বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে সচরাচর পুরুষরাই থাকেন গল্পের কেন্দ্রে। তবে সম্প্রতি সেই ধারা থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসেছে এই ইন্ডাস্ট্রি। দেখা মিলছে নারীপ্রধান গল্পের সিনেমা। নতুন পুরোনো, সব নারী তারকাই সামিল হয়েছেন এই নতুনের মিছিলে। তাদের কেন্দ্র করে পুরুষ প্রধান গল্প থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন নির্মাতারা। চিরচেনা বলিউডকে এবার যেন ভিন্ন বয়ান দিচ্ছেন নারী প্রধান এইসব চলচ্চিত্র। ২০২৪ সালে তেমন কিছুরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েক দশক ধরে হিন্দি সিনেমার গল্প আবর্তিত হয়েছিল মূলত প্রেম, বিরহ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি বিষয়গুলোকে ঘিরে। যেখানে নারীরা মূলত প্রেমিকা, মা, বোন, বান্ধবী ইত্যাদি। যেখানে তারা গল্পের কেন্দ্রে নয়, বরং পার্শ্ব চরিত্র। ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে। তবে বলিউডের মূল ধারার সিনেমাগুলোয় নারীরা সব সময় গৌণ ভূমিকায় অভিনয় করে এসেছে।
তবে এই প্রবণতার মাঝেও বিদ্যাবালান ছিলেন ব্যতিক্রম। তার অভিনীত কাহানি, ইশকিয়া, দ্য ডার্টি পিকচার, পা এবং নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা দর্শকদের প্রচলিত পুরুষ প্রধান গল্পের বাইরে নিয়ে আসে। সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে রিলিজ পেয়েছে ‘দ্য ক্রু’। কারিনা, টাবু এবং কৃতি শ্যানন অভিনীত এই ছবির গল্প শতভাগ নারীকেন্দ্রিক। বলিউডের এই পরিবর্তনকে এর দর্শকরা দারুণ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। পুরোনো ফর্মুলার পাশাপাশি নতুন ফর্মুলার নারীপ্রধান গল্পের সিনেমা দেখতেও তারা বেশ আগ্রহী।
দর্শকরা নারীদের আর পার্শ্বচরিত্রে দেখতে চাইছেনা। তারা দেখতে চাইছে এমন গল্প, যেখানে নারীর শক্তি, বঞ্চনা এবং জটিলতা সবই আছে। কারিনা কাপুরের সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দ্য বাকিংহাম মারডার্স’ এ তাকে দেখা গেছে প্রধান চরিত্রে। বক্স অফিসেও ভালো সাড়া ফেলেছে সিনেমাটি।
ট্রেড এক্সপার্ট তরন আদর্শের মতে, “নারী প্রধান চলচ্চিত্র সবসময়ই ছিল। আমি শুধু ‘মাদার ইন্ডিয়া’, কিংবা ‘বন্দিনী’ নিয়ে বলছিনা। এমনকি আনারকলিকে বাদ দিয়ে তো ‘মুঘল-ই-আজম’ এর কথা ভাবাই যায়না। ৭০ কিংবা ৮০-র দশকের অ্যাকশনধর্মী বলিউড ফিল্মগুলোতে সব কিছুকে ছাপিয়ে কেবল অ্যাকশনই প্রাধান্য পেত। আর সেসব গল্পে নারীদের ভূমিকা ছিল নাচ-গানে অংশ নেওয়া এবং গ্ল্যামার প্রদর্শন।
তিনি আরও বলেন, “এমন নয় যে আমরা নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র একেবারেই বানাইনি, কিন্তু এই বছর নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র বলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। নির্মাতাদের উচিৎ আমাদের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রীদের কেন্দ্র করে কাজ করা। পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিতে নারী নির্মাতা এবং স্ক্রিপ্ট রাইটারদের আরও বেশি সুযোগ দিতে হবে। নারীদের হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত হবে।”
তার এই আলাপের সূত্রধরে ‘লাপাতা লেডিজ’ এর কথা বলা যায়। যেখানে নির্মাতা নিতানশি গয়াল এবং প্রতিভার রত্নার মতো নতুন মুখদের একেবারে কেন্দ্রীয় চরিত্রে সুযোগ করে দিয়েছেন। এই সিনেমাটির নির্মাতা কিরণ রাও।
বলিউডে মুক্তি পেতে যাচ্ছে জিগরা, ইমার্জেন্সি, লাভ সিতারা এবং বিনি অ্যান্ড ফ্যামিলি। নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এ-কথা বলাই যায় যে, অ্যাকশন, থ্রিলার কিংবা ড্রামা যাই হোক না কেন, হিন্দি সিনেমায় নারীরা আর পার্শ্বচরিত্রে নেই। তারাই গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিবর্তন কেবল আনন্দেরই নয়, এটি বরং বলিউডের একটি অগ্রসর এবং গতিশীল ভবিষ্যতকেই নির্দেশ করছে।