সকাল সন্ধ্যা : ভারতের জালে ৩ গোল দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আপনার দ্বিতীয় গোলটি ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। এই গোলের আগে মাথার মধ্যে কি ভাবনা ছিল?
তহুরা খাতুন : সাবিনা আপু (সাবিনা খাতুন) মাঝমাঠ থেকে ক্রস করেন। এরপর শামসুন্নাহার আস্তে করে নামিয়ে দিলে আমি শুটিং করেছি। দেখি গোল হয়ে গেছে।
সকাল সন্ধ্যা : রাতে কি টিম হোটেলে জয় উদযাপনে কেক কেটেছিলেন?
তহুরা : না। এখনও আমাদের সামনে আরও দুটো ম্যাচ আছে। এই দুটো ম্যাচ শেষে উদযাপন করতে চাই।
সকাল সন্ধ্যা : সিনিয়র-জুনিয়র বিভাজন নিয়ে গত কয়েকদিন বাংলাদেশ দলের অন্দরমহল তোলপাড়। এটা নিয়ে আপনি কি বলবেন?
তহুরা: সত্যি বলতে আমাদের এই দলের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই। যখন প্রথম থেকে মাঠে নেমেছিলাম সবার মধ্যে জিদ ছিল যে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র করেছি। যেহেতু ওটা প্রথম ম্যাচ ছিল। তারপরও সবাই তো কম চেষ্টা করিনি গোল পেতে। ওরা (পাকিস্তান) তো ডিফেন্ডিং করে খেলেছে। আর আমরা অনেক সুযোগ নষ্ট করেছি। যেমন ঋতুর (ঋতুপর্ণা চাকমা) সাইড দিয়ে অনেকগুলো ক্রস এসেছিল, কাজে লাগাতে পারিনি। গতকাল আমি প্রথম যে গোলটা করেছি ভারতের সঙ্গে ওটাও ঋতুর ক্রস থেকে এসেছিল। মাথায় একটাই ভাবনা ঘুরছিল যে এর আগে তো মিস করেছি অনেকগুলো। ঋতুর ক্রসগুলোয় অনেক পাওয়ার। আমি জানতাম যদি কোনও একটায় পা লাগাতে পারি গোল আসবেই।
সকাল সন্ধ্যা : আর দ্বিতীয় গোল..
তহুরা : দ্বিতীয় গোলটা আপু (সাবিনা) যখন ক্রস দিল চাম্পুকে (শামসুন্নাহার সিনিয়রকে সবাই আদর করে এই নামে ডাকে) বলেছিলাম যে বলটা শুধু নামিয়ে দিবি। বাকি কাজটা আমি করবো। ও নামিয়ে দিয়েছে। ওই গতির ওপরই শট নিয়েছি।
সকাল সন্ধ্যা : জাতীয় দলের জার্সিতে আপনার ৯ গোল। এর ৪টিই নেপালে করেছেন। রহস্য কি?
তহুরা : এখানে হয়তো খেলা বেশি হয় এজন্যই গোল হয় বেশি (হাসি)। হতে পারে এটা আমার জন্য পয়া ভেন্যু। আল্লাহই ভালো বলতে পারেন সেটা। আল্লাহ চাইলে সব কিছু হয়।
সকাল সন্ধ্যা : ১৩ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে জাতীয় দলে এত কম গোল। এটা নিয়ে কোনও আক্ষেপ আছে?
তহুরা : এটা সত্যি কৃষ্ণা, স্বপ্না, মৌসুমীদের জন্য একাদশে আমাকে রাখতে চাইতেন না কোচ। হয়তো ওদের আত্মবিশ্বাস বেশি ছিল। ছোটন স্যার (সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন) যা ভালো বুঝতেন সেটাই করতেন। তাছাড়া ওদের চেয়ে অনেক জুনিয়র ছিলাম তখন। আমার চেয়ে ওরা ভালো খেলতেন। সিনিয়রও ছিল। ওদের নামাতো বলে এ নিয়ে আমার কোনও আফসোস নেই বা আক্ষেপও নেই।
সকাল সন্ধ্যা : এই দলে স্বপ্না নেই। চোটের পর কৃষ্ণাকেও ৯০ মিনিট খেলাচ্ছেন না বাটলার। দায়িত্বটা কি বেড়ে গেল আপনার?
তহুরা : দেখুন এখন কোচের সব আস্থা হয়তো আমার ওপর। আমি সেই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই প্রতি ম্যাচে গোল করে। আসলে কোচ যখন যাকেই মাঠে নামান কেউ কখনও চায় না যে আমি খারাপ খেলি। সবাই চাই ভালো খেলতে। হয়তো সবার ক্ষেত্রে হতে পারে এমনটা, কোনও ম্যাচ ভালো খেলে, কোনওটা খারাপ। কিন্তু সবাই চেষ্টা করে। আমিও প্রথম থেকে চেষ্টা করি। হয়তো বা পারি না। অথবা গোল হয় না। প্রথম থেকেই আমার চেষ্টা ছিল এবারের সাফে ভালো কিছু করবো। যদি সুযোগ পাই সেটা অবশ্যই কাজে লাগাব।
সকাল সন্ধ্যা : ভারত প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ গোল দিয়েছিল। এই ভারতকে হারানো সম্ভব, এমনটা ভেবেছিলেন?
তহুরা : হয়তো অনেকে ভেবেছিল এই ম্যাচ ড্র হলেই আমরা সেমিফাইনালে যাবো। কিন্তু আমাদের মনের মধ্যে এমন কিছুই ছিল না। আমরা চেয়েছি আমাদের যে স্বাভাবিক খেলা সেটাই খেলব ইনশাল্লাহ। এরপর যা হওয়ার হবে। আল্লাহ তো অবশ্যই রেজাল্ট একটা লিখে রেখেছে। আমরা চেষ্টা করব, সেই ঐক্যটা সবার মধ্যে ছিল। চেয়েছি আমরা শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব। এবং মাঠে নেমে সেটাই করেছি। প্রত্যেক ফুটবলার যখন মাঠে নেমেছি সবাই এক সঙ্গে গোল হয়ে দাঁড়িয়েছি। তখন বলেছি আমাদের চেষ্টা আমরা করব। বাকিটা আল্লাহর হাতে।
সকাল সন্ধ্যা : একটা গোল পেলেই এই বাংলাদেশের চেহারা বদলে যাবে-এমন ভাবনা নিশ্চয় আপনাদের মধ্যে ছিল?
তহুরা : হ্যাঁ। এটা সত্যি বলেছেন। আফঈদার (আফঈদা খন্দকার) গোলে শুরুটা হলো। আমি তো বলেছি প্রথম থেকে সবার ভেতরে জিদ ছিল যে পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র করেছি, এটা নিয়ে অনেক নেতিবাচক লেখালেখি হয়েছে। অনেকে অনেক কিছু বলেছে। অনেকে বলেছে আমাদের দলে সিনিয়র, জুনিয়র দুটো ভাগ। আসলে তেমন কিছুই নেই এই দলে। আমরা এসব মাথায় না ঢুকিয়ে যদি নিজেদের খেলাটা খেলি, ইনশাল্লাজ রেজাল্ট বের হবেই। আর তাছাড়া টেনশন করলে খেলা যায় না, এটা সত্যি কথা।
সকাল সন্ধ্যা : তাহলে কি টেনশনমুক্ত?
তহুরা : এখনও পুরো টেনশন মুক্ত হইনি। আমরা শুধু ভারতকে হারিয়েছি। সামনে সেমিফাইনাল জিততে হবে।
সকাল সন্ধ্যা : সেমিফাইনালে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে ভুটানকে পেতে পারেন। কেমন হবে ম্যাচটি?
তহুরা : এখনও আমরা জানিনা কারা প্রতিপক্ষ হবে। তবে ভুটান তো নেপালের সঙ্গে ড্র করেছে। অথচ নেপাল পরের ম্যাচেই ১১ গোল দিয়েছে মালদ্বীপকে। ভুটানও অনেক উন্নতি করেছে। এখানে প্রতিপক্ষ কোনও দলকে দুর্বল ভাবছি না। আমরা চেষ্টা করবো ওই ম্যাচ জিতে ফাইনালে যেতে।