Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

যুক্তরাজ্যে রক্ষণশীল দলের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নেতা, কে এই বেডেনক

যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি বেডেনক।
যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি বেডেনক।
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল কনজারভেটিভ পার্টি বা টোরিদের নতুন প্রধান হয়েছেন কেমি বেডেনক।

টোরিদের ইতিহাসে এই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ কেউ দলটির নেতৃত্বে এল। যুক্তরাজ্যের আরেক প্রধান দল লেবার পার্টির প্রধানের দায়িত্বে এখন পর্যন্ত কোনও কৃষ্ণাঙ্গকে দেখা যায়নি। 

শনিবার দলে ভোটে প্রতিপক্ষ রবার্ট জেনরিককে হারিয়ে ঋষি সুনাকের স্থলাভিষিক্ত হন বেডেনক।

বিবিসি জানিয়েছে, কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের লড়াইয়ে ৫৩ হাজার ৮০৬টি ভোট পান বেডেনক। অন্যদিকে দলটির ৪১ হাজার সদস্য ভোট দেয় জেনরিককে।

জয়ের পর বেডেনক তার ক্ষমতা হারানো দলকে নতুনভাবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন। উল্লসিত সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এখন আমাদের কাজে মন দেওয়ার সময়।”      

নয় বছরের কম সময়ে বেডেনককে নিয়ে ৬ জন এল কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে। তার কাঁধে এখন একটি ফাটল ধরা দলকে জোড়া লাগিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির সরকারকে মোকাবেলা করার গুরুদায়িত্ব পড়ল।

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক প্রধান ঋষি সুনাকসহ দলটির সাবেক নেতারা বেডেনককে দলীয় প্রধান নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন। সোশাল মিডিয়ায় ঋষি সুনাক বলেন, “আমি জানি, তিনি আমাদের মহান দলের অসাধারণ নেতা হবেন।”

বেডেনকের ‘সাহস ও স্বচ্ছতার’ প্রশংসা করেছেন কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক প্রধান বরিস জনসন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে বেডেনকের উদ্দেশে বলেন, “ব্রিটিশ জনগণের স্বার্থে আপনার সঙ্গে এবং আপনার দলের সঙ্গে কাজ করতে আমি উৎসুক।”

কেমি বেডেনককে অভিনন্দন জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

বেডেনকের পথচলা

লন্ডনের উইম্বলডনে ১৯৮০ সালে এক নাইজেরিয়ান পরিবারে জন্ম হয় বেডেনকের। তার বাবা ছিলেন চিকিৎসক। মা ফিজিওলজির অধ্যাপক।

বেডেনকের শৈশব কাটে নাইজেরিয়ার লাগোস শহরে। বছর কয়েক তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও ছিলেন। সেখানে তার মা এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন।

ইংল্যান্ডের সাসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেডেনক ২০০৩ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

পড়াশোনা শেষে একটি প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন বেডেনক। তিনি একজন আইনজীবীও। লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে আইনশাস্ত্রে স্নাতক করেন তিনি।

১৯৭৯-১৯৯০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের নেতৃত্ব দেওয়া ‘লৌহমানবী’ মার্গারেট থ্যাচারকে রাজনৈতিক গুরু মানেন বেডেনক। এ কারণে ২০০৪ সালে ২৫ বছর বয়সে তিনি যোগ দেন কনজারভেটিভ পার্টিতে। 

সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়াশোনা করেন কেমি বেডেনক।

আলোচনায় বেডেনক  

এবছর দলীয় প্রধান নির্বাচনে প্রচারের সময় ৪৪ বছর বয়সী বেডেনক প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনাকে বারবার সামনে নিয়ে আসেন। তিনি জানান, প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনা করার কারণে নানা ধরনের সমস্যাকে বিশ্লেষণ করতে তার সুবিধা হয়, মতাদর্শ তাকে ভারাক্রান্ত করে না।

যুক্তরাজ্যের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর রন ডিসান্টিসের ভক্ত বেডেনক। আবার ডিসান্টিসও তাকে পছন্দ করেন।

দলীয় প্রধান নির্বাচনের সময় নিজেকে প্রতিপক্ষ রবার্ট জেনরিকের চেয়ে বেশি মধ্যপন্থী হিসেবে দেখাতে গিয়ে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র ঘরানার সাংস্কৃতিক যোদ্ধা ও উদ্যমী নেতা হিসেবে তুলে ধরেন বেডেনক, যা আকৃষ্ট করে ডিসান্টিসকে। 

বেডেনক সম্পর্কে বলা হয়, তিনি অনেক সময় যেচে তর্কে জড়ান। তার আক্রমণাত্মক ভঙ্গি দেখে কেউ কেউ মজাও পায়। যদিও কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের কয়েকজন এনিয়ে উদ্বেগে থাকেন।      

উদাহরণ হিসেবে ২০২১ সালের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। সে বছর সোশাল মিডিয়ায় এক সাংবাদিকের কড়া সমালোচনা করেছিলেন বেডেনক। তার অভিযোগ, ওই সাংবাদিকের করা প্রশ্নগুলো ছিল ‘অদ্ভুত’।

কিন্তু অনেকের কাছে এমনকি কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের কাছেও ওই সাংবাদিকের প্রশ্নগুলো স্বাভাবিক লেগেছিল। এ ধরনের প্রশ্ন তারা করেই থাকেন। বরিস জনসনের সরকার সেসময় বেডেনকের পক্ষ নিলেও দলের সদস্যরা তার আচরণে অবাক হয়েছিলেন।

বেডেনক সম্পর্কে আরেকটি মজার তথ্য দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়। তাতে তিনি বলেছিলেন, ১০ বছর আগে লেবার পার্টির এক এমপির ওয়েবসাইট হ্যাক করেছিলেন তিনি। হ্যাক করে তাতে কনজারভেটিভ পার্টি নিয়ে ইতিবাচক কথা লেখেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সদস্য হ্যারিয়েট হারম্যানের ওয়েবসাইটও ২০০৮ সালে হ্যাক করে তাতে ভুয়া পোস্ট দিয়েছিলেন বেডেনক। তাতে বলা হয়, লন্ডনে মেয়র নির্বাচনে বরিস জনসনকে সমর্থন দিচ্ছেন হারম্যান।

এই ঘটনায় পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়েছিলেন বেডেনক। তাকে মাফও করে দেন হারম্যান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত