দেড় দশক আগে ফ্রান্সের গিমে মিউজিয়ামে নেওয়ার সময় ভেঙে ফেলা হয়েছিল প্রাচীন একটি বিষ্ণু মূর্তি। তার অনুরূপ শিল্পশৈলীর আরেকটি বিষ্ণু মূর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার টিঘর গ্রামের একটি প্রাচীন জলাধারে।
দুই বছর আগে টিঘর গ্রামে পাওয়া কাঠের বিষ্ণু মূর্তিটি কমপক্ষে দেড় হাজার বছর পুরনো শিল্পরীতির নিদর্শন বলে অভিমত মূর্তিতত্ত্ববিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের।
গিমে মিউজিয়ামে নেওয়ার সময় যে বিষ্ণু মূর্তিটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল, সেটি ছিল মাটির তৈরি। টিঘরে পাওয়া মূর্তিটি কাঠের।
বিষয়টির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে প্রবীণ মূর্তিতত্ত্ববিদ ও বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মোহা. মোশারফ হোসেন বলছেন, তার মানে হতে পারে পূর্ববঙ্গে পাথরের মূর্তি তৈরি শুরু হওয়ার আগেই কাঠের মূর্তি তৈরির রেওয়াজ ছিল।
মনে করা হচ্ছে, পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গে এ পর্যন্ত পাওয়া প্রাচীনতম ২/১টি মূর্তির একটি টিঘরের বিষ্ণু মূর্তিটি। মূর্তিটির সুনির্দিষ্ট সময়কাল নিয়ে অবশ্য গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কোনও কোনও গবেষক বলছেন, টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটি গুপ্ত শিল্পকলার নিদর্শন। আবার কেউ এটাকে দেখছেন কুষাণ যুগের নিদর্শন হিসাবে।
গুপ্ত যুগের হোক কিংবা কুষাণ যুগের হোক, প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটি কমপক্ষে দেড় সহস্রাধিক বছর আগে সরাইল অঞ্চলে সমৃদ্ধ জনপদের অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের প্রচলিত বেশ কিছু ধারণাকে। আবার যুক্ত করছে নতুন নতুন মাত্রাও।
বাংলাদেশের, বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্ববঙ্গের প্রাচীন ইতিহাস পুনর্পাঠে টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত মূর্তিতত্ত্ববিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদদের।
সরাইলে এর আগে আরও দুটি পাথরের প্রাচীন বিষ্ণু মুর্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে অষ্টম শতকের নিদর্শন ‘দশাবতারসহ বিষ্ণু মূর্তি’ সরাইল উপজেলা সদরে আনন্দময়ী কালীবাড়িতে এবং দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতকের নিদর্শন অন্য বিষ্ণু মূর্তিটি সরাইলের কালীকচ্ছ ইউনিয়নের একটি কালী মন্দিরে সংরক্ষিত আছে।
কী বলছেন মূর্তিতত্ত্ববিদরা
জার্মান মূর্তিতত্ত্ববিদ ড. গেয়ার্ড জে. আর. মেভিসেনকে টিঘর বিষ্ণু মূর্তির ছবি পাঠিয়ে মতামত চাইলে তিনি ফিরতি ইমেইলে বলেন, “কাঠের এই বিষ্ণু মূর্তিটি বেশ পুরনোই মনে হচ্ছে। এটা আমাকে বাংলাদেশে পাওয়া আরও কিছু প্রাচীন বিষ্ণু মূর্তির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, যেগুলোর কথা গৌরীশ্বর ভট্টাচার্যের ২০১৪ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধে রয়েছে।”
প্রাচীন বঙ্গের মূর্তিতত্ত্ব চর্চায় বিশ্বখ্যাত পণ্ডিত গৌরীশ্বর ভট্টাচার্য বাংলায় প্রাপ্ত গুপ্ত আমলের মূর্তিগুলো নিয়ে লিখেছেন, ‘A Magnificent Gupta Terracotta Vasudeva-Vishnu image from the David Nalin Collections’ শীর্ষক প্রবন্ধ। বেলজিয়াম থেকে ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘Changing Forms and Cultural Identity Religious and Secular Iconographies Vol 1 South Asian archeology and art’ শীর্ষক গ্রন্থে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রবন্ধটিতে ড. ভট্টাচার্য গিমে মিউজিয়ামে নেওয়ার সময় ভেঙে ফেলা প্রাচীন মূর্তিটি সম্পর্কেও বিশদ বিবরণ দেন।
বগুড়ার রজকপুরে প্রাপ্ত এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত বিষ্ণু মূর্তিটি ফ্রান্সের গিমে মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। ২০০৭ সালের ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ফ্রান্সে নেওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দরের টারমাক থেকে রজকপুর বিষ্ণু মূর্তিটি খোয়া যায়। পরে ২৮ ডিসেম্বর মূর্তিটির কিছু ভাঙা টুকরো উদ্ধার করা হয়েছিল।
বগুড়ার রজকপুরে পাওয়া মাটির তৈরি বাসুদেব-বিষ্ণু মূর্তিটির সময়কাল নিয়েও গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন মূর্তিটি তৃতীয়-চতুর্থ শতকের; কেউ কেউ মনে করেন, এটি ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের। মূর্তিটির দৈর্ঘ্য ৭০ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৩৬ সেন্টি মিটার এবং বেড় ১৪ দশমিক ৫ সেন্টি মিটার।
বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের মূর্তিতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ড. ক্লডিন বাউস পিকরোঁকে টিঘর বিষ্ণু মূর্তির আলোকচিত্র পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণ ও মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল।
তিনি ইমেইলে পাঠানো তার অভিমতে বলেন, টিঘরের এই বিষ্ণু মূর্তির সঙ্গে মিউজিয়ামে পাঠাতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া বগুড়ার রজকপুরের বিষ্ণু মূর্তি এবং ভারতের বিহারের ভাগলপুরে পাওয়া সিংহরূপী বিষ্ণু মূর্তির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
কীভাবে পাওয়া গেল, এখন আছে কোথায়
কাঠের বিষ্ণু মূর্তিটি পাওয়া গেছে সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের টিঘর গ্রামের টিঘর দীঘি নামে পরিচিত এক বিশালাকার জলাধার থেকে। টিঘর দীঘি খননকালে ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল এটি পাওয়া যায়। দীঘির দক্ষিণ-পূর্ব অংশে মাটি কাটার যন্ত্র ভেকু’তে (backhoe) উঠে এসেছিল মূর্তিটি।
খবর পেয়ে সরাইল থানা কর্তৃপক্ষ মূর্তিটি থানায় নিয়ে রাখে এবং ওইদিনই একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচার বিভাগীয় হাকিম আদালতের নির্দেশনায় সরাইল থানা কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের ৩১ মে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মূর্তিটি হস্তান্তর করে।
প্রাচীন স্থাপত্য বিশেষত শিলালিপি ও মূর্তি নিয়ে গবেষণা করছে ‘ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি’। কমিটি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটির আলোকচিত্র ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলী চেয়ে আবেদন করে।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর টিঘর বিষ্ণু মূর্তি বিষয়ে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটিকে জানায়, টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটির দৈর্ঘ্য ৩৪ দশমিক ৫ সেন্টি মিটার এবং উরু বরাবর অংশের বেড় ২৯ দশমিক ৫ সেন্টি মিটার । ওজন ৯০০ গ্রাম। মূর্তিটির তিন হাত ভাঙা। নিচের বাম হাতে রয়েছে চক্র।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কমিটিকে আরও জানায়, মূর্তিটি সংগ্রহে আসার পর অধিদপ্তরের রাসায়নিক ল্যাবরেটরিতে উপকরণ শনাক্তকরণের জন্য রাসায়নিক পরীক্ষা করে। রাসায়নিক পরীক্ষার পর অধিদপ্তরের প্রত্নবস্তু শনাক্তকরণ কমিটি কর্তৃক মূর্তিতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মূর্তিটি পুরাকীর্তি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। মহাপরিচালকের আদেশে এরপর থেকে মূর্তিটি অধিদপ্তরের প্রত্ন স্টোরে রাখা আছে।
ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “টিঘর বিষ্ণু মর্তিটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।’’
“সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন মূর্তিটি গুপ্ত আমলের হতে পারে। অথবা একটু আগে-পরের হতে পারে। মূর্তিটির সময়কাল ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।”
মূর্তিটি কত আগের
পণ্ডিতদের মতে বেদে উল্লিখিত দ্বাদশ-আদিত্যের অন্যতম হচ্ছেন বিষ্ণু। তবে বৈদিক যুগে বিষ্ণু প্রধান দেবতা ছিলেন না। পুরাণ ও মহাকাব্যের যুগে বিষ্ণু অন্যতম প্রধান দেবতায় পরিণত হন। সৃষ্টি-পালন-সংহারের ত্রিতত্ত্বে বিষ্ণু পালনকর্তা।
ভারতে মূর্তিকলা চর্চার প্রায় সূচনা পর্ব থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত বিষ্ণু ও বিষ্ণুর অবতার বিশেষত দশাবতারের বিভিন্ন রূপের মূর্তি পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থানে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত পাথর, কাঠ ও ধাতব নির্মিত প্রাচীন মূর্তির মধ্যে বিষ্ণু মূর্তির সংখ্যাই বেশি। গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বিষ্ণু মূর্তির সংখ্যা দুই সহস্রাধিক।
দণ্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শয়ান—তিন ধরনের প্রাচীন বিষ্ণু মূর্তির সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে আবার দণ্ডায়মান চতুর্ভুজ মূর্তির সংখ্যাই বেশি। কুষাণ ও গুপ্ত আমলে দণ্ডায়মান বিষ্ণুর চার হাতই নিম্নাভিমুখী ভঙ্গিতে বিন্যস্ত থাকত। গুপ্ত আমল অবসানের পর ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে বিকাশ লাভ করে মূর্তিকলা চর্চার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র। তখন বিষ্ণুর চার হাত নিম্নাভিমুখী বিন্যস্ত রাখার প্রবণতারও অবসান ঘটে।
ড. ক্লডিন বাউস পিকরোঁ টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটিকে ‘খোদাই শিল্পের অনন্য নজির’ হিসাবে বর্ণনা করছেন।
তিনি বলেন, “চমৎকার এই নিরাবলম্ব মূর্তিটি সম্ভবত পঞ্চম শতকের শেষদিকের কিংবা ষষ্ঠ শতকের। এখানে বিষ্ণুর পুরু ঠোঁটে স্মিত হাসি গুপ্ত যুগের নির্মাণ শৈলীর সমরূপ, সুণিপূণভাবে গড়ন দেওয়া দেহকাণ্ড, নিতম্বের কাছ থেকে মার্জিতভাবে বেঁকে যাওয়া দেহ, প্রশস্তভাবে ছড়ানো পা, আগে বাড়ানো বাম পা: এমন সব উপাদান এই মূর্তিটিতে যেন প্রাণসঞ্চার করেছে।”
ড. পিকরোঁ আরও বলেন, “তখনকার প্রথা অনুসারে এই দেবতার চার বাহুই নিম্নমুখীভাবে বিন্যস্ত। টিকে থাকা একটি মাত্র বাম হাতে চক্র ধরা আছে, যা বিষ্ণুর অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বহন করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাকি বৈশিষ্ট্যগুলো ভেঙে গেছে: দ্বিতীয় প্রধান বৈশিষ্ট্য বিষ্ণুর হাতে থাকা গদাটি অবশ্যই দেবতার ডান দিকে ভূমিতে দণ্ডায়মান ছিল, আর বাকি দুই হাতে ধরা ছিল শঙ্খ ও ফল।”
ইতিহাস পুনর্গঠনে মূর্তিটির গুরুত্ব
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মোহা. মোশারফ হোসেন বলেন, রজকপুরের বিষ্ণু মূর্তি এবং টিঘরের বিষ্ণু মূর্তির মধ্যে শৈলীগত মিল রয়েছে। তবে রজকপুর বিষ্ণু মাটির তৈরি ছিল। অন্যদিকে টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটি কাঠের তৈরি।
টিঘরের মূর্তির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “ইতোপূর্বে পূর্ববঙ্গে আরও ২/১টি কাঠের প্রাচীন মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে কাঠের তৈরি প্রাচীন মূর্তির সন্ধান সাধারণত পাওয়া যায় না। উত্তরবঙ্গে পাওয়া যায় মাটির তৈরি মূর্তি। উত্তরবঙ্গে রয়েছে আঠালো এক ধরনের মাটি, যা দিয়ে প্রাচীনকালে তৈরি করা হতো মূর্তি। পাথরের মূর্তি তৈরির আগে সেখানে মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরির প্রচলন ছিল।’’
“অন্যদিকে টিঘরে কাঠের বিষ্ণু মূর্তি প্রাপ্তির ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে, পূর্ববঙ্গে পাথরের মূর্তি তৈরির শুরু হওয়ার আগে কাঠের মূর্তি তৈরির রেওয়াজ ছিল।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মূর্তিতত্ত্ব গবেষক শারমিন রেজোয়ানা টিঘর বিষ্ণু মূর্তি সম্পর্কে বলেন, “এই প্রতিমার টিকে থাকা হাতে (নিচের বাম হাত) চক্র আর বুকের শ্রীবৎস চিহ্নের কারণে এটি যে বিষ্ণু প্রতিমা তা বলা যায়। পোশাকের ধরনে কুষাণ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ধারণা করছি এর নির্মাণ কাল ৪/৫ম শতক।”
মূর্তিতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোকাম্মেল এইচ ভূইঞার কাছে টিঘরের মূর্তিটি গুপ্ত যুগের নির্দেশন বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে দেড় সহস্র বছর প্রাচীন মূর্তির সন্ধান এখন পর্যন্ত খুব কম পাওয়া গেছে। টিঘরে প্রাপ্ত বিষ্ণু মুর্তিটি এ অঞ্চলের ভাস্কর্য চর্চার সূচনা পর্বের নিদর্শন। টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটিকে গুপ্ত যুগের নিদর্শন বলে মনে হচ্ছে। খ্রিস্টীয় ৫ম-৬ষ্ঠ শতকের হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ধারণা পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরনো মূর্তি হংকংয়ে রক্ষিত সমতট অঞ্চলে প্রাপ্ত কাঠের বিষ্ণু মূর্তিটি এবং টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটি। পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গের প্রাচীন শিল্পকলা অধ্যয়নে টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন।”
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, “প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী পূর্ববঙ্গে মূর্তিতত্ত্বের চর্চা শুরু হয়েছিল সপ্তম শতকের শুরুতে। কিন্ত টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটি সাক্ষ্য দিচ্ছে, পূর্ববঙ্গে মূর্তিশিল্প চর্চা শুরু হয়েছিল এর অনেক আগেই। পূর্ব বাংলায় পাথর দিয়ে মূর্তি তৈরির আগে কাঠের মূর্তি তৈরির প্রচলন ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী কুষাণ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল বারাণসী পর্যন্ত। কিন্তু সরাইলে প্রাপ্ত টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটি এই ধারণা সম্পর্কে প্রশ্ন তৈরি করেছে। কুষাণ সাম্রাজ্য পূর্ববঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল কি না, টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটির সন্ধান পাওয়ার ঘটনার পর তা নতুন করে ভাবার অবকাশ সূচিত হয়েছে।”
মোশাররফ হোসেন জানান, সরাইল উপজেলা, সরাইলের উত্তরে নাসিরনগর উপজেলা এবং দক্ষিণে নবীনগর উপজেলা— মেঘনা নদী সংলগ্ন পূর্ব দিকে এই তিনটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এর আগে দ্বাদশ শতক থেকে অষ্টম শতকের পাথরের মূর্তি সন্ধান পাওয়া গেছে।
“টিঘর বিষ্ণু মূর্তির সন্ধান পাওয়ার পর ধারণা হচ্ছে, কুমিল্লার ময়নামতির সমান্তরালে মেঘনা নদীর পূর্বতীরে প্রাচীনকালে সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। মেঘনা নদীর পূর্ব তীরের গ্রামগুলোতে প্রাচীনকালে গড়ে উঠেছিল সমৃদ্ধ জনপদ।”
শিল্পরীতির নিরিখে টিঘর বিষ্ণু মূর্তির বিশেষত্ব
কুষাণ আমলে (খ্রি. ৪৫-২২৮) দিল্লি ও আগ্রার মধ্যবর্তী অঞ্চল মথুরাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা শিল্পরীতি ‘মথুরা রীতি’ নামে পরিচিত। গান্ধার শিল্পরীতিতে নির্মিত অধিকাংশ মূর্তি বৌদ্ধ মহাযান মতের। আর মথুরা রীতিতে নির্মিত অধিকাংশ মূর্তি ছিল হিন্দু মূর্তিতত্ত্বের।
হিন্দু মূর্তিতত্ত্বের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে মূলত মথুরাকে কেন্দ্র করে। কুষাণ রাজত্ব অবসানের পর মথুরা রীতিতে শিল্পচর্চায় ভাটা আসে, উত্থান ঘটে সারনাথ কেন্দ্রের। গুপ্ত আমলে (খ্রি. ৩য়-৬ষ্ঠ শতক) রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সারনাথ রীতি হয়ে উঠে ভারতের মূর্তিকলা চর্চার প্রধান ও সবচেয়ে প্রভাবশালী ধারা। ভারতীয় মূর্তিকলা চর্চায় গুপ্ত আমলকে বলা হয় ধ্রুপদী যুগ।
প্রবীণ মূর্তিতত্ত্ব গবেষক মোশারফ হোসেন বলেন, “মথুরা রীতির মূর্তির সঙ্গে সারনাথ রীতিতে তৈরি মূর্তির কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে। আবার ধুতির নিচের অংশের আকৃতি, কোমরবন্ধ, দেহের আনুপাতিক অসম ভারসাম্য ইত্যাদি বিষয়ে কুষাণ যুগের মথুরা রীতি ও গুপ্ত যুগের সারনাথ রীতির মধ্যে অমিল দেখা যায়। টিঘর বিষ্ণু মূর্তিটি গুপ্ত যুগের নয়, কুষাণ যুগের মথুরা রীতির বৈশিষ্ট্য বহন করছে।”
তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, “কুষাণ যুগে মথুরা শিল্পশৈলী অনুযায়ী নির্মিত মূর্তিতে ধুতির নিচের অংশ থাকে ত্রিভুজাকৃতি। আর গুপ্ত যুগ শুরু হওয়ার পর ধুতির নিচের অংশ ক্রমশ সোজা হয়ে যায়। টিঘর বিষ্ণু মূর্তির ধুতির নিচের অংশ সোজা নয়— কৌণিক। ধ্রুপদী গুপ্ত যুগের মূর্তিতে দেহের সুষম আনুপাতিক ভারসাম্য থাকে। কিন্তু কুষাণ যুগের মূর্তিতে দেহের আনুপাতিক ভারসাম্য তত সুষম নয়। টিঘর বিষ্ণুতে দেখা যায়, কোমরের উপরের অংশের তুলনায় নিচের অংশের দৈর্ঘ্য আনুপাতিকভাবে বেশি। পা দুটিও আনুপাতিকভাবে চিকন। বিভিন্ন মিউজিয়ামে রক্ষিত কুষাণ যুগের মথুরা শিল্পরীতিতে নির্মিত মূর্তিসমূহে আকৃতিতে আনুপাতিক অসম ভারসাম্য থাকার বৈশিষ্ট্যটি দেখা যায়। এছাড়াও টিঘর বিষ্ণু মূর্তির কোমরের কটিবন্ধ কুষাণ শিল্পরীতির সাক্ষ্য বহন করছে।”
টিঘর দীঘির ভৌগলিক অবস্থান
বাংলাদেশের প্রাচীন সমৃদ্ধ জনপদসমূহে সাধারণত বিভিন্ন আকৃতির ছোটবড় পুকুর ও দীঘির অস্তিত্ব দেখা যায়। সাধারণত প্রাসাদ কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ধর্মীয় স্থাপনার সঙ্গেই দেখা যায় বড় দীঘি ও একাধিক পুকুর। অনেক ক্ষেত্রে স্থাপনাগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও দীঘি-পুকুর রয়ে যায় ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে। এসব জলাধারকে ঘিরে গড়ে ওঠা বসতির পরিবর্তন হয় ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বে।
সরাইলের টিঘর গ্রামটিও মূলত দীঘিকেন্দ্রিক। দীঘিকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে গড়ে উঠেছে বসতি। বসতিগুলো পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়া নামে পরিচিত। দীঘির পরিপ্রেক্ষিতে বসতির অবস্থানের ভিত্তিতে এমন নামকরণ।
মেঘনা নদী থেকে প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে টিঘর দীঘিটি। আর টিঘর গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে সরাইল উপজেলা সদরের অবস্থান। টিঘর গ্রামের চারপাশে প্লাবন সমভূমি। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অংশজুড়ে বিস্তৃত হাওরের অংশ এই টিঘর গ্রাম। বছরে শুকনা মৌসুমে ৬ মাস গ্রামের চারপাশের জমিতে চাষাবাদ হয় আর বর্ষা মৌসুমে ৬ মাস গ্রামের চারপাশ পানিতে ডুবে থাকে। প্লাবন সমভূমিতে এক উঁচু ভূখণ্ডের গ্রাম টিঘরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে টিঘর দীঘি।
টিঘর গ্রামে সুবৃহৎ দীঘিটির চারপাশেই রয়েছে ছোট বড় অনেকগুলো পুকুর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০২২ সালে টিঘর দীঘি খননের সময় গ্রামের ৬টি পুকুর ভরাট করা হয়। ভরাট করা পুকুরের মধ্যে তিনটি দীঘির দক্ষিণ দিকে ছিল। গুগল আর্থ ২০২১ সাল বা আগের স্যাটেলাইট ইমেজগুলোতে টিঘর দীঘির দক্ষিণ পাড়ের পাশেই তিনটি পুকুরের অস্তিত্ব দেখা যায়। কিন্তু সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে এবং টিঘর দীঘি খননের পরের স্যাটেলাইট ছবিতে দক্ষিণ দিকের পুকুরের স্থান ভরাট দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীঘির মাটি দিয়ে পুকুর ভরাট করায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে দীঘির পাড়ে। দীঘিটির সংস্কার কাজ সম্প্রতি শেষ হলেও ইতোমধ্যে বেশ কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, দীঘিটির দক্ষিণ-পূর্ব কোণ সম্পূর্ণ রূপে ভেঙে গেছে। পাড় সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে উত্তর পূর্ব দিকেও। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ঠিকাদাররা খননের সময় লোভের বশে দীঘির মাটি নিয়ে ব্যবসা করেছে। ড্রেজার দিয়ে মাটি তুলে বিক্রি করেছে। দীঘিটি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গভীর হয়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে মাটি ধসে যাচ্ছে।
দীঘিটির চার পাড়ই ক্রমশ ধসে দীঘিতে পড়ে যাবে বলে গ্রামবাসীদের আশঙ্কা। তারা বলছেন, দেয়াল তৈরি না করা হলে পাড় থাকবে না।
টিঘর গ্রামটি পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে। পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও টিঘর গ্রামের বাসিন্দা লায়েচ মিয়া জানান, টিঘর দীঘিটি সরকারি খাস জমি এবং এর আয়তন ১৭.৯৫ একর।
তিনি বলেন, “শৈশবে আমরা দেখেছি টিঘর দীঘির পাশে বিশেষত দক্ষিণপাড়ায় মাটি খুঁড়লেই পাওয়া যেত মৃৎ পাত্রের বিভিন্ন ধরনের টুকরো। এসবের উপর এখন বসতি গড়ে উঠেছে।”
সরাইলের প্রাচীন বসতি, পানির শহর ও টিঘর দীঘি
সরাইল প্রাচীন জনপদ। তবে প্রাচীনকাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরাইলের ইতিহাস পাওয়া যায় না। সুলতানি ও মুঘল আমলের বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে সরাইলের উল্লেখ আছে।
সরাইল বিখ্যাত হয়ে ওঠে বারো ভূঁইয়ার আমলে। বারো ভূঁইয়াদের নেতা ঈশা খাঁ সরাইলে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তরুণ বয়সে ঈশা খাঁ সরাইলের জমিদার হন এবং এরপর ক্রমান্বয়ে জমিদারির এলাকা বিস্তৃত করেন।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘বাংলাপিডিয়া’য় এ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়, ঈশা খাঁ ১৫৮১-৮২ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে ভাটি অঞ্চলের অধিপতি হিসেবে ঘোষণা দেন এবং নিজেই ‘মসনদ-ঈ-আলা উপাধি’ গ্রহণ করেন। সূত্র অনুযায়ী, এ সময় তিনি তার প্রশাসনিক কেন্দ্র সরাইল থেকে সোনারগাঁওয়ে স্থানান্তর করেন।
পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বাংলার বারো ভূঁইয়াদের নেতা ইশা খাঁর যুদ্ধ জাহাজসমূহ নোঙর করা থাকত পানিশ্বরে মেঘনা নদীতে। রাতের বেলায় নোঙর করা সারিবদ্ধ জাহাজের আলোকে দূর থেকে দেখতে মনে হতো শহরের মতো। যেন পানির উপর শহর। ‘পানির শহর’ শব্দবন্ধ থেকে অঞ্চলটির নাম ‘পানিশ্বর’ হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
পানিশ্বরের ভৌগোলিক অবস্থানও যুদ্ধজাহাজ নোঙর করার উপযোগী। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, প্রাচীন বঙ্গে দুর্গ বা সামরিক ঘাঁটি গড়ে উঠত সাধারণত খাল ও নদীর সংযোগস্থলগুলোতে। নৌবহর নোঙর করা থাকত নদী ও খালের সংযোগস্থলের সামরিক ঘাঁটিতে। পানিশ্বরে রয়েছে এ ধরনের একটি সংযোগস্থল। সরাইল থেকে একটি খাল সৈয়দটুলা, বিটঘর হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হতো পানিশ্বরে। টিঘর গ্রামের প্রায় ৪০০ মিটার দক্ষিণ দিকে খালটির অবস্থান।
বিগত শতকের আশির দশকে আশুগঞ্জ-সরাইল মহাসড়ক চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত সরাইল-পানিশ্বর খালটি ছিল সরাইলবাসীর যাতায়াতের অন্যতম প্রধান নৌপথ। সৈয়দটুলা গ্রামের বাসিন্দা কবি আশেক জুনায়েদ জানান, সরাইল-পানিশ্বর খালটি জাফর খাল নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। খালটি বর্তমানে নাব্যতা হারিয়েছে। নৌ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ময়লা-আবর্জনা জমে ভরাট হয়ে পড়েছে উল্লেখযোগ্য অংশ।
তিনি আরও জানান, সরাইলবাসী এখন আর নৌপথে চলাচল করে না। সারা বছরই তারা সড়কপথে চলাচল করে। ফলে খালটি খনন করারও কোনও গরজ দেখা যায় না।
ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষক এবং সরাইল ত্রিতাল সঙ্গীত নিকেতনের অধ্যক্ষ সঞ্জীব কুমার দেবনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, বিগত শতকের আশির দশক পর্যন্ত সরাইলের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল লঞ্চ। সরাইল থেকে পানিশ্বরে গিয়ে লঞ্চে উঠত বা পানিশ্বরে লঞ্চ থেকে নেমে সরাইল আসত মানুষ। বর্ষা মৌসুমে মানুষ সরাইল থেকে খাল দিয়ে নৌকায় পানিশ্বর আসা-যাওয়া করত। আর শুকনো মৌসুমে আসত-যেত পায়ে হেঁটে।
তিনি আরও জানান, সরাইল থেকে পানিশ্বর যাওয়ার পায়ে হাঁটার পথটি টিঘর গ্রামের উপর দিয়ে গেছে। টিঘর দীঘির উত্তর পাড়টি তখন ব্যবহৃত হতো সরাইল-পানিশ্বর চলাচলের পথরূপেও।
দীঘিটি স্থানীয়ভাবে ‘টিঘর দীঘি’ নামে পরিচিত হলেও দাপ্তরিক নাম ‘জামাল সাগর দীঘি’। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা জানান, সত্তরের দশকে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এমপি থাকাকালে দীঘিটির সংস্কার করা হয়েছিল। তখন সরাইল আন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মওলানা জামালউদ্দিনের নামে দীঘিটির নামকরণ হয়েছিল।
পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর জানান, টিঘরের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। গ্রামের মোট জনসংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রচলিত রয়েছে টিঘর গ্রামে প্রাচীনকালে বসবাস করত পাহাড়ি জাতির মানুষরা। বারো ভূঁইয়াদের সময়ে টিঘর গ্রাম থেকে পাহাড়িরা চলে যায়। এরপর হিন্দু ও মুসলিম বসতি স্থাপন হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হিন্দুদের মধ্যে শুধু মাটির পাত্র নিমার্তা কুমার সম্প্রদায়ের বসতি ছিল। পাকিস্তান আমলের শেষভাগে তারাও চলে যায়। বর্তমানে শুধু মুসলিম বসতি রয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা বলেন, টিঘর জনপদ প্রাচীন। এখানে বসতির পরিবর্তন হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। টিঘরে প্রাচীনকালে এক ‘কোচ রাজা’ বাস করতেন বলে জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। তবে টিঘর গ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে তেমন কোনও গবেষণা কাজ হয়নি।
[তরুণ সরকার একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও গবেষক]