সংবাদ সম্মেলনে এসে হাসি হাসি মুখে কথা বলছেন পিটার বাটলার, দৃশ্যটা সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু রবিবার বাংলাদেশ দল ফাইনালে ওঠার পর প্রতিটি প্রশ্নেরই হেসে হেসে উত্তর দিলেন এই বৃটিশ কোচ।
এমন একটা মুহূর্তে সাবিনা খাতুনদের দায়িত্ব নিয়েছেন বাটলার, যখন দলের মধ্যে চলছে গ্রুপিং, অর্ন্তদ্বন্দ্ব। সেমিফাইনালে বাংলাদেশ বিদায় নিলে হয়তো চাকরি নিয়েও টানাটানির মধ্যে পড়ে যেতেন কোচ।
নারী সাফের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে ড্রয়ে বেশি বেকায়দায় পড়ে যান বাটলার। কিন্তু যতোই দিন গড়িয়েছে মেয়েরা ভালো খেলেছে। প্রতিটি ম্যাচেই উন্নতির ছোঁয়া। ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে জয় পেয়েছিল ৩-১ গোলের ব্যবধানে। ভুটানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে তো ৭ গোল দিয়েছে ভুটানের জালে।
সব বিতর্ক পেছনে ফেলে মেয়েরা অসাধারণ পারফরম্যান্স করছে বলে উচ্ছ্বসিত কোচ, “আমি মনে করি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ৯০ মিনিট কোনও ফুটবলারের চোট ছাড়া শেষ করা। পেশাদারভাবে নিজেদের কাজটা করে যাওয়া। আমাদেরকে একটা ভালো ফুটবল দলের মতো দেখাচ্ছে, এই টুর্নামেন্টে আমাদের আসলেই ভালো ফুটবল দলের মতো দেখাচ্ছে। কোনও চোট নেই, গোলও পাচ্ছি, আমি আজ উপভোগ করব। এরপর রিকভারি শেষে ফাইনাল নিয়ে ভাবব।”
ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে ছিলেন না অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। তবে রবিবার একাদশে রাখেন তাকে কোচ। এবং ভুটানের বিপক্ষে জোড়া গোলও করেন সাবিনা। ম্যাচের পর সাবিনার প্রশংসা ঝরল কোচের কন্ঠে, “সাবিনা অসুস্থ ছিল, তবে আমি ভেবেছিলাম সে প্রথমার্ধটুকু খেলতে পারবে। বিরতির সময় আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে বলল খেলা চালিয়ে যেতে পারবে। তবে, অবশ্যই আমি মনে করি, ৩৫-৪০ মিনিট খেলার পরই তাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল, সে আসলেই ভালো দুটি গোল পেয়েছে। সে দলের জন্য উদাহরণ।”
জয় নিশ্চিত জেনে কোচ এদিন বেশ কিছু বেঞ্চের ফুটবলারকে সুযোগ দিয়েছেন কোচ, “আমরা হাই ইনটেনসিটির একটা ম্যাচ খেললাম। ভালো দিক হচ্ছে, আমরা অনেক নতুন ফুটবলারকে খেলার সুযোগ দিতে পেরেছি, যাতে তারা একটু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।”
এক দিন আগেই দলে বাইরের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন কোচ। দলকে ফাইনালে তুলে তাদের যেন এক হাত নিয়েছেন বাটলার, “আমি খুবই পেশাদার একজন মানুষ। যারা এই মেয়েদের প্ররোচিত করতে চায়, তাদের কেউই আমি যে পর্যায়ে খেলেছি, তারা খেলেনি। আমি যে পর্যায়ে কোচিং করিয়েছি, তারা করাইনি। সত্যি বলতে, এই বিষয়গুলো সামাল দিতে অনেক সময় শান্ত থাকা প্রয়োজন, আমি তাই করেছি।”
এরপর তিনি যোগ করেন, “আজকে জয় পেয়ে ভালো লাগছে। মেয়েরাও খুশি, কেননা, গত ছয়-সাত মাস আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ এবং আবহ আনার জন্য। যে প্রচেষ্টা এবং নিবেদন নিয়ে এই মেয়েরা খেলে, আমি তাদের নিয়ে সবসময়ই খুশি।”