Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

ডুবছে পুঁজিবাজার, ৮ মাসে সূচক কমেছে হাজার পয়েন্ট

ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

টানা দরপতনে ডুবতে বসেছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক। কেন পড়ছে, তার কারণ বলতে পারছে না কেউ। ক্ষোভে-হতাশায় ফের রাস্তায় নেমেছেন বিনিয়োগকারীরা।

টানা নয় দিনের পতনে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে ৪ হাজার ৯৭২ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এই সূচক গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এর আগে একদিনে ১৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজারের নিচে সূচক নামে গত বছরের ২৭ অক্টোবর। সেদিন ডিএসইএক্স দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্ট।

নাটকীয়তার পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার গত আট মাসে ডিএসইএক্স সূচক ১ হজার পয়েন্টের বেশি কমেছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম পদত্যাগ করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৩ আগস্ট পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

তার ওই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ফেইসবুকে অনেকেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, পুঁজিবাজারের আলোচিত নাম সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মাসরুরের সম্পর্ক থাকার কথা তোলেন। দুইজনের ঘনিষ্ঠতার নজির হিসাবে তাদের ছবিও দেন কেউ কেউ।

এরপর বিএসইসির কর্মকর্তাদের একাংশ মাসরুর রিয়াজের নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলে। সেই আপত্তির মুখে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি তিনি।

এরমধ্যে গত ১৪ আগস্টই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে মাসরুরের নিয়োগের প্রজ্ঞাপনটি সরিয়ে ফেলা হয়। এই পরিস্থিতিতে ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

সবাই প্রত্যাশা করেছিল ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ঘুরে দাাঁড়াবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার; তেমন লক্ষণও দেখা দিয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট ডিএসইএক্স প্রায় ২০০ পয়েন্ট বাড়ে; শতাংশ হিসাবে বাড়ে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। লেনদেনও বাড়তে থাকে।

ডিএসইর পাশাপাশি আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) চাঙাভাবে ফিরে আসে। ছুটতে থাকে দুই বাজার।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাত্র চার কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচক প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ওই সময় লেনদেনও বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।

আট মাস পর এসে এখন বাজারে লেনদেন কমে নেমেছে ৩০০ কোটির ঘরে, আর সূচকও ১ হাজার পয়েন্টের বেশি কমে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে।

পুঁজিবাজারের লেনদেন কমে গেলে তাতে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ বাজারের অংশীজনেরাও বড় লোকসানের মুখে পড়েন।

২০১০ সালের বড় ধসের পর থেকে পুঁজিবাজারের এমন পরিস্থিতিই চলছে। মাঝেমধ্যে কিছুটা উত্থান দেখা গেলেও স্থায়ী হয় না। যার কারণে হঠাৎ হঠাৎ আশার আলো দেখা গেলেও আবার হতাশার মুখোমুখি হতে হয় বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

বাজার অংশীজন থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী সবারই এখন একটাই বক্তব্য, কেউ ভালো নেই। কারণ, শেয়ারের অব্যাহত দরপতনে সবাই বড় অঙ্কের পুঁজি হারিয়েছেন।

বাজার অংশীজনরা বলছেন, সরকার বদলের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের বদল হলেও বাজারে কোনও আশার আলো দেখা যায়নি। বিদ্যমান সঙ্কটেরও যেন কোনও সমাধান নেই। যে কারণে বাজার কেবলই দরপতনের একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে; হতাশা বাড়ছে সব মহলে।

এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার ফের রাস্তায় নামেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুরনো ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

বৃহস্পতিবার অবশ্য তারা কোনও মিছিল-সমাবেশ করেননি।

বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সরকার বদলের পর শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারী ও বাজার অংশীজনরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সে আশা এখন গুড়ে বালি। দীর্ঘদিনের অংশীজন হিসেবে বাজার নিয়ে আমাদের মধ্যে এত বেশি হতাশা আগে কখনও কাজ করেনি। বাজার এখন অনেকটাই দিকনির্দেশনাহীন। বিএসইসির সিদ্ধান্তহীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা বাজারকে এক অনিশ্চিত পথে ধাবিত করছে।

“বর্তমান বিএসইসি বাজারের মূল সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সেগুলোর সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণে বাজারে আমরা আশার কোনও আলো দেখতে পারছি না।”

বৃহস্পতিবারের বাজার পরিস্থিতি

প্রায় ছয় মাস পর ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নামল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। আগের দিনের চেয়ে ৪৯ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট হারিয়ে বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স সূচক নেমেছে ৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া সূচক ১৬ দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১০৪ দশমিক ৭০ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২২ দশমিক ৫১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। বিনিয়োগকারীরাও হারানো পুঁজি একটু একটু করে ফিরে পাচ্ছিলেন।

সেই প্রবণতা অবশ্য সপ্তাহ দুয়েকের বেশি স্থায়ী হয়নি। সূচকের ওঠানামা ও দরপতনে বিনিয়োগকারীরা ফের পুঁজি হারাতে থাকেন। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অস্থিরতাও পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

ঈদুল ফিতরের মাস মার্চে মিশ্র ধারায় লেনদেন চলে পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগকারীদের আশা ছিল, ঈদের পর থেকে বাজার হতো ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করবে। কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টো পড়ছে বাজার; দুই বাজারেই একই হাল।

ডিএসইর তথ্য বলছে, ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে পুঁজিবাজারে সূচকের পতন শুরু হয়, যা দিন দিন বাড়ছে। পতনের তালিকায় নাম আসছে মৌলভিত্তির কোম্পানিরও।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্মেলন চলাকালে তিন দিন মূল্যসূচকের সঙ্গে বেড়েছিল লেনদেনের পরিমাণও। সম্মেলন শেষ হতেই সূচক ও লেনদেনে পতন শুরু হয়।

এরপর লেনদেন কমতে কমতে সবশেষ গত ১৫ এপ্রিল ৪৪৫ কোটি টাকায় নামে। গত চার কর্মদিবসে তা নেমে যায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। পতন ঘটতে থাকে সূচকেও।

চলতি সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বেশিরভাগ কোম্পানিই দর হারিয়েছে। লেনদেনে আসা ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৫২টির; কমেছে ৩০০টির। আগের দিনের দরে লেনদেন করেছে ৪৬টি।

বেশিরভাগ শেয়ারের দর হারানোর দিনে লেনদেন হয়েছে ৩৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের দিন বুধবার লেনদেন হয়েছিল আরও কম ৩০০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার ডিএসইর লেনদেনে সর্বোচ্চ অবদান রাখে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং ব্যাংক খাত।

দিন শেষে ক্লোজিং প্রাইস বিবেচনায় ডিএসইতে শেয়ার দর বৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে আসে এনার্জিপ্যাক, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স ও প্রভাতি ইন্সুরেন্স।

অন্যদিকে ক্লোজিং প্রাইস বিবেচনায় শেয়ার দর হারানোর শীর্ষে ছিল খান ব্রদার্স, বিচ হ্যাচারি ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৩ হাজার ৯৫৬ পয়েন্টে নেমেছে।

এদিন সিএসইতে মোট ২১৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে বেড়েছে ৫২টির। কমেছে ১৪০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৬টির দর।

এদিন সিএসইতে ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত