লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগের এক নজরদারি কর্মসূচির বৈঠকে অংশ নিতে বলা হয়েছিল হন্ডুরাসের দুই নারীকে। বৈঠকে তাদের তিন সন্তানকেও নিয়ে যেতে বলা হয়।
আট বছরের কম বয়সী এই তিন শিশুই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাদের একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা চলছে।
ওই বৈঠক চলাকালে হঠাৎ তিন সন্তানসহ দুই নারীকে আটক করেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তারা। পরে তাদের হন্ডুরাসে ফেরত পাঠানো হয়।
এ তথ্য গত শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ও ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রোজেক্ট জানায়, এ ঘটনায় এক মাকে তার দুই বছরের সন্তানসহ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
আরেক মাকে তার ৪ ও ৭ বছরের সন্তানদের সঙ্গে বিতাড়িত করা হয়। এই ৪ বছরের শিশুটিই ক্যান্সারে ভুগছে।
এই দুই পরিবারের আইনজীবীরা সিএনএনকে জানিয়েছেb, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই দুই পরিবারকে বহিষ্কারের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। ওই দুই নারী যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ নাগরিক না হলেও তাদের সন্তানদের জন্ম সে দেশেই।
বছরের শুরু থেকে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া কঠোর পদক্ষেপেরই শিকার এই দুই নারী ও তাদের সন্তানরা, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
আইনজীবী ও ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রোজেক্টের সদস্য গ্রেসি উইলিস বলেন, “গত বৃহস্পতিবার ওই দুই নারী ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এটি খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা।”
প্রথম মা ও তার সন্তান সম্পর্কে এর আগে লুইজিয়ানার এক বিচারক বলেছিলেন, তার কোনও বৈধ নথি নেই; এজন্য তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
তবে তার সন্তানের বহিষ্কার নিয়ে আগামী ১৬ মে শুনানি হবে, কারণ সে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিককে বিতাড়িত করা ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’।
তার আগেই অবশ্য ওই মা ও তার সন্তানকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হয়।
দ্বিতীয় মা সম্পর্কে তার আইনজীবী এরিন হেবার্ট বলেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি দক্ষিণ লুইজিয়ানায় থাকলেও সেখানে অবস্থানে তার কোনও বৈধ কাগজপত্র ছিল না।
তাকে দুই সন্তানসহ গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিভাগের বিকল্প নজরদারি কর্মসূচি ইনটেনসিভ সুপারভিশন অ্যাপিয়ারেন্স প্রোগ্রামের (আইএসএপি) নিয়মিত বৈঠকে আসতে বলা হয়।
বৈঠক শুরুর প্রায় আধ ঘণ্টা পর আইনজীবী হেবার্টকে জানানো হয়, দুই সন্তানসহ ওই মাকে আটক করা হয়েছে।
আটক করে তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, হেবার্টের এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি অভিবাসন কর্মকর্তারা।
পরে এই আইনজীবী জানতে পারেন, শুক্রবার সকালে তাদের উড়োজাহাজে করে হন্ডুরাসে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, “আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমার মক্কেলদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিচালক আলানাহ অডোমস বলেন, “যাদেরকে বিতাড়িত করা হলো, তাদের মধ্যে অসুস্থ শিশুও ছিল।
“এই দুই মা আর তাদের সন্তানদের সঙ্গে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যদি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগ এ ধরনের কাজ করতে পারে, তাহলে আমরা কেউই এহেন অরাজকতা থেকে নিরাপদ নই।”