Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

ভারতের ক্রিকেটে যে কারণে পিছিয়ে গোয়ালিয়র

গোয়ালিয়রের নতুন মাধব রাও শিন্ডিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়াম
গোয়ালিয়রের নতুন মাধব রাও শিন্ডিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়াম
[publishpress_authors_box]
গোয়ালিয়র থেকে
গোয়ালিয়র থেকে

বলিউডের উঠতি তারকা কার্তিক আরিয়ানের জন্ম গোয়ালিয়রে। বাবা-মা নিয়ে এই শহরেই থাকতেন কিশোর বয়স পর্যন্ত। বাবা-মা দুজনই চিকিৎসক। দুজনের ক্লিনিকও আছে এই শহরে। সিনেমায় নাম লেখানোর স্বপ্নে মুম্বাই গিয়ে কার্তিক এখন সফল।

ভারতে সিনেমা ও ক্রিকেট দুটোই কিশোরদের বড় হয়ে কিছু হওয়ার তালিকায় প্রথম। গোয়ালিয়রেও ব্যতিক্রম নয় কিন্তু পথটা খুব কঠিন। কারণ এই শহরে ক্রিকেটার হওয়ার উপায় কম। তার চেয়ে হয়তো কার্তিকের মতো সিনেমার লোক হওয়াটা সহজ।

গোয়ালিয়রে জন্ম ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর। রাজনৈতিক নেতা আরও কয়েকজন আছেন। আর সিনেমায় শুধু কার্তিক নয়, বিখ্যাত স্ক্রিপ্ট লেখক জাভেদ আখতার, গজল লেখক জান নিসার আখতার, অভিনেতা পিযুশ মিশ্রা, অরুন কুশওয়াহ, কাজল জাইন, মমতা শর্মা, শারদ খেলকাররা গোয়ালিয়র থেকেই এসেছেন।

গোয়ালিয়র থেকে আইপিএল খেলা একমাত্র ক্রিকেটার অঙ্কিত শর্মা

এ শহর থেকে ভারত জাতীয় হকি দলের হয়ে অলিম্পিকে খেলেছেন আরমান কুরেশি ও শিভেন্দ্র সিং। অথচ জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটার একজনও নেই। অবশ্য বিশাল ভারতের অনেক রাজ্যের ক্রিকেটারদেরই জাতীয় দলে ‍সুযোগ পাওয়ার নজির নেই।

তাই ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য রঞ্জি ট্রফিতে খেলা বিশাল মানদন্ড। সেখানেও গোয়ালিয়র পিছিয়ে। ভারতের প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেট রঞ্জিতে গোয়ালিয়র মধ্যপ্রদেশের অংশ। ১০টি জেলা নিয়ে মধ্যপ্রদেশ দল গড়া হয়। এই দলে গোয়ালিয়র থেকে রঞ্জিতে খেলা ক্রিকেটার নিকট অতীতে মাত্র দুজন। অঙ্কিত শর্মা ও ওয়াসিম আহমেদ (এক মৌসুম) রঞ্জি ট্রফিতে খেলেছিলেন।

গোয়ালিয়রের এলএনআইপি অ্যাকাডেমির ক্রিকেটাররা

এছাড়া সৌরভ ঢালিওয়াল গোয়ালিয়র থেকে মধ্যপ্রদেশের হয়ে লিস্ট এ ক্রিকেটে খেলেছেন। তার মতো রাহুল বাথামেরও রঞ্জিতে অভিষেক হয়নি। তবে এই অলরাউন্ডার বর্তমানে মধ্য প্রদেশ ক্রিকেট দলে আছেন। রাহুল বাথামের সুযোগ হয়েছে গোয়ালিয়র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের গোয়ালিয়র চিতাস দলে। কিন্তু এই শহরের দল হলেও গোয়ালিয়রের মাত্র একজনই।  

বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে ১৪ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেছে শহরটিতে। এই ম্যাচে মিডিয়া বিভাগকে সামলানোর দায়িত্ব পেয়েছেন মধ্য প্রদেশ দলের মিডিয়া ম্যানেজার রাজিব রিসোরকার। তার কাছেও গোয়ালিয়র থেকে ক্রিকেটার উঠে না আসার আক্ষেপ শোনা গেল।

রাজিব বলেছেন প্রতিভা না থাকায় ক্রিকেটে পিছিয়ে গোয়ালিয়র, “ভারতীয় ক্রিকেট আসলে প্রতিভা নির্ভর। এখানে হাড়খাটুনি করে উঠে আসা ক্রিকেটার খুব কম। গোয়ালিয়র থেকে সেই রকম প্রতিভা উঠে না আসলে কি করার। তবে এখানকার কিছু ক্রিকেটার বড় পর্যায়ে খেলেছেন যেমন অঙ্কিত শর্মা আইপিএলে খেলেছে, আর অনূর্ধ্ব ১৯-এ জাতীয় দলে খেলেছে ভিক্রান্ত ভাদোরিয়া।”

নিউ স্টার ক্রিকেট অ্যাকাডেমি

মধ্য প্রদেশে ক্রিকেটে সবচেয়ে এগিয়ে এই রাজ্যের বড় শহর ইন্দোর। ভারতের কিংবদন্তী ক্রিকেট সৈয়দ মুশতাক আলিও ইন্দোরের। রাজধানী ভোপালেও ক্রিকেটের প্রসার অনেক। তাই মধ্যপ্রদেশের বর্তমান দলে ২৩ ক্রিকেটারের মধ্যে ৫ জন ইন্দোরের ও দুজন ভোপালের।

রাজিব বলছিলেন, “এখানে ক্রিকেটে বেশি এগিয়ে ইন্দোর। তাই এখানকার উঠতি ক্রিকেটারদের ইন্দোরে বা ভোপালে গিয়ে ক্রিকেট খেলতে হয়। যা কিশোরদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। তাই হয়তো এখান থেকে খুব একটা ক্রিকেটার উঠে আসে না।”

গোয়ালিয়রে ক্রিকেটের চলটা একেবারে যে নেই তা নয়। শহরে ভালো ক্রিকেট অ্যাকাডেমি আছে সাতটি। সিন্ধিয়া ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, নিউ স্টার ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, টিচিং মঙ্ক অ্যাকাডেমি, তানসেন ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, ইয়ং বয়েজ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, প্রোগ্রেস ক্রিকেট অ্যাকাডেমি ও রিশি গালভ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি।

শহরের মূল ক্রিকেট মাঠ যেমন রূপ সিং স্টেডিয়াম, এলএনআইপিই ক্রিকেট গ্রাউন্ড ও জায়াজি রাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট গ্রাউন্ড; এ তিনটি মাঠে অ্যাকাডেমির ক্রিকেটারদের নিয়ে টুর্নামেন্টও হয়। কিন্তু সেসব কোনটিই আনুষ্ঠানিক আসর নয়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের টুর্নামেন্টে খেলতে হলে ইন্দোর বা ভোপালে গিয়ে বড় অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতে হয় ক্রিকেটারদের।

শহরের এলএনআইপি ক্রিকেট গ্রাউন্ড

এ কথাই বলছিলেন রূপ সিং স্টেডিয়ামে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে আসা ক্রিকেটার ভিক্রান্ত রানা, “এখানে সাতটির মতো অ্যাকাডেমি আছে, যাদেরকে ভালো মানের বলা যায়। কিন্তু স্থানীয় লিগ না থাকায় এখান থেকে ক্রিকেটার কম উঠে আসে। আমি এখন ইন্দোরে থেকে অনুশীলন করি। এখানে বাড়িতে আসায় ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। এখানের ক্রিকেটারদের জন্য বড় মঞ্চে ক্রিকেট খেলা একটু কষ্টের।”

মধ্য প্রদেশের অংশ হওয়ায় গোয়ালিয়রের পক্ষে আলাদা কোন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়ে ওঠে না। রাজ্য ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে আয়োজিত লিগে খেলতে হয় এখানকার ক্রিকেটারদের। তবে ২০২৪ এ নতুন মাধব রাও সিন্ধিয়া স্টেডিয়ামে একটি টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন করেছে গোয়ালিয়র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। এই স্টেডিয়াম ঘিরে জেলাটির ক্রিকেট জাগরণের আশা করলেন মধ্য প্রদেশ ক্রিকেট দলের মিডিয়া ম্যানেজার রাজিব রিসোরকার।   

গোয়ালিয়রে সরকারি চাকরি কোচিংয়ের পোস্টার

অবশ্য গোয়ালিয়র থেকে বেশি ক্রিকেটার উঠে না আসার আরও একটি কারণ আছে। এখানকার বাবা-মায়েদের মূল ইচ্ছা সন্তান সরকারি চাকরি পাবে। তাই শহরটিতে কোচিংয়ের দৌরাত্য খুব বেশি।

ভারতীয়দের মাঝে আর্মি, পুলিশ, রেল-এ সরকারি চাকরি পাওয়ার আগ্রহ বেশি। গোয়ালিয়র শহরে এমন সংস্থাগুলোতে চাকরি পাওয়ার কোচিংয়ের বিলবোর্ড অনেক। তাই হয়তো শহরটি ক্রিকেটে পিছিয়ে। চাকরির চেষ্টায় মন দিলে যে ক্রিকেটটা ঠিক ঠাক হয়ে ওঠে না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত