এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের সংবাদ সম্মেলনে। কিন্তু নামটা যে মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাই তো কাবাডি ছাপিয়ে সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিলেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার।
সোমবার বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মিলনায়তনে শুরুতে কাবাডি নিয়ে কথা বলেন মাশরাফি। কিন্তু ক্রিকেট প্রসঙ্গ উঠতেই মুখে তালা।
এরপর সংবাদকর্মীরা অপেক্ষায় রইলেন বিওএ ভবনের লবিতে। সেখানে আর সাংবাদিকদের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারলেন না।
ভবনের লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন ক্রিকেট বিশ্বকাপ, অলিম্পিক ও দেশের অপ্রচলিত খেলাগুলো নিয়েও।
অলিম্পিক গেমস বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর। কিন্তু বাংলাদেশ শুধু অংশ গ্রহণের জন্যই প্রতিবার বিভিন্ন অলিম্পিক গেমসে যায়। এ পর্যন্ত কখনো পদক জেতেনি বাংলাদেশ।
যদিও অলিম্পিকের চেয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়েই বেশি মাতামাতি হয় বাংলাদেশে। কিন্তু ক্রিকেটের চেয়ে অলিম্পিকে পদক জেতা যে কত বড় অর্জন সেটা বললেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, “সারা বিশ্বে সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট অলিম্পিক। আমরা তো অলিম্পিকের হিটেই টিকছি না। এখনও কতধাপ পিছিয়ে আছি। হিটে টিকলে হয়তো ৩টি পদকের ১টা পাওয়ার আশা থাকে। এই কাজটা অনেক কঠিন। পাশের দেশ ভারত এখন ব্রোঞ্জ পাচ্ছে। রুপা পাওয়া শুরু করেছে। এমনকি সোনাও পেয়েছে। আমরা যদি অলিম্পিকে পদক পাওয়ার অবস্থায় যেতে পারি তাহলে সারা বিশ্বে বিরাট আকারে সংবাদ হবে।”
ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়েও যে অলিম্পিকে পদক জেতা সম্মানের, কীর্তিটা অনেক বড় সেটাও বললেন তিনি, “অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতেছে কিন্তু এতে সারা পৃথিবীতে ওদের নাম হয় না। ক্রিকেট বিশ্বকাপ এত বড় কিছু না। যদিও ক্রিকেট বিশ্বকাপ বাংলাদেশে জিতলে অনেক কিছু হবে। কিন্তু অলিম্পিক পদক জিতলে সেটার নাম সারা বিশ্বে ছড়াবে।”
ক্রিকেটে প্রচুর স্পনসর। বিনিয়োগকারীরা ছুটে আসেন। কিন্তু দেশের অপ্রচলিত খেলায় এটা দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে মাশরাফির কথা, “সব কিছুর সমন্বয় দরকার। খেলাধুলা এমন একটা ব্যাপার বিনিয়োগ প্রয়োজন। এখন বিনিয়োগ করতে গেলে ফোকাস থাকতে হবে। সেখানে মিডিয়ার বিষয় আছে, স্পনরশিপ আছে। সব কিছুর সমন্বয় হলে সেই গেমসটা আস্তে আস্তে ভালো করবে।”
অন্য খেলায় কেন স্পনসর সেভাবে আসছে না সেটার কারণ খুঁজে দেখতে বললেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, “বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের স্পনশরশিপ কত আছে দেখেন। অন্য ফেডারেশন এই অবস্থায় নেই। খুব স্বাভাবিক ব্যাপার যে বিনিয়োগ যত থাকবে তত খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা বাড়বে। তত তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় উঠে আসবে।”
এবারের বঙ্গবন্ধু কাবাডিতে ৫ কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ। সেই উদহারণ টেনে তিনি বলেন, “আমাদের এই জায়গায় অন্যান্য গেমসে দুর্বলতা আছে বলে এই সমস্যাগুলো হয়। কাবাডির এই একটা টুর্নামেন্টে এখানে সাড়ে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এ কারণে উঠে আসছে এটা। কাবাডি শেষ ৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ কারণে উঠে আসছে।”
কাবাডির মতো দেশের অজনপ্রিয় খেলোয়াড়দের আরও বেশি যত্ন নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি, “আপনি যখন প্লেয়ারদের যত্ন নিবেন তারা আরও ভালো করবে। এই যত্নটা কি? তার অনুশীলন সুবিধা বাড়ানো। কোনও ইনজুরি হলে সারিয়ে তুলতে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। পরিবার নিয়ে মোটামুটি ভালো থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। এগুলো নিশ্চিত করলে তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় উঠে আসবে।”