কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে কারা আক্রমণ করতে চাইছে, তা জানতেই তাদের ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়োন্দা (ডিবি) শাখার হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের পরই তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গিরা ভাঙ্চুর, অগ্নিসংযোগ করেছে; তাদের টার্গেট ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। তারা পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমন চালিয়েছে। থানা পুড়িয়েছে।
“যখন পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি পারছিলেন না, তখন আমরা বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সেনা মোতায়েন করেছি।”
মন্ত্রী বলেন, “একদল গুজব ছড়িয়েছে, আরেক দল আক্রমন করেছে। জঙ্গিরা নরসিংদীর কারাগারসহ বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র লুট করে পুলিশ ও বিজিবির ওপর আক্রমন করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দক্ষ ও দেশপ্রমী, তাই তারা কোনও ভয় করে না। আমরা বিশ্বাস করি, সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”
কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তাদের মধ্যে একজন তার বাবাকে ফোন করে জানিয়েছে আত্মগোপনের কথা। তা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে। তাই তাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাদ করা হচ্ছে, কারা তাদের আক্রমন করতে চায়। পরবর্তীতে তাদের বিষয়ে সিদান্ত নেওয়া হবে।”
মন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের কাছে আন্দোলনকারীদের নেতারা নতুন করে যে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছে, সেগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেই সুযোগ তারা দেয়নি।
তিনি বলেন, “পুলিশ অনেক ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো মেকাবেলা করেছে। বাচ্চাদের মনোবল হিসেবে ব্যবহার করেছে, তাই পুলিশ সময় নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। যারা গুজব ছড়িয়ে, তার বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
“বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গি, যারা স্বাধীনতা চায়নি, তারা দেশের সম্পদ পুড়িয়েছে। এরা মানুষের শত্রু, দেশের শত্রু। এরা সেতু ভবন, বিটিভি, বিআরটিএ ভবন, মেট্রো রেলের নানা স্থাপনাসহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়েছে। লুটপাট করেছে। থানায় আক্রমনের চেষ্টা চালিয়েছে। সাইনবোর্ডে পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। মা হাসপাতালে তাদের দেওয়া আগুনে তিনজন পুড়ে মারা গেছে।”
পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থপনার তালিকা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে তারা দেশের শত্রু। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে, দ্রুত দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।”
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার যাত্রাবাড়ি-শনিআখড়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা পিবিআই কার্যালয়, পাসপোর্ট অফিস, শিল্প পুলিশের ক্যাম্প ও শিমরাইলের মা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় পুলিশের মহাপরির্দশক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।