ধানমণ্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাহিব রেজা নামে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। সেখানে একজন আইনজীবীকেও রাখতে বলেছে আদালত।
মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশসহ রুল জারি করে।
আদেশে রাহিব রেজার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এসবের পাশাপাশি চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যু সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয় দেখভালের জন্য দেশে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং রাহিব রেজার মৃত্যুর ঘটনায় কেন ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানত চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ল্যাব এইড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে রাহিব রেজার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আনেন স্বজনরা।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. সাইফুজ্জামান।
আদেশের বিষয়ে আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, “ভুল অ্যানেস্থেসিয়ার কারণে রাহিব রেজার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এরপর তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই তাকে লাইফ সার্পোর্ট দেওয়া হয়। তিন দিন পর তার মৃত্যু ঘটে। সাধারণ একটা এন্ডোসকপি করাতে গিয়ে তার মৃত্যু ঘটেছে।
“সে কারণে তার পরিবার আদালতের রিট আবেদন করেছে। আদালত শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছে। রুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্ত এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের অধীনে যে হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে একটি নিরপেক্ষ স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”
রাহিব রেজা রাজধানীর স্টার্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রোডাক্ট ম্যানেজার ও আইটি কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রাহিবের পরিবারের দাবি, পেটে গ্যাসের সমস্যা নিয়ে ধানমণ্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের কাছে যান রাহিব রেজা। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ল্যাবএইডে এন্ডোস্কোপি করানোর পরামর্শ দেন ডা. স্বপ্নীল।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খালি পেটে ল্যাবএইড হাসপাতালে যান রাহিব। তবে তার এন্ডোস্কপি শুরু হয় রাত ১১টার দিকে। এর দেড় ঘণ্টা পরও রোগীকে বাইরে না আনা হলে সঙ্গে থাকা সহকর্মী জোর করে এন্ডোস্কোপি রুমে ঢুকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। এরপর অবস্থা জটিল হলে রাহিব রেজাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়।