Beta
শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

২০ বছর ধরে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারিতে মিজান

ss-mijaz-ticket-22-3-24
[publishpress_authors_box]

রোজার ঈদ ঘিরে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারিতে জড়িত একটি চক্রের নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাব বলছে, চক্রটির প্রধান ৪৮ বছর বয়সী মো. মিজান ঢালী ২০ বছর ধরে কমলাপুর স্টেশনে রেলের টিকেট কালোবাজারি করে আসছিলেন।

শুক্রবার কারওয়ান বাজারে ‍র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।

বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঈদের আগে টিকেট কালোবাজারি ঠেকাতে অভিযানে নেমে বৃহস্পতিবার মিজান ঢালীসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিজান ২০০৩ সাল থেকে কমলাপুরে চাকরি করার সুবাদে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির এই সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, দুই দশকে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট বিক্রির পদ্ধতি ও অপারেটর বদলেছে কয়েকবার। বদলাননি কেবল কমলাপুর রেল স্টেশনের মিজান ঢালী। সর্বশেষ টিকেট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমের অফিস সহকারী ছিলেন মিজান ঢালী। সহজের আগে যেসব প্রতিষ্ঠান রেলের টিকেট বিক্রির দায়িত্বে পেয়েছে, তার সবকটিতেই কাজ করেন মিজান। ২০০৩ সাল থেকে এভাবে কমলাপুরে থেকে গড়ে তুলেছেন টিকেট কালোবাজারি চক্র।

মিজান চক্রে যারা

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মিজান ঢালীর ভাতিজা সহজ ডটকমের কমলাপুর স্টেশনের অফিস সহকারী সোহেল ঢালী (৩০), সহজের স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ সবুর হাওলাদার (৪০), সহজের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের অপারেটর নিউটন বিশ্বাসকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ চক্রের গ্রেপ্তার অপর পাঁচজন হলেন মো. সুমন (৩৯), জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), শাহজালাল হোসেন (৪২), মো. রাসেল (২৪) ও জয়নাল আবেদীন (৪৬)। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টিকেট জব্দ করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

যে কারণে গ্রেপ্তার হতো না মিজান 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ২০০৩ সাল থেকে মিজান টিকেট কালোবাজারি করে আসছেন। তবে রেলের কর্মী হিসেবে পরিচয় থাকায় গ্রেপ্তার হননি। আট বছর আগে নিজের ভাতিজা সোহেল ঢালীকেও এ পথে নিয়ে আসেন তিনি। চক্রের সদস্যরা প্রতিদিন পাঁচশর বেশি টিকেট কালোবাজারি করত।

রোজার ঈদ সামনে রেখে আগামী ২৪ মার্চ থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে অনলাইনে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই রোজার ঈদ ঘিরে মিজান ও তার সহযোগীরা প্রায় তিন হাজার টিকেট কালোবাজারে বিক্রি করতে চেয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব আরও জানায়, ২০০৩ সালে রেলের টিকেট বিক্রিতে চুক্তিবদ্ধ হয় ড্যাফোডিল নামে একটি কোম্পানি। সেখানে কমলাপুর রেল স্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেন মিজান। পরে রেল চুক্তিবদ্ধ হয় সিএনএস বিডির সঙ্গে। অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে সেখানেও চাকরি পান মিজান। সবশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকেট বিক্রির কাজ পায় সহজ ডটকম। সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে।

র‌্যাব বলছে, টিকেট বিক্রির কাজ যখন এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানির হাতে যায়, তখন পুরনো প্রতিষ্ঠানের ৮০ শতাংশ কর্মীর চাকরি বহাল থাকবে- এরকম শর্ত যুক্ত থাকায় মিজান বারবার চাকরি পেয়ে যান। দীর্ঘদিন কমলাপুর স্টেশনে চাকরি করায় সারা দেশে রেলের বড় বড় কর্মকর্তা, রেলের খুঁটিনাটি সব জানা মিজানের।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন জানান, রেলের বড় কর্মকর্তাদের পরিচয়ের সূত্র ধরেই মিজান সারা দেশের স্টেশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কালোবাজারি করতেন। সহজের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের অপারেটর নিউটন বিশ্বাসসহ অন্যরা বিভিন্নভাবে তাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতেন।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি ট্রেনের ২ শতাংশ টিকেট সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়। ট্রেন ছাড়ার ১২ ঘণ্টা আগে সেগুলো সার্ভারে ওপেন করে দেওয়া হয়। আর সেই খবর আগেভাগেই পেয়ে যেতেন মিজান। তার ভাতিজা সোহেল অনলাইন থেকে বা রেল স্টেশনে সহজ ডটকমের অফিসে বসে কিংবা রেলের কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে ওই টিকেটগুলো সংগ্রহ করে ফেলতেন। এরপর সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করা হতো।

এছাড়া কোনও টিকেটের বুকিং বাতিল হলে সেটাও সার্ভার রুম থেকে জানিয়ে দেওয়া হতো মিজান সিন্ডিকেটের লোকজনকে। এভাবেই ট্রেনের টিকেটগুলো ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গায়েব হয়ে যেত।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, “টিকেট বিক্রির টাকা যেত দুই ভাগে। অর্ধেক পেতেন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সহজ ডটকমের কর্মী ও স্টেশনের কাউন্টার ম্যানরা। বাকিটা পেতেন মিজান ও সোহেলরা। এই অর্থ কখনও তারা হাতে-হাতে বুঝে নিতেন, আবার কখনও মোবাইলেও লেনদেন করতেন।

“সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকে এভাবে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে গত ছয় মাসে ৯৮ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।”

ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ দিনগুলো ঘিরে মিজান ও তার সহযোগীরা অনেক বেশি টিকেট সংগ্রহ করতেন বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত