Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

স্মার্টঘড়ি কেনার আগে

ছবি: সিনেট
ছবি: সিনেট
[publishpress_authors_box]

স্মার্টওয়াচ এখন হাতে হাতে জনপ্রিয়। শুধু খেলোয়াড়রাই নয়, কর্মব্যস্ত থেকে ফ্যাশন সচেতন যে কেউ ঝুঁকছেন এই ঘড়ির দিকে। যদিও ঘড়ি বিশেষজ্ঞ অনেকে এবং কিছু গবেষণা দাবি করছে, স্মার্টওয়াচ সব সময় সঠিক আউটপুট দেয় না।

জার্মানির নুরেমবার্গ শহরের পিটার হেনলেইন ছিলেন একজন তালা-চাবিওয়ালা। ১৫০০ সালের দিকে তিনিই প্রথম ঘড়ি উদ্ভাবন করেছিলেন। এরপর থেকেই আরও আধুনিক ও সঠিক ঘড়ি বানানোর দৌড় শুরু হয়। ধীরে ধীরে ঘড়ির কারিগরি দিক আরও উন্নত হলো।

আজকের দিনে হাতের ঘড়িটি শুধু সময় জানিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, আরও জানাচ্ছে হৃদস্পন্দন। এনালগ থেকে ঘড়ি চলে আসে ডিজিটাল যুগে। তারপর ডিজিটাল থেকে ঘড়ি চলে আসে হাই-টেক দুনিয়াতেও।          

ভারতে ফুটপাতেও স্মার্টওয়াচ পাওয়া যাবে একশ থেকে দেড়শ রুপিতে।

জীবনের জন্য ঘড়ি   

সময় বলার সঙ্গে সঙ্গে এখন স্মার্টওয়াচ বলছে, সারাদিনে আপনি কত ক্যালরি পুড়িয়েছেন, সারাদিনে কয় কদম হেঁটেছেন? এমনকি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে জরুরি নম্বরে ফোন করতেও পারে আজকের দিনের ঘড়ি।

গত মে মাসে দিল্লিতে একজন নারী ও তার অ্যাপল ঘড়িটি সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল।

স্নেহা সিনহা নামে ওই পলিসি রিসার্চার তার অ্যাপল ওয়াচে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বার্তা খেয়াল করেন। দেড় ঘণ্টার পরও স্বাভাবিক বোধ করছিলেন না তিনি। অস্বাভাবিক হৃদযন্ত্রের ছন্দ মনিটর করে এরপর অ্যাপলওয়াচ তাকে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন নিয়ে নোটিফিকেশন দেয়। ওই রিপোর্ট দেখে স্নেহা সিনহা দ্রুত চিকিৎসা নিতে ছুটে যান এবং সুস্থ হয়ে ওঠেন।  

২০২৩ সালের জুলাই মাসে এরকম অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছিলেন নরওয়ের ইনভেস্টমেন্ট পরিচালক রবার্ট নাইস। দৌড়াতে গিয়ে পিছলে যান তিনি। এই দুর্ঘটনায় শরীরে আঘাত পান। অ্যাপলওয়াচ তখন জরুরি ফোন করে দ্রুত সেবা নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিল তার।

আধুনিক যুগে স্মার্টওয়াচ মানে সময়ের পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্যের অনেক দিক নিয়ে প্রতিদিন রিপোর্ট জানার সুযোগ হচ্ছে।  

এমনকি কার কত ঘণ্টা ঘুম হচ্ছে তাও জানা যাচ্ছে। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ থেকে  ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামস বা ইসিজি রিপোর্টও দিচ্ছে ঘড়ি। অনেক ঘড়ি জানিয়ে দিতে পারছে শরীরের তাপমাত্রা এবং রক্তচাপের হিসাবও।   

যারা নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল তারা দৌড়ানো, সাইকেল চালানো এবং সাঁতারের হিসাব-নিকাশ করতে আধুনিক ঘড়িতে ঝুঁকছেন।

মাসিকের তারিখ মনে রাখতেও নারীর ভরসার জায়গা করে নিচ্ছে ঘড়ি।  এখন ঘড়িতেও থাকছে জিপিএস সুবিধা।

সবকিছুর পরও প্রশ্ন থেকেই যায়; আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা এই ঘড়ি কি সব সময় সঠিক তথ্য দিতে পারে?

উত্তর খুঁজতে আরও গবেষণা করে দেখা হয়েছে, হৃদস্পন্দন, ঘুম, রক্তচাপ ইত্যাদি নিয়ে ঘড়ির দেওয়া রিপোর্টে কতটা ভরসা করা যায়।

যাচাইবাছাই করে প্রাথমিক ভাবে দেখা গেছে, ঘড়ির দেওয়া এসব তথ্যের মান ‘ভালো’।  এমনকি ব্যায়ামের সময়ও ঘড়ি ঠিকঠাক মতই শরীরের তথ্য নিতে পারছে।

গবেষণার বরাতে ইন্ডিয়া টুডে বলছে, হৃদস্পন্দন নিয়ে ঘড়ির তথ্যে ৩ শতাংশ ক্রুটি থাকতে পারে। আর এর কারণ হচ্ছে, কারও ত্বকের রঙ, গায়ের ট্যাটু।

আবার হাঁটাহাঁটির তথ্যে অন্তত ৯ শতাংশ ক্রুটি থাকতে পারে।

ক্যালরি খরচ নিয়ে সবচেয়ে বড় ঘাপলা দেখা যায় ঘড়ির দেওয়া তথ্যে; এখানে ক্রুটি আছে অন্তত ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে ২১ দশমিক ২৭ শতাংশ।  

আবার ঘুমের বেলায় অনেক সময় ১০ শতাংশ বেশিই হিসাব করে ফেলে ঘড়ি। অন্যদিকে ঘুমিয়ে পড়তে কতক্ষণ লাগছে কিংবা ঘুম থেকে জাগার পর রেশ কাটতে কতক্ষণ লাগছে তাতে ১২ থেকে ১৮০ শতাংশ ক্রুটি রয়েছে ঘড়ির তথ্যে।

ঘুম নিয়ে অনেক গবেষণার সঙ্গে তুলনা করেই ঘড়ির এই গোলমাল ধরা গেছে।   

ঘড়ির জনক পিটার হেনলেইন

কেন ভুল করছে ঘড়ি

সারদা হসপিটালের জেনারেল ফিজিশিয়ান শ্রী কুমার শ্রীবাস্তব ব্যাখ্যা করে বলেন, “তথ্যের মান আসলে নির্ভর করছে ঘড়ির মানের উপরও; এর সেন্সর কেমন, কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

হৃদস্পন্দন মনিটরিং করার ঘড়িতে অপটিকাল সেন্সর থাকে। এই ধরনের সেন্সর ত্বকের ভেতর দিয়ে রক্তের প্রবাহ মেপে থাকে। যদি ঘড়ি বেশ আঁটোসাঁটো করে বেঁধে না পরা হয়, তাহলে তথ্যে ক্রুটি হবেই।

ঘুমের ভেতর নড়াচড়া এবং ওই সময় হৃদস্পন্দনের উপর ভিত্তি করে ঘুমের হিসাব দেয় ঘড়ি। এ কারণে গবেষণার চেয়ে মানের দিকে কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে ঘড়ি।   

শরীরে ক্যালরি বার্ন করার হিসাব সঠিক ভাবে নেওয়া আসলেও দুস্কর। কারণ এর সঙ্গে হজমশক্তি, সুস্থতার মাত্রা এবং ব্যায়ামের ধরনও জড়িত আছে।

আধুনিক ঘড়ির ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আলাপের মধ্যেই বাজারে চলে এসেছে স্মার্ট আংটি। আংটি মানে আঙ্গুলে পরতে হয়; ঘড়ির চেয়েও ছোট ও হালকা। এসব আংটিও ঘড়ির মতই আধুনিক সুবিধা দিতে পারে।

গুরুগ্রামের সিকে বিড়লা হসপিটালের চিকিৎসক তুষার তায়াল বললেন, “আকারে ছোট হওয়ার কারণে আংটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

“কিন্তু এতে সেন্সর অনেক ছোট হয়। ফলে ঘড়ির তুলনায় ক্রুটি আরও বেড়ে যেতেই পারে।”   

“আর যে কোনো পণ্যের মতোই আংটির কার্যকারিতা নির্ভর করছে ব্র্যান্ড ও প্রযুক্তির মানের উপর।”

আকারে ছোট হওয়ার কারণে জনপ্রিয় হচ্ছে স্মার্ট রিং

সস্তা পণ্য এড়াতে হবে

যদি আধুনিক ঘড়ি ও আংটি পরার ঝোঁক থাকেই, তাহলে অবশ্যই ফুটপাত এড়িয়ে ভালো ব্র্যান্ড বেছে নিতে হবে।

আর সস্তা পণ্য কিনলে ভুল তথ্যের পাশাপাশি এসব টিকবেও না বেশি দিন।

স্মার্টঘড়ি কেনার আগে

শুরুতেই নিজের কাছে স্পষ্ট হয়ে নিন, কেন স্মার্টঘড়ি দরকার আপনার? কতক্ষণ ব্যায়াম করছেন তা জানতে? স্বাস্থ্যের হাল জানতে? এসব কারণ জানলে ব্র্যান্ড ও ফিচার বাছাই করতে সহজ হবে।

এসব ঘড়ির সঙ্গে ফোনের অ্যাপের সংযোগ হচ্ছে কি না তাও দেখে নিতে হবে।   প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার স্বাস্থ্যের তথ্য গোপনীয়তা কীভাবে রক্ষা করছে তাও খুব ভালো ভাবে যাচাই করে নিতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত