সারাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও হত্যার প্রতিবাদে অনলাইন-অফলাইনে রবিবার গ্রাফিতি দেয়াল লিখন কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার রাত ১০টায় আন্দোলনের সমন্বয়কদের সভায় এই কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমন্বয়ক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আন্দোলন বন্ধের কোনও সম্ভাবনা নেই। এতো মানুষের মৃত্যুর বিচার ব্যতীত আন্দোলন চলবে। রবিবার আমরা সারাদেশে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি অংকনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এর আগে শনিবার রাত ৮ টায় গুগল মিটে এক সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। সেই সংবাদ সম্মেলন থেকেই দেশে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি, গুম হওয়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া এবং দায়ের করা সব ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন মাসউদ।
আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, “শুক্রবার ডিজিএফআই, র্যাব, ডিবির হাত থেকে পালিয়ে কোনোমতে এক জায়গা থেকে সংবাদ সম্মেলন করছি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। একদিকে বলা হচ্ছে, ছাত্ররা নাশকতা করেনি। অন্যদিকে আমাদের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের বেশি স্টুডেন্টকে তুলে নেওয়া হয়েছে। ছাত্ররা যদি নাশকতায় অংশ না নেয় তাহলে কেন তাদের তুলে নেওয়া হচ্ছে? হাজারের ওপর হামলা করে ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।”
মাসউদ বলেন, “কোটা সংস্কারে শুধু পরিপত্র নয়, কমিশন গঠন করে সব অংশীজনের মতামত নিয়ে কোটা সংস্কারের স্থায়ী সমাধানে সংসদে আইন পাস করতে হবে। দেশব্যাপী ছাত্র হত্যায় জড়িত মন্ত্রী থেকে পুলিশের কনস্টেবলদের (দায়িত্ব থেকে) অব্যাহতি দিয়ে আইনের আওতায় আনতে হবে।
“আমরা সারাদেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছি, কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দিয়েছি। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে কঠিন কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামব। আমরা পালিয়ে থাকব না। আগামী পরশু দিন (সোমবার) আমরা রাজপথে নামব।”
তিনি বলেন, “আমরা বিদেশে অবস্থানরত ভাইদের বলব, আপনারা হত্যার প্রমাণাদি সব রাষ্ট্রের কাছে পৌঁছে দেবেন।
“নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদারকে তুলে নেওয়া হয়েছে। অসুস্থ শিক্ষার্থীকে কীভাবে তুলে নিয়ে যায় আমাদের মাথায় ধরে না! আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পাঁচ মিনিটের বেশি থাকতে দেওয়া হয়নি।”
এ সময় মাসউদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থা–প্রতিষ্ঠান, প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও প্রবাসীদের বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। গুগল মিটের এ সংবাদ সম্মেলনে আরেক সমন্বয়ক মো. মাহিন সরকার, সহ-সমন্বয়ক রশিদুল ইসলাম রিফাত ওরফে রিফাত রশিদ যুক্ত ছিলেন।
এদিকে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন ফেইসবুক পাতায় গত ১৬ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ২৬৬ জন নিহত হওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় পুলিশ, আনসার সদস্য ও সাংবাদিকদের নামও রয়েছে।