Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

কেন টয়লেট সিটে ১০ মিনিটের বেশি বসা বিপজ্জনক

phone-in-tolet-seat
[publishpress_authors_box]

ফোন সঙ্গে নিয়ে টয়লেটে যাওয়া মানেই কমোডে বেশি সময় কাটানো। চিকিৎসকরা বলছেন, এর ফলে একজন ব্যক্তির কমোডে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস তৈরি হতে পারে। ফলে ওই ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।

টয়লেট হলো সেই জায়গা যেখানে মানুষের মন সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এটি সেই জায়গা যেখানকার পাগলামির ধরনটি কেবল আপনিই জানতে পারেন এবং আপনার একান্ত নিজস্ব।

এখনকার যুগে এটা খুব স্বাভাবিক যে, বাসায় কিংবা অফিসে টয়লেটে যাবার সময় আমরা সময় কাজে লাগানো বা কাটানোর অজুহাতে ফোনটা সঙ্গেই নিই। এর ফলাফল কী- ব্যাখ্যা করেছেন চিকিৎসকরা।

জীবাণু আক্রমণের আশঙ্কা

ফোন ওয়াশরুমে নিয়ে গেলে জীবাণু থেকে শুরু করে অনেক ক্ষতিকর জিনিস এটির সঙ্গে লেগে যেতে পারে। আমরা সবাই জানি, বাথরুমে ফোন ব্যবহারের অর্থ হলো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এর সঙ্গে লেগে যাওয়া। ফলে এটি সহজেই ওয়াশরুমের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এর থেকে পেটের পিলে হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়।

বেদনাদায়ক পাইলস

ফোন নিয়ে টয়লেট করার কারণে কমোডে অনেকেই দীর্ঘ সময় কাটান। এতে পাইলস-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মলদ্বার এবং এর আশেপাশের অংশ ফুলে যেতে পারে, যা মলত্যাগ প্রক্রিয়াকেই কষ্টসাধ্য করে ফেলতে পারে।

নয়া দিল্লির ধর্মশিলা নারায়ণ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির চিকিৎসক মহেশ গুপ্ত বলেন, “ওয়াশরুমে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা একটি ক্রমবর্ধমান সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তবে এটি নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে মলদ্বারের শিরাগুলিতে অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা হেমোরয়েডের (পাইলস) বাঁধাতে পারে। মলত্যাগের পর শরীরের স্বাভাবিক অবস্থান দ্রুত ফিরিয়ে আনা উচিত। কিন্তু মোবাইল ডিভাইস প্রক্রিয়াটিকে বিলম্বিত করে।”

অনেকেই আবার আছেন, টয়লেটে খালি হাতে ঢুকেও ‘ইউ-টার্ন’ নিয়ে বেরিয়ে আসেন ফোন নিতে।

পায়খানা শেষ হওয়ার পরও একটি বাড়তি রিল দেখা বা একটু স্ক্রলের নেশায় বাড়তি সময় আমরা কমোডে বসে থাকি। কিছু বোঝার আগেই আধঘণ্টা বাড়তি পেরিয়ে যায়। এই বাড়তি সময় বসে থাকা কোষ্ঠকাঠিন্যও তৈরি করতে পারে।

একটি চেয়ার ও কমোডে বসে থাকার মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। যদিও দুটির কোনওটিতেই দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

মুম্বাই-ভিত্তিক প্রক্টোলজিস্ট এবং অ্যানোরেক্টাল সার্জন ডা. বিলাস কেদার বলেন, “একজন প্রক্টোলজিস্ট এবং অ্যানোরেক্টাল সার্জন হিসেবে, আমি পাইলসে আক্রান্ত আমার অনেক রোগীর মধ্যে একটি সাধারণ অভ্যাস লক্ষ্য করেছি- টয়লেটে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় কাটান তারা। আর এসময় রিল, ইউটিউব ভিডিও দেখেন বা তাদের ফোনে গেইম খেলেন।”

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টয়লেট সিটে ১০ মিনিটের বেশি বসা উচিত নয়।

অন্যান্য ঝুঁকি

নয়াদিল্লির নিউবেলা সেন্টার ফর উইমেন’স হেলথ এর চিকিৎসক গীতা শ্রফ বলছেন, পাইলস ও কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও বেশিক্ষণ কমোডে বসলে পেলভিক ফ্লোর ডিসফাংশনের ঝুঁকি রয়েছে । ফোনের দিকে ঝুঁকে থাকলে পিঠ ও ঘাড়ের সমস্যাও হতে পারে।

এছাড়াও টয়লেট সিটে বসে ফোন দেখার একটি মনস্তাত্ত্বিক নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। যেটি উপেক্ষা করা যায় না।

অনেক সময়ই একজন ব্যক্তি বিক্ষিপ্ত মন শান্ত করতে অবচেতনভাবে ফোনটি টয়লেটে নিয়ে যান। এতে তার চিন্তা প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। কেননা, টয়লেটের ওই সময়টি তাকে আত্মমগ্নভাবে চিন্তা করার সুবিধা দেয়। কিন্তু ফোন নেয়ার ফলে মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়।  

মুম্বাইয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট আবসি স্যাম বলেন, “মনোসংযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদে বিপদ টেনে আনতে পারে। টয়লেটে ফোনের ব্যবহার সাময়িক স্বস্তি আনতে পারে এবং মাঝে মাঝে এটি ব্যবহার করা তেমন সমস্যাও নয়। কিন্তু এই ব্যবহার যদি বাড়তেই থাকে তাহলে যেসব মানুষ চাপে এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মধ্যে রয়েছেন, তাদের মধ্যে এড়িয়ে চলার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। বিশেষ করে, যেকোনও ট্রমায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রযোজ্য।”

সুতরাং নিজেকে সময় দিতে-বুঝতে এবং ত্যাগের মতো প্রশান্তিকর প্রক্রিয়াটিকে শারিরীকভাবে কষ্টসাধ্য না করতে, টয়লেটে ফোন না নিয়ে ঢোকাই ভালো।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত