ছোট্ট শিশুটিকে সুস্থ আর ভালো রাখতে বাবা-মায়েদের চিন্তার অন্ত নেই। শিশুর নিরাপত্তাও তাদের কাছে গুরুত্ব পায় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এতো নিরাপত্তা সত্ত্বেও ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত শিশু পণ্যগুলো ঠিকই শোভা পায় বাড়িতে।
শিশুদের ব্যবহার্য পণ্যে ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের উপযোগী বলে যে পণ্যগুলো বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোতে আছে বিষাক্ত উপাদান। বাবা-মায়েরাও বেশ উদ্বিগ্ন বিষয়টি নিয়ে।
এ ব্যাপারে সি কে বিড়লা হসপিটালের পেডিয়াট্রিক্স এবং নিওনাটোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ড. শ্রেয়া দুবে বলেন, “বাবা-মায়েরা আজকাল সোশাল মিডিয়ার বদৌলতে শিশু পণ্যের ক্ষতিকর উপাদানগুলো নিয়ে জানতে পারছেন। এই পণ্যগুলোতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়।”
ড. দুবের মতে, শিশু জন্মের পর প্রথম কয়েকবছর নিম্ন স্তরের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানও যে শিশুর শরীর এবং মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর এই বিষয়টি দিন দিন সবার কাছে স্পষ্ট হচ্ছে। ফলে মা-বাবারা বিষাক্ত উপাদান নেই এমন শিশু পণ্যের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।
রাসায়নিক উপাদানগুলো কী কী?
শিশু বিশেষজ্ঞ ড. গৌরি রবি চিন্তলাপল্লী বলেন, “শিশুর যত্নে ব্যবহৃত পণ্যে ফ্যালট এবং এবং ট্রিকলোস্যান এর মতো বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যেগুলো হরমোনের ভারসাম্যজনিত এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট সমস্যার সঙ্গে যুক্ত।”
তিনি আরও বলেন, শিশুদের ব্যবহার্য বোতল এবং খাবারের ক্যানে বিস্ফেনল-এ নামের এক পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা কিনা নানান স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টির পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।
তবে ড. দুবে দিচ্ছে আরও মারাত্মক তথ্য। শিশুদের পোশাকেও নাকে আছে মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান।
তার মতে, সবচেয়ে বিষাক্ত শিশু পণ্যগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুর ত্বকের নিকটেই অবস্থান করে। তিনি বলেন, শিশুদের পোশাকে ব্যবহৃত ফর্মালডিহাইড, ও বিষাক্ত রং, অ্যালার্জি এবং ত্বকের নানা সমস্যার কারণ হতে পারে।
তাহলে উপায় কী?
উপায় নিশ্চয় আছে। তেমন কিছু উপায় বিশেষজ্ঞরাই বাতলে দিচ্ছেন।
- প্যারাবেন-মুক্ত, সালফেট-মুক্ত, এবং বিস্ফেনল-এ মুক্ত শিশু পোশাক ক্রয় করুন
- উদ্ভিজ উপাদান দিয়ে তৈরি লোশন এবং প্লাস্টিকের বদলে কাঠের খেলনা ক্রয় করুন
- প্লাস্টিককে চিরতরে ‘না’ বলুন
- শিশুর জন্য নতুন যেই পণ্যটিই কিনুন না কেন, তা ধুয়ে শিশুকে ব্যবজার করতে দিন
মনে রাখবেন, শিশু পণ্য থেকে বিষাক্ত উপাদান নির্মূলের প্রথম ধাপ হলো সচেতনতা। বাবা-মায়েরা আরও সচেতন এবং সাবধান হয়ে উঠলে, বাজারে এইসব ক্ষতিকর পণ্যের চাহিদা কমে যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে