গ্রিক পুরাণের শক্তিশালী দেবতা টাইটানের নামের সঙ্গে মিল রেখে বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও চোখ ধাঁধানো জাহাজের নাম রাখা হয়েছিল টাইটানিক।
১৯১২ সালে যাত্রা শুরুর মাত্র চারদিনের মাথায় হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় দুনিয়া কাঁপানো এই জাহাজ। টাইটানিক যে কোম্পানি নির্মাণ করেছিল, ১১২ বছর পর সেই হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফ দেনার দায়ে ডুবতে বসেছে।
সিএনএন জানিয়েছে, ১৬৩ বছরের পুরনো যুক্তরাজ্যের জাহাজ নির্মাণকারী কোম্পানি হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফ সোমবার নিজেই দেউলিয়া হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারেনি তারা।
কিছুদিনের মধ্যে প্রশাসকের অধীনে কার্যক্রম শুরু করার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে লোকসানি এই কোম্পানি। কোনও প্রতিষ্ঠান যখন তার দেনা শোধ করতে ব্যর্থ হয়, তখন সেই প্রতিষ্ঠান যাতে দ্রুত বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য তার পুনর্গঠনের পথ বাতলে দেয় যুক্তরাজ্য প্রশাসন। এটাই সে দেশের নিয়ম।
হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সরকারি অধিদপ্তর ইউকে এক্সপোর্ট ফিন্যান্স থেকে ২৬৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছিল তারা। যুক্তরাজ্য সরকার তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। এর ফলে তারা জটিল আর্থিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে।
হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফ এরই মধ্যে তাদের কর্মীদের জানিয়েছে, ‘অগুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম’ ও হোল্ডিং কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হবে। এই ‘অগুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের’ মধ্যে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফাস্টে তাদের ডকইয়ার্ডও (যেখানে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়) আছে। এই ডকইয়ার্ডেই সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল টাইটানিক।
বেলফাস্টের ডকইয়ার্ডে বর্তমানে যুক্তরাজ্য সরকারের তিনটি যুদ্ধজাহাজ তৈরিতে সহায়তা করছে হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফ। প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলে তা এসব যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফ বলেছে, ‘অগুরুত্বপূর্ণ’ কার্যক্রম বিক্রি করার বিষয়ে তারা বিবেচনা করছে। একই সঙ্গে নতুন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে কোম্পানিটির অন্তর্বর্তী নির্বাহী পরিচালক রাসেল ডাউনস বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে অর্থসংগ্রহ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফ।
“দুঃখজনকভাবে, অত্যন্ত কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাদের চারটি ডকইয়ার্ডের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে।”
হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফ এবারই যে প্রথম দেউলিয়া হয়েছে, তা নয়। এর আগে ২০১৯ সালেও তারা দেনার দায়ে প্রায় ডুবতে বসেছিল।
সেসময় যুক্তরাজ্যের ইনফ্রাস্ট্র্যাটা নামের একটি জ্বালানি প্রতিষ্ঠান হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফের বেলফাস্ট ডকইয়ার্ড ও তাদের সম্পদ ৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারে কিনতে রাজি হওয়ায় সে যাত্রায় রক্ষা পায় তারা।