ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সারাদেশে মোট ১ হাজার ৫৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটি।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে উপ-কমিটির সদস্য সচিব তরিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির প্রতিবেদনে গণঅভ্যুত্থানে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪২৩ জন বলে জানানো হয়েছিল।
সর্বশেষ তালিকা সম্পর্কে তরিকুল বলেন, “আমরা প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ১,৫৮১ জন নিহতের তালিকা তৈরি করেছি, যা পরবর্তীতে চূড়ান্ত করা হবে এবং জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটির চূড়ান্ত যাচাইয়ের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শহীদ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
তিনি জানান, এ তালিকা ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ের কমিটিতে পাঠানো হয়েছে এবং তিনদিনের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষ করতে বলা হয়েছে।
চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে, শহীদের সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে বলেও জানান তরিকুল।
কারণ হিসাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এবং উপ-কমিটি উভয় তালিকায় কিছু ভুয়া নাম থাকার পাশাপাশি আন্দোলনে নিহত হয়নি এমন কিছু ব্যক্তির নাম রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথভাবে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, রেড জুলাই এবং আরও অনেক সংস্থাও তালিকা তৈরিতে সহায়তা করেছে বলে জানান তরিকুল ইসলাম।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ততা নিয়ে এখনও বিভ্রান্তি রয়েছে। তাই, কোনও উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মে তাদের নাম শহীদ হিসাবে প্রকাশ করার আগে আমরা আরও তদন্ত করছি। সম্ভাব্য সকল উপায়ে যাচাই করার আগে কাউকে শহীদ হিসাবে ঘোষণা করা হোক আমরা তা চাই না।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কিছু নীতির সঙ্গে তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কিছু বিষয় আলোচিত হওয়ায় শহীদ বা নিহতদের সমস্ত তথ্য প্রকাশ করা হবে না।”
শহীদদের তথ্যের রাজনীতিকরণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাসির বলেন, “আমরা জেনেছি, কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা পাবলিক প্ল্যাটফর্ম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের দলীয় লোক ঘোষণা করার জন্য ভুক্তভোগীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। অনেক গ্রুপ আছে, যারা নিজেদের স্বার্থে নিহত ও শহীদদের তথ্য অপব্যবহার করার চেষ্টা করছে।”
আহতদের চিকিৎসার জন্য, বিশেষ করে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে শিগগিরই একটি বিশেষ টিম তৈরি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের বিদেশে পাঠানোর জন্যও টিমটি কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন নাসির।
আহতদের তালিকার বিষয়ে জানানো হয়, শিগগিরই তাও চূড়ান্ত করা হবে। শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের তালিকা বা চিকিৎসাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে যেকোনো প্রশ্নের জন্য প্রতিটি জেলার ইউএনও, সিভিল সার্জন বা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ফরহাদ আলম ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির আহ্বায়ক ডাঃ মাহমুদা আলম মিতু, রেড জুলাইয়ের প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ সবুজ ও মানবাধিকার সহায়তা সমিতির প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল বোখারী উপস্থিত ছিলেন। বাসস।