দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে আনতে আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারি। এর অংশ হিসেবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৫ দিন দেশের সব প্রান্ত থেকে অর্থনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এই শুমারিতে প্রথমবারের মতো ই-কমার্স ও বিদেশি কর্মীর হিসাব তুলে আনা হবে বলে সোমবার ৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক এস এম শাকিল আক্তার।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, আয়-ব্যয়, কর্মী সংখ্যা, তাদের সুযোগ সুবিধা, আয়-ব্যয়, কর প্রদানসহ ২৭টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এই শুমারিতে। এর আগে ২০১৩ সালে এই শুমারি হয়।
দেশের অর্থনৈতিক এই শুমারি প্রথম হয় ১৯৮৬ সালে। দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শুমারি হয় ২০০৩ সালে।
রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক এস এম শাকিল আক্তার।
তিনি বলেন, “এবার প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে একযোগে ৯৫ হাজার গণনাকারীর মাধ্যমে দেশের দুই হাজার ৬০০ অঞ্চল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা করা হবে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প পরিচালক এস এম শাকিল আক্তার বলেন, “এবারের শুমারির নতুনত্ব হচ্ছে প্রথমবারের মতো দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া ডিজিটাল বিজনেস বা ই-কমার্স হিসেবে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর তথ্য উঠে আসবে।
“৭০টি প্রশ্নের মাধমে দেশে ব্যবসার ব্যয়, আয়, মুনাফার তথ্য এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আইসিটির কতটা সংযুক্তি রয়েছে সেটাও দেখা হবে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
শুমারি পরিচালনার বিষয় উপস্থাপন করতে গিয়ে সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, গত জুলাই মাসে প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে তিন দিন ধরে দেশের সব প্রান্ত থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও খানা পর্যায়ের ব্যবসাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ের ওই তালিকায় এক কোটি ২২ লাখ ইউনিটে প্রতিষ্ঠান ও খানা পর্যায়ে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৬ লাখ প্রতিষ্ঠান এবং ৪৬ লাখ খানা পর্যায়ের। এবার আমরা সেই এক কোটি ২২ লাখ ইউনিট থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করব।”
সংবাদ সম্মেলনে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, “অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করার অংশ হিসেবে এবার জিওগ্রাফিক্স ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ও জিওকোড সমন্বয় করে ডিজিটাল ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে।”
তিনি জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহে ইতোমধ্যেই প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার ট্যাব (ল্যাপটপ) প্রস্তুত করে মাঠকর্মীদের দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট (এমডিএম) সফটওয়্যার ব্যবহার করে কেন্দ্রীয়ভাবে ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সচিব মাহবুব হোসেন জানান, মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের (বিডিসিসিএল) সমৃদ্ধ ডেটা সেন্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায় থেকে বিডিসিসিএল হয়ে বিবিএস সার্ভারে আসার আগ পর্যন্ত সংগৃহীত সব তথ্য-উপাত্ত গোপন থাকবে।
ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করে জানুয়ারির মধ্যে জরিপের প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব।
অর্থনৈতিক শুমারি হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সুনির্ধারিত অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে সব শ্রেণির অর্থনৈতিক ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ গণনা পদ্ধতি।
গত ১১ বছরে অর্থনীতির কাঠামোগত কী পরিবর্তন ঘটেছে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা এই শুমারির প্রধান উদ্দেশ্য।
এই শুমারির মাধ্যমে শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত সব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মৌলিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত জনবলের হিসাব নিরূপণের পাশাপাশি তাদের ধরন ধারণা এবং শিল্প বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান মৌলিক সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এর মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত মূলধন ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস এবং সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়। শিল্পায়নের জন্য দেশের নীতি নির্ধারক, পরিকল্পনাবিদ, গবেষকসহ অংশীজনদের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তও উঠে আসে এই শুমারিতে।