Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

জামায়াতকে যে আইনে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা, কী আছে সেই আইনে

ঢাকায় জামায়াতের এই সমাবেশ হয়েছিল ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর। ফাইল ছবি
ঢাকায় জামায়াতের এই সমাবেশ হয়েছিল ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

জামায়াতে ইসলামীকে কোন প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, তা আরেকটু খোলসা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে।

তার একদিন পর বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানালেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এই দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।

তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদে বোধহয় এরকম একটা সুযোগ রয়েছে। এটা এখনও প্রক্রিয়াধীন। যে কোনও সময়ই কোন সময় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।”

বিষয়টি স্পষ্ট হতে সাংবাদিকদের বারবার প্রশ্ন করছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তবে তিনি তার স্পষ্ট জবাব এড়িয়ে যান বারবার।

তিনি বলেন, “আমি তো বলেছি, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন, প্রক্রিয়া চলছে, প্রক্রিয়া শেষ হলেই জানতে পারবেন।”

একাত্তরে মুক্তিযদ্ধের বিরোধিতার সঙ্গে বাঙালি হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতাকারী দল হিসাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করার পর দল হিসাবে তাদের বিচারের দাবিও উঠেছিল গণজাগরণ আন্দোলন থেকে।

সেই বিচারের পথ তৈরি করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা সরকার বললেও এক দশকেও তা হয়নি।

এর মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে গত সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আসে।

তবে কোন প্রক্রিয়ায় সেই বিষয়ে মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নির্বাহী আদেশে হবে। একদিন বাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি দেখান।

২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ অনুচ্ছেদের শিরোনাম- ‘নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তালিকাভুক্তকরণ’। এতে বলা হয়েছে, “এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোন ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।”

বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনও অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোনও সত্তা বা কোনও ব্যক্তিকে কোনও কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করিবার উদ্দেশ্যে কিছু কাজকে আইনটিতে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে- কোন ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণের চেষ্টা, এই ধরনের ষড়যন্ত্র বা সহায়তা করা, রাষ্ট্রের কোনও সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করা ইত্যাদি।

কোনও সশস্ত্র সংঘাতময় দ্বন্দ্বের বৈরী পরিস্থিতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেনি, এমন কোনও বেসামরিক, কিংবা অন্য কোনও ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো বা জখম করা, কোনও জনগোষ্ঠীকে ভীতি প্রদর্শনও এই আইনে ‘সন্ত্রাসী কাজ’ হিসাবে অপরাধ গণ্য হয়।

তবে এই আইন ব্যবহার করে সরকার যেমন প্রজ্ঞাপন দিয়ে কোনও ব্যক্তি কিংবা দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে। তেমনি তা প্রত্যাহারও করে নিতে পারে।

আইনের ১৮ অনুচ্ছেদেই বলা আছে, “সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে কোনও ব্যক্তি বা সত্তাকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে বা তফসিল হইতে বাদ দিতে পারিবে অথবা অন্য কোনভাবে তফসিল সংশোধন করিতে পারিবে।”

এছাড়া জঙ্গি সংগঠনগুলো নিষিদ্ধের ক্ষেত্রে সরকার যেভাবে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে, তাও জামায়াতের ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ আছে।

৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- কোনও সংগঠন যদি রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কাজ পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়, তা সরকার নিষিদ্ধ করতে পারে।

নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া নিয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক তুরিন আফরোজ একদিন আগে সকাল সন্ধ্যাকে বলেছিলেন, “নির্বাহী আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ করা হলে আসলে কী হবে? অন্য সরকার আসলে আবার জামায়াত আসবে। এতে কিন্তু সমস্যাটা সমাধান না।”

জামায়াত নিষিদ্ধ করতে চাইলে বিচারের মাধ্যমে তা করা উচিৎ বলে মত প্রকাশ করেন এই আইনজীবী।

তিনি বলেন, “আমরা যদি মনে করি জামায়াতের আদর্শটাই ঠিক না, দেশবিরোধী, তাহলে কিন্তু ট্রাইব্যুনালে মামলা নিয়ে বিচারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত