দশমিক ৩ ডলার)। ফলে এক বছরে খরচ বেড়েছে ৭ শতাংশ।
গত বছরের তুলনায় মালয়েশিয়ায় ইফতারের খাবারের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে তাজা খাবার, যেমন ডিম, নারকেল ও দুধ।
নাইজেরিয়া
নাইজেরিয়ার খাবার তার বৈচিত্র্যময় উপাদান ও মশলার জন্য পরিচিত। প্রধান খাবার হিসেবে পশ্চিম আফ্রিকার অনেকের মতো নাইজেরিয়ানরা প্রায়শই ‘জোলোফ রাইস’ খায়। এটি মুরগির মাংস ও লাল সুগন্ধি ভাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
এর বাইরে কালো রংয়ের মটরশুঁটি দিয়ে তৈরি পুডিং ‘মোই মোই’ প্রিয় অনেকের। ইফতারের টেবিলে নাইজেরিয়ানদের পছন্দ হাইবিস্কাস ফুল দিয়ে তৈরি পানীয় ‘জোবো’।
মুদ্রাস্ফিতীর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে দেশটিকে। হাঁস-মুরগির মাংস ও তাজা খাবারের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। ২০২৩ সালে যে খাবারের দাম ছিল ৩ হাজার ৮৬০ নায়রা (২ দশমিক ৬ ডলার), এ বছর সেটি বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ নায়রা (৪ দশমিক ৪ ডলার)। এক বছরে খরচ বেড়েছে ৬৮ শতাংশ।
পাকিস্তান
পাকিস্তানের ইফতার আমেজের অন্যতম অনুষঙ্গ দই বড়া। মসুর ডাল, দই, মিষ্টি ও ঝাল চাট দিয়ে তৈরি হয় খাবারটি। সঙ্গে থাকে ফলের সালাদ, চাট মশলা ও জিলাপি। আর তৃষ্ণা মেটাতে গোলাপ জল দিয়ে তৈরি পানীয়তো আছেই।
এই ইফতারের খাবারের একক পরিবেশনে মোট খরচ হবে ১৭২ রুপি (শূন্য দশমিক ৬ ডলার)। ২০২৩ সালে একই খাবারের খরচ ছিল ১৪১ রুপি (শূন্য দশমিক ৫ ডলার)। ফলে ব্যয় বেড়েছে ১৮ শতাংশ।
পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার বেশ উচ্চ। ২০২৩ সালের মে মাসে খাদ্যমূল্যস্ফীতি ৪৮ দশমিক ৬৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা একটি রেকর্ড। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে শাকসবজি, চিনি ও ঘি এর।
ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিন ও লীভান্ত অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো মাকলুবা। আরবি ভাষা থেকে অনুবাদ করলে এর অর্থ দাড়ায় ‘উল্টা পাল্টা’। এটি সুগন্ধযুক্ত একধরনের ভাতের খাবার। এটি তৈরিতে কুচি করা বেগুন, মাংস ও অন্য সবজি ব্যবহার করা হয়। পাত্রটি উল্টে দিয়ে খাবারটি একটি প্লেটে পরিবেশন করা হয়।
মাকবুলার সঙ্গে পরিবেশন করা হয় জলপাইয়ের তেলে ভেজানো টমেটো ও শসার সালাদ। ফিলিস্তিনে এর নাম ‘দাগ্গা’।
রমজানে একটি চমৎকার ডেজার্ট হল কাতায়েফ। এটি একটি অর্ধ-বৃত্তাকার ভাজা প্যানকেক যা সাধারণত আখরোট বা পনির দিয়ে ভরা থাকে এবং সিরাপে চুবিয়ে পরিবেশন করা হয়। তামির হিন্দি একটি জনপ্রিয় পানীয় যা তেঁতুল ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়।
এই রমজানে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইফতারের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে ৩১ দশমিক ৫ শেকেল (প্রায় ৯ ডলার) খরচ হচ্ছে। গত বছর একই খাবারের জন্য খরচ ছিল ২৮ দশমিক ৫ শেকেল (প্রায় ৮ ডলার)। অর্থাৎ খরচ বেড়েছে ১১ শতাংশ।
এই বছর রমজানে পশ্চিম তীরে জলপাই তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। গত বছর প্রতি লিটার জলপাই তেলের দাম ছিল ৩০ শেকেল (প্রায় ৮ দশমিক ২ ডলার)। কিন্তু এ বছর তা বেড়ে ৫৫ শেকেলে (প্রায় ১৫ ডলার) পৌঁছেছে।
গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের জন্য ইফতার কেনা চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। সেখানে একটি ডিমের দাম এখন ৬ শেকেল (১ দশমিক ৬৪ ডলার)।
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকা তার বৈচিত্র্যময় জাতিগত ও সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারও এই বৈচিত্র্যের প্রতিফলন ঘটায়। একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরির অর্থ হলো সবাইকে একত্রিত করা। প্রধান খাবার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকানরা ‘প্যাপ এন ভ্লেইস’ নামক খাবার পছন্দ করেন। এটি ‘শিশা ন্যামা’ নামেও পরিচিত। এটি মূলত বারবিকিউ করা মাংসের সঙ্গে পরিবেশন করা ভুট্টার খিচুড়ি।
এই ঐতিহ্যবাহী খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় ‘চাকালাকা’ নামক একটি মশলাদার সবজির তরকারি। এটি পেঁয়াজ, টমেটো, গাজর, মটরশুঁটি ও মশলা দিয়ে তৈরি হয়। ডেজার্ট হিসেবে পরিবেশিত হয় ‘কোয়েক্সিস্টার’। এটি চিনির সিরাপে চোবানো ভাজা ময়দার তৈরি মিষ্টি খাবার।
স্টোনি হল দক্ষিণ আফ্রিকার একটি জনপ্রিয় কার্বনেটেড আদা বিয়ার। এটি আদা, চিনি, পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়ে তৈরি করা হয়। স্টোনি একটি ঠান্ডা পানীয় যা গরমের দিনে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
অনেক দেশের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। উপরে উল্লিখিত ইফতারের খাবারের একটি পরিবেশন তৈরি করতে প্রায় ৭৭ র্যান্ড (৪ ডলার) খরচ হয়। গত বছর একই খাবারের খরচ ছিল ৬৮ র্যান্ড (৩ দশমিক ৬ ডলার)। এটি প্রায় ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি।
তুরস্ক
তুরস্কে ইফতরিতে একটি জনপ্রিয় পদ ‘ডলমা’। এটি ভাত, মাংস ও সুগন্ধি মশলা দিয়ে তৈরি খাবার। এর সঙ্গে পরিবেশন করা হয় ‘জাজিক’ নামক ঠান্ডা ও মশলাদার দই এবং শসা দিয়ে তৈরি ডিপ। মিষ্টি হিসেবে ‘মুহাল্লেবি’ নামের দুধের পুডিং থাকে। এটি দারচিনি ও কাজু বাদাম দিয়ে তৈরি।
হজমের সহায়ক হিসেবে ‘সালগাম’ নামক ফার্মেন্টেড শালগমের পানীয় দেওয়া হয়।
তুরস্কেও মুদ্রাস্ফীতির মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। এবারের ইফতারের জন্য ৬০ দশমিক ৫ লিরা (১ দশমিক ৯ ডলার) খরচ হচ্ছে। গত বছর একই খাবারের জন্য খরচ ছিল ৫০ দশমিক ৬ লিরা (১ দশমিক ৬ ডলার)। অর্থাৎ খরচ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ লাখ মুসলিমের বাস। অন্য অ-মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মতো সেখানে ইফতারের খাবারের পছন্দ নির্ভর করে পরিবারের জাতিগত পরিচয়ের ওপর। তবে ইফতার হিসেবে সবজি ও এক বাটি ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় এক টুকরো সামুদ্রিক মাছ।
এই বছরের ইফতারের জন্য উপরে বর্ণিত খাবারের জন্য ২ দশমিক ২ পাউন্ড খরচ হবে। গত বছরের ২ দশমিক ১ পাউন্ডের তুলনায় এটি প্রায় ৪ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০-৪০ লাখ মুসলিম বাস করেন। আমেরিকার অনেক পরিবার ইফতারে ঝলসানো মুরগি পছন্দ করেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের খাবার কুনাফা এবং দুধ দিয়েও ইফতার করেন অনেকে।
এই রমজান মাসে ইফতারের খাবারের খরচ আনুমানিক ৭ দশমিক ১ ডলার। গত বছর একই খাবারের খরচ ছিল ৬ দশমিক ৭ ডলার, যা এ বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম।
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা