মেঘ ছিল আকাশে। উইকেটে ঘাস। এমন কন্ডিশন পেসারদের জন্য আদর্শ। টস জিতে তাই বোলিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি বাংলাদেশি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় বলে আভিস্কা ফার্নান্ডোকে ফিরিয়ে সেই আস্থার প্রতিদানও দেন শরিফুল ইসলাম।
শেষ পর্যন্ত সেই চাপ সামলে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কা করেছে ৩ উইকেটে ২০৬ রান। সোমবার (৪ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা দুজনই করেছেন ফিফটি। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট শরিফুল, তাসকিন আহমেদ ও রিশাদ হোসেনের। ২০১৮ সালে সিলেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা করেছিল ২১০ রান। সেই ম্যাচ বাংলাদেশ হারে ৭৫ রানে।
শুরুতে গ্যালারি ছিল প্রাণহীন। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আসতে থাকেন দর্শক। ১৮ হাজার দর্শক আসনের গ্যালারিতে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তত ৭ হাজার।
শরিফুলের টাইমড আউট উদযাপন
শরিফুলের প্রথম বলটাই বাউন্ডারি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল আভিস্কার ব্যাটের কানায় লেগে যায় উইকেটের পেছন দিয়ে। তবে পরের বলেই আউট এই ওপেনার। ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাটের আউট সাইড এজে লেগে বল যায় লিটন দাসের হাতে।
দ্বিতীয় বলে উইকেট নিয়ে শরিফুল উদযাপনটা করেছেন ‘টাইমড আউট’ ভঙ্গিতে । গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের এই টাইমড আউট নিয়ে জলঘোলা হয়েছে যথেষ্ট। সেটাই উসকে দিলেন শরিফুল।
অথচ সিরিজ শুরুর আগে বলা হচ্ছিল অতীতের তিক্ততা ভুলে সিরিজেই চোখ রাখতে চায় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। কিন্তু খেলা মাঠে গড়াতেই বদলে গেল সব।
পাওয়ার প্লেতে চার বোলার
শুরুর এই চাপ সামলে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে শ্রীলঙ্কা করে ২ উইকেটে ৪৫। প্রথম ৬ ওভারে ৪ বোলার ব্যবহার করেন অধিনায়ক শান্ত।
আভিস্কা দ্বিতীয় বলে ফেরার পর ক্রিজে আসেন কামিন্দু মেন্ডিস। ডান-বাম দুই হাতেই স্পিন বল করার জন্য বিখ্যাত তিনি। ১৪ বলে ১ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় কামিন্দু থামেন ১৯ রানে। তাসকিন আহমেদের লেংথ বল টেনে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে সৌম্য সরকারের তালুবন্দি এই তরুণ।
দারুণ শুরুর পর খরুচে রিশাদ
প্রথম ওভারে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের খরচ ৩ রান। দ্বিতীয় ওভারে তিনি দেন ৬। প্রথম দুই ওভারে ৯ দিলেও অন্য স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান ছিলেন খরুচে। এলোমেলো বোলিংয়ের খেসারত দিয়ে তার প্রথম ২ ওভারে লঙ্কানরা তোলে ২৪ রান। প্রথম ১০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৭৮ রান।
রিশাদের শুরুটা ভালো হলেও দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম ওভারে দেন ১৮ রান। শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে ৩২ রানে নেন ১ উইকেট।
মেন্ডিস-সামারাবিক্রমার জুটি
পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন ওপেনার কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। দুজন তৃতীয় উইকেটে গড়েন ৯৬ রানের জুটি। ফিফটি করেছেন দুজনই।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ খেলা তিন ম্যাচের সিরিজে ব্যাট হাসেনি কুশল মেন্ডিসের। তার তিন ইনিংস ১৬, ২৩ ও ১০। সেই কুশল সিলেটে ফিফটি করেন ২৮ বলে। রিশাদের করা ১২তম ওভারের একটি বাউন্ডারির পর মারেন টানা দুই ছক্কা।
রিশাদের ঠিক পরের ওভারে শরিফুলের খরচ ২১ রান। তাতে রান রেটের পালে লাগে নতুন হাওয়া।
জীবন পান কুশল
শ্রীলঙ্কার ঝড় থামাতে শান্ত আক্রমণে আনেন সৌম্য সরকারকে। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটও পেয়ে যেতে পারতেন তিনি। টপ-এজড হয়েছিলেন কুশল। পেছনে ছুটলেও বলের গতিপথ বুঝে উঠতে পারেননি লিটন দাস।
বল গ্লাভসে পেলেও ধরে রাখতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। কুশল জীবন পান ৫৬ রানে। শেষ পর্যন্ত ৫৯ রানে ফিরেন তিনি। রিশাদের বল উড়িয়ে মারতে যেয়ে লং অফে মাহমুদউল্লাহর তালুবনন্দি এই ব্যাটার। শেষ হয় ৩৬ বলে ৬ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় তার ৫৯ রানের ইনিংসটি।
শেষ ৫ ওভারে শ্রীলঙ্কার ৭০
১৫ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৩৬। তারা শেষ ৫ ওভারে তোলে ৭০। সামারাবিক্রমা অপরাজিত ছিলেন ৪৮ বলে ৬১ রানে। অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা অপরাজিত ছিলেন ২১ বলে ৪৪ করে।