Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

এক ফুল দেখতে ছুটছে হাজারো মানুষ 

টাইটান অ্যারাম গাছ ৩০ থেকে ৪০ বছর বাঁচে।
টাইটান অ্যারাম গাছ ৩০ থেকে ৪০ বছর বাঁচে।
[publishpress_authors_box]

ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে হাশিম মাহমুদ লিখেছিলেন কালজয়ী গান ‘ফুল ফুটেছে গন্ধে সারা মন’।

তবে সব ফুল মন মাতায় না। কিছু ফুল আছে, যার গন্ধ নাকে এলেই চোখমুখ কুঁচকে যায়। এমনই এক ফুল টাইটান অ্যারাম। বৈজ্ঞানিক নাম অ্যামোরফোফালাস টাইটানাম। শব ফুল নামেই বেশি পরিচিত। পচে যাওয়া লাশের মতোই এর গন্ধ হওয়ায় এই নাম। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পোকামাকড় আকৃষ্ট করে ফুল ফোটায় টাইটান অ্যারাম।

দুর্গন্ধ ছড়ালেও এই টাইটান অ্যারামের ফুল দেখতে রীতিমতো অস্থির হয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার অনেক মানুষ। তারা ভিড় করেছে মেলবোর্নের দক্ষিণে জিলং বোটানিক্যাল গার্ডেনে। কারণ এই ফুল বেশ বিরল। বিলুপ্তপ্রায়।

তার ওপর টাইটান অ্যারামের ফুল ফোটার নির্দিষ্ট কোনও সময় নেই। ১০ বছরে মাত্র একবার গাছে ফুল এসেছে, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আর একবার ফোটার পর মাত্র এক থেকে দুদিন আয়ু থাকে তার।

তাই গন্ধ ভালো না হলেও একবার চোখের দেখা দেখতে জিলং বোটানিক্যাল গার্ডেনে ছুটছে হাজার হাজার মানুষ। আগামী এক দশক হয়তো এই ফুল দেখার সৌভাগ্য তাদের হবে না।

টাইটান অ্যারাম সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ বছর বাঁচে। এক জীবনে হাতেগোনা কয়েকবারই মাত্র এই গাছে ফুল ফোটে।

মূলত ইন্দোনেশিয়ায় টাইটান অ্যারাম পাওয়া যায়। দেশটির বিশাল সুমাত্রা দ্বীপে এই ফুলের আদি বাস। বনটির গাছপালা দেদারছে কেটে ফেলায় ভূমিক্ষয়ের কারণে এই ফুলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। তাই এটিকে ‘বিলুপ্তপ্রায়’ উদ্ভিদ প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  

জিলং বোটানিক্যাল গার্ডেনে টাইটান অ্যারাম ফুলের গন্ধ নিচ্ছেন এক দর্শনার্থী।

২০২১ সালে জিলং বোটানিক্যাল গার্ডেনকে টাইটান অ্যারাম গাছ উপহার দিয়েছিল উদ্ভিদ, শৈবাল ও ছত্রাকবিষয়ক তথ্যকেন্দ্র স্টেট হারবেরিয়াম অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া।   

সিএনএন বলছে, জিলং বোটানিক্যাল গার্ডেনের টাইটান অ্যারাম গাছে গত সোমবার ফুল ফোটার কথা ছিল। উদ্যানতত্ত্ববিদরা বেশ কয়েকদিন ধরে গাছটির অবস্থা দেখে ধারণা করেন, সোমবার ফুল ফুটতে পারে।

খবর রটতে বেশি সময় নেয়নি। সেদিনই হাজার পাঁচেক মানুষ বোটানিক্যাল গার্ডেনে ভিড় করে বলে জানিয়েছেন এর ব্যবস্থাপক রিস ম্যাকিলভিনা।

টাইটান অ্যারাম ফুল দেখার পর দর্শনার্থীরা জানান, এর গন্ধ মরা ইঁদুর বা দুর্গন্ধে ভরা পুকুরের মতো।

বোটানিক্যাল গার্ডেনে ভিড়ের মধ্যে ছিল এক শিশুও। তার মতে, টাইটান অ্যারামের গন্ধ মৃত পসামের (এক ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী; অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে তাদের বাস) মতো।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকালে ফুল পুরোপুরি ফুটে যাবে বলে মনে করছেন উদ্যানতত্ত্ববিদেরা।

এসময়ের মধ্যে যাদের পক্ষে জিলং বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে ফুলটি দেখা সম্ভব হবে না, তাদের জন্য অনলাইনে লাইভ দেখার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে সারা বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ ফুলটিকে অনলাইনে দেখেছে।

টাইটান অ্যারামের ছবি তুলতে ব্যস্ত দর্শনার্থীরা।

জিলং শহরের প্রধান নির্বাহী আলি ওয়েস্টি বলেন, “জিলং বোটানিক্যাল গার্ডেন এই অসাধারণ ঘটনা পুরো পৃথিবীর মানুষকে দেখাচ্ছে।

“বিরল ও অনন্য উদ্ভিদ প্রজাতি সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করতে বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলো যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, সেটির আমরা তারিফ করি।”

তিনি বলেন, “বিলুপ্তপ্রায় টাইটান অ্যারাম ক্যারিয়ন ফুলের একটি প্রজাতি। এটি সংরক্ষণ করা জরুরি। কারণ বুনো গাছপালার সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত