বালির দেনপাসার আনদিকনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র মাদ দইকি সানজায়া। পড়ালেখার ফাঁকে সময় সুযোগ পেলেই কাবাডি খেলেন। সৌখিন এই কাবাডি খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অভিষেকও হয়ে গেল এবার। ঢাকায় চলমান বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির ইন্দোনেশিয়া দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেইডার সানজায়া।
শুধু সানজায়া নন, ইন্দোনেশিয়া দলের সব খেলোয়াড়ই শখের বশে কাবাডি খেলেন। এই দলে যেমন আছেন ছাত্র। তেমন রয়েছেন শিক্ষক ও ব্যবসায়ী।
ইন্দোনেশিয়া দলে ১১ জন খেলোয়াড়। এর মধ্যে ছাত্র আছেন ৪ জন-সানজায়া, মাদ পানদে দিতা বিজয়া, কোমাং ওয়াহুই ব্রহ্মাস্তা, নভেমবরো সিমামোরা। শিক্ষকতা করছেন পুতু ওয়াহুইয়ো জুনিয়ারথা, মো হানিফ দয়ি নুগরহো, দিকি মার্তিন পূর্বা শিবোরো ও আরভিন। নিজেদের বিভিন্ন রকমের ব্যবসা রয়েছে গেদে জায়া গুনা, মাদ সুয়াসতিকা, কাদেক দোদি ইন্দ্রাবানের।
এটা কি ইন্দোনেশিয়ার সেরা কাবাডি দল? প্রশ্নটা করতেই একগাল হেসে উত্তর দিলেন দলের সহকারী ম্যানেজার গুনারতো লোয়িতো, “আসলে জাতীয় দল এখন অন্য টুর্নামেন্টে খেলতে ব্যস্ত। এখানে যারা এসেছে এদের বেশিরভাগই শৌখিন খেলোয়াড়।”
লোয়িতোর কথার সত্যতা অবশ্য খেলার ফল দেখেই বুঝে নেওয়া যায়। মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির তৃতীয় ম্যাচে বুধবার বাংলাদেশ ৫৯-১৯ পয়েন্টে হারিয়েছে ইন্দোনেশিয়াকে।
টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচই হচ্ছে একপেশে। প্রতিপক্ষ বলতে গেলে অসহায় আত্মসমপর্ণ করছে।
প্রথম ম্যাচে যেমন দক্ষিণ কোরিয়াকে ৬৭-২২ পয়েন্টে হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে জয় তুলে নেয় ৭৩-২২ পয়েন্টের ব্যবধানে।
এমন একপেশে লড়াই হবে জেনেও বাংলাদেশে খেলতে এসেছেন লোয়িতো, “আসলে আমরা সারা বছর এই টুর্নামেন্টের জন্য অপেক্ষায় থাকি। আমাদের অসাধারণ আতিথেয়তা দেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন। এই বার দিয়ে তৃতীয়বার এলাম ঢাকায়।”
২০১৮ সালে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে কাবাডিতে যে দল খেলেছিল সেই দলের মাত্র একজন এবারের দলে আছেন। এমনটাই জানালেন তিনি।
বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে তাতে টানা চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী করে দিলেন লোয়িতো, “এখানে যে দলগুলো এসেছে বেশিরভাগই বাংলাদেশের তুলনায় দুর্বল। আমার মনে হয় এবারও চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশই হবে।”
প্রথমবার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে পেরে উচ্ছ্বসিত সানজায়া, “এখানে আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আমার জন্য এটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা। “
অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে ঢাকায় এসেছে ইন্দোনেশিয়া। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে ৫ খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অভিষেক হয়েছে। তথ্যগুলো জানালেন সানজায়া, “আমরা যখন আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি হাতে মাত্র মাস দুয়েকের মতো সময় ছিল। এখানে এসে অনেকে অভিষেক হয়েছে। এটা বেশ ভালো লাগছে আমাদের। তবে আসার আগে ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলে এসেছি অনেকে। “
টুর্নামেন্ট আয়োজনের চাকচিক্যে এতটুকু কমতি নেই কাবাডি ফেডারেশনের। রাজধানী জুড়ে বড় বড় বিলবোর্ড। রংবাহারি সব বিজ্ঞাপন।
মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামও সেজেছে নতুনভাবে। গ্যালারিতে দর্শকদের আনতেও ফেডারেশন চেষ্টা করছে। মিরপুরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা তুমুল উৎসাহে করতালি দিচ্ছে খেলা দেখে।
সবই ঠিক আছে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এমন দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করে বারবার চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে উদযাপনের মধ্যে খুব বেশি কি গর্ব আছে? যেখানে এশিয়াডে বাংলাদেশ পদক জেতে না প্রায় ১৮ বছর!
সর্বশেষ ২০০৬ দোহা এশিয়ান গেমসে কাবাডিতে বাংলাদেশ পুরষ কাবাডি দল ব্রোঞ্জ জেতে। এরপর থেকেই পুরুষ কাবাডিতে পদক খরা এশিয়াডে।
এরপর ২০১০ সালে ৭ দলের মধ্যে পঞ্চম হয় বাংলাদেশ। আর ২০১৪ সালে ৮ দলের মধ্যে সপ্তম হয়। ২০১৮ এশিয়ান গেমসে ১১ দলের মধ্যে পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশ দল। গত বছর চীনের হাংজুতে চীনা তাইপেকে হারাতে পারলেই ব্রোঞ্জ নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের। কিন্তু সেবারও ব্যর্থ।
ছাত্র, শিক্ষদের নিয়ে গড়া প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই নয়, সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হলেই হয়তো উন্নতি হবে বাংলাদেশের কাবাডির।