৫ আগস্টের আগে-পরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে গুণগত পরিবর্তন হয়েছে মেনে নিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। গত মাসে হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় ব্রহ্মাচারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর উত্তেজনা বেড়েছে।
রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘৪০তম সার্ক চার্টার দিবস’ উপলক্ষে সার্ক জার্নালিস্ট ফোরাম (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) আয়োজিত ‘দ্য সার্ক-পিপল অব সাউথ এশিয়া ক্রেভ ফর’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, “আগেও বলেছি যে কোনও সমস্যার সমাধান করতে হলে আগে স্বীকার করতে হবে সমস্যা আছে। আমাদের এও স্বীকার করতে হবে যে, ৫ আগস্টের আগে ও পরে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের একটি গুণগত পরিবর্তন হয়েছে।
“তবে এটা মেনে নিয়ে আমাদের চেষ্টা করতে হবে সে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। সেজন্যই আমি প্রস্তাব করেছিলাম, আমাদের যে ফরেন অ্যাফেয়ার্স কনসালটেশন রয়েছে সেটি শুরু করব।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ভারত যদি আমাদের সবাইকে একসঙ্গে নিতে পারতো, তাহলে ভারতের সুবিধা হতো, সুবিধা হতো আমাদেরও। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেটা হচ্ছে না।”
ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে ভারতের অবস্থান খুবই ভালো মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিন্তু গত দুই-তিন মাসে যে ব্যবসায়িক মন্দা যাচ্ছে, সেটা কি শুধু বাংলাদেশকে এফেক্ট করছে? এই অবস্থা শুধু বাংলাদেশকে এফেক্ট করছে না, ভারতকেও এফেক্ট করছে। পরিমাণটা অত কিন্তু বেশি না, তবে এফেক্ট পড়ছে। কলকাতার অর্থনীতি, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “তবে আশা করি, অচল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারব। এই অচল অবস্থা কাটনোর অন্যতম উপায় যোগাযোগ স্থাপন।”
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি আগামীকাল সোমবার ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এটি হতে যাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকায় ভারতীয় কোনও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার প্রথম সফর।
সফরে পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক পরামর্শ সভায় তিনি অংশ নেবেন বলে সফরের প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আসছেন। আমাদের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করবেন। এটা স্ট্যান্ডিং মেকানিজম, এটা অস্বাভাবিক কিছু না।
“প্রতিবছর আমাদের একজন যান ওপাশে। পরের বছর ওপাশ থেকে একজন আসেন। এটাকে কনসালটেশন বলা হয়, এটা দীর্ঘদিন যাবৎ চলছে। আমি আশা করবো, তারা একটা ফলপ্রসূ আলোচনা করবে।”
অনুষ্ঠানে সার্ককে (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস পজিটিভ। সরকার অস্থায়ী। কিন্তু দেশ ও স্বার্থ স্থায়ী। আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব তাকে এগিয়ে নেওয়া। সার্কভুক্ত দেশগুলোর সচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক শুরু হোক, যা গত ১০ বছরে হয়নি।”
পরস্পরকে সহযোগিতা করলে এই অঞ্চলের দারিদ্র্য দূর হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আঞ্চলিক বাণিজ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে আঞ্চলিক বাণিজ্য খুবই জরুরি। আর এটা কেবল বাংলাদেশই নয়, সবার জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু যদি একে অন্যের সঙ্গে বিরোধপূর্ণভাবে চলতে থাকি, তা আমাদের সুফল বয়ে আনবে না। আমাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নেই। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক হচ্ছে না এখনও। আমরা চাই না বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হোক।”
সার্ক জার্নালিস্ট ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রহমান বলেন, “এখন একটি আঞ্চলিক জোটের খুবই প্রয়োজন। এখন সার্কের কোনও কার্যকরিতা নেই। কিন্তু এই অঞ্চলের শান্তির জন্য সার্ককে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।”