বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একটি গোষ্ঠী বিশ্বব্যাপী সর্বশক্তি নিয়োগ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে—এমন বার্তা ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের ডেকে এনে এ বার্তা দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পরে এ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান তিনি।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের একটি অংশ, বিশেষ করে ভারতের গণমাধ্যম, এই প্রচারণায় জড়িত। (কূটনীতিকদের) আমরা বলেছি, আমাদের সমাজ বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এসেছে।
“আমরা বলছি না যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কোনও ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং সব সরকারের আমলেই কমবেশি ঘটে থাকে। আমাদের লক্ষ্য রয়েছে- এই ঘটানাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, “গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিশীলতায় পরিবর্তন এসেছে। আমরা জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে আসছে ভারত সরকার। এবার আরেকটু বেশি বেড়ে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী পাঠানোর আওয়াজ তুলেছেন।
এ বিষয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন তুললে তার জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন এমন বক্তব্য দিলেন আমরা জানি না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তার রাজনীতির জন্য বিষয়টি ঠিক হয়নি। পারস্পারিক স্বার্থের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে আমরা স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চাই।”
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “তাকে গ্রেপ্তার এবং আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাদের আমরা জানিয়েছি, তার (চিন্ময়) অনুসারীরা বিক্ষোভ করতে পেরেছে, কারণ এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠী ‘গ্লোবাল ক্যাম্পেইন’ চালাচ্ছে। তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। আমরা মেনে নিচ্ছি তাদের এক্ষেত্রে শক্তি আমাদের চেয়ে বেশি। তবে আমরা কূটনীতিকদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি।”
ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “প্রধানত ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর বাইরেও অনেক মিডিয়া ভারতীয় মিডিয়াকে উপজীব্য করে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তবে আমরা বলতে চাই সব সরকারের আমলেই বছরে দুই-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। তবে সরকারের কাজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা, আমরা সেটি করেছি। তবে দেশ ও দেশের বাইরে এ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
“আমরা বার্তা দিতে চাই, বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক কোনও অপতৎপরতা বরদাশত করবে না। আমরা হিন্দু-মুসলিম কোনও ভেদ করতে চাই না। কোনও বিশৃঙ্খলা দেখা গেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”
ব্রিটেনের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের প্রতিবেদন একপেশে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “প্রতিবেদন তৈরিতে সেখানে অবস্থানরত একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষ প্রভাব রেখেছে। যুক্তরাজ্যে আওয়ামীপন্থী সাংসদের সংখ্যাও বেশি। তারা প্রতিবেদনকে প্রভাবিত করেছে। তারা আমাদের দূতাবাসকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।”