Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারই হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার : অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
[publishpress_authors_box]

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর একাংশ বাতিল করে দেওয়া হাই কোর্টের রায়ে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার পথ খুলেছে, তার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা ‘সাংঘর্ষিক হবে না’ বলে মনে করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

অন্তর্বর্তী সরকারের নাম বদলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার কথা উল্লেখ করে তার অধীনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “এই ব্যক্তিগুলোই (অন্তর্বর্তী সরকার) যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেমে চলে যাবে, উনারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হবেন। এটা সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকের কোনও জায়গা নেই।”

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার দুই বছর পর ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে, মঙ্গলবার তার কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।

এই রায় দেয় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ।

রায় নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ আজকের রায়ের মধ্যে বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ সরকার।”

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনও সাংঘর্ষিক নয় বলে মনে করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ফুল বেঞ্চ মতামত দিয়েছেন, এটি তাদের সাংবিধানিক মতামত।”

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের এই মতামত নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন।

অ্যাটর্নি বলেন, “রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কাছে জানতে চেয়েছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে আইনি কোনও বাধা আছে কিনা। সুপ্রিম কোর্ট গোটা প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বলছে, এটা বৈধ ও সাংবিধানিক সরকার হবে। এটার সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংঘর্ষিক কোনও প্রবিশন নেই।”

অন্তর্বর্তী সরকারই হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার  

এক প্রশ্নের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে বলে মত তুলে ধরেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এই সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রিনেমড বা নামকরণ হবে, যেমন আমি বলি- জেলা ও দায়রা জজের নাম শুনেছেন। একই ব্যক্তি যখন সিভিল মামলা করেন তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ।

“ওই একই ব্যক্তি যখন ক্রিমিনাল মামলা পরিচালনা করেন, তখন তাকে জেলা জজ বলা যায় না, তখন তিনি দায়রা জজ। এই ব্যক্তিগুলোই (অন্তর্বর্তী সরকার) যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেমে চলে যাবে, উনারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হবেন। এটা সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকের কোনও জায়গা নেই।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আপিল বিভাগে যে রিভিউ পেন্ডিং আছে তা, বাইপাস করেই এই রায়ের প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেন আছে, তত্ত্বাবধায়কের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে দুটি রেশিও; এক, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ না কি অবৈধ? এই পার্টে চারজন বলছেন অবৈধ, তিনজন বললেন বৈধ।

“দ্বিতীয় পার্টে সবাই বললেন, পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে। এই যে পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে, তার আগেই পঞ্চদশ সংশোধনী চলে এসেছে, তাহলে ধরে নেওয়া হবে, ওই জাজমেন্ট রেশিও এখনও অপারেটিভ আছে, কার্যকর আছে। তাহলে কমপক্ষে আগামী দুটি নির্বাচন তো আপিল বিভাগের এটেনশন লাগে না।”

তত্ত্বাবধায়কের ফিরতে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে 

রায় নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় রিটকারীর আইনজীবী ড. শরীফ ভূইয়া বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার ক্ষেত্রে ‘বড় প্রতিবন্ধকতা’ দূর হয়েছে।

তিনি বলেন, “তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এখনই ফিরে এসেছে, বলা যাবে না। কারণ, এই ব্যবস্থাকে দুইভাবে বাতিল করা হয়েছিল। প্রথমত আপিল বিভাগ, বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে একটি রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে।

“পরবর্তীতে সংসদে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে। আপিল বিভাগের ওই রায়ের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) রায়ে পরিবর্তিত হতে হবে। এ বিষয়ে একটি রিভিউ শুনানিতে আছে।”

এ রায়ের ফলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার বিধান বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসহ কয়েকটি বিধান পুনঃস্থাপন হয়েছে বলে জানান জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

তিনি বলেন, এর বাইরে সংবিধানে জাতির পিতা, ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণাসহ পঞ্চদশ সংশোধনীতে আরও যে সমস্ত বিষয় রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে সেখানে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলেছে হাই কোর্ট।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত