বেশিরভাগ শেয়ার থেকে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার পর প্রথম দিনের পতন কাটিয়ে দ্বিতীয় দিন সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচকে এসেছে কিছুটা উত্থান। তবে দেশের প্রধান এ পুঁজিবাজারে এদিন লেনদেন ১০০০ কোটি টাকা ছাড়ায়, যা ৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের দিন লেনদেন ছিল এর প্রায় অর্ধেক।
এদিন সকালে লেনদেন শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে সূচক কিছুটা পড়লেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ঊর্ধ্বমুখী হয়। আগের দিনের চেয়ে এদিন বেশি দরে বিক্রি হয় বেশিরভাগ শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
সকাল ১০টায় দিনের লেনদেন শুরু হয়। সূচক ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে থাকা অবস্থায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স লেনদেন শুরুর পরপরই প্রায় ৫০ পয়েন্ট কমে যায়। তবে এরপর থেকেই তা বাড়তে শুরু করে।
এক পর্যায়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ডিএসইএক্স ৬ হাজার ২৫৬ পয়েন্টে উঠে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৬ পয়েন্ট বেশি। এরপর আবার কিছুটা কমে যায় সূচক। বেলা ১১টার পর সূচক আবারও কিছুটা বাড়ে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে সূচক আবারও ৬ হাজার ২৫৬ পয়েন্টে উঠে। এরপর সামান্য কমে দুপুর ১২টায় সূচক ৬ হাজার ২৫০ পয়েন্টে অবস্থান করে; যা ছিল আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি।
শেষ পর্যন্ত ডিএসইএক্স ১৪ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। সূচকটি লেনদেন শেষে অবস্থান করে ৬ হাজার ২৫৪ দশমিক ৩০ পয়েন্টে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ৬ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮০ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ১০ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
এদিন ডিএসইতে ১ হাজার ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই এক হাজার ৪৪ কোটি টাকা ৫৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
তবে ফ্লোর প্রাইস উঠার পর প্রথম কার্যদিবস রবিবার ডিএসইতে লেনদেনের অঙ্ক ছিল প্রায় অর্ধেক ৫৮৮ কোটি ৮ লাখ টাকা।
সোমবার ডিএসইতে ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বাড়ে ২০৭টির, কমে ১৪৫টির এবং অপরিবর্তিত থাকে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর।
তবে অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৯৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ২৩৫ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে।
এই বাজারে এদিন কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয় আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি, ২১ কোটি ৮২ লাখ টাকার, যা রবিবার হয় ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার।
২৬৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়, এর মধ্যে দর বাড়ে ১২৩টির, কমে ১১৮টির এবং অপরিবর্তিত থাকে ২৬টির দর।
দেড় বছর পর গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিএসইসি। তবে বহাল রাখা হয় অনেকটা বড় মূলধনি ৩৫টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস।
ওই সিদ্ধান্ত কার্যকরের প্রথম কার্যদিবস রবিবার দেশের পুঁজিবাজারের মূল্যসূচকের বড় পতন হয়, কমে যায় লেনদেনও।
ওইদিন লেনদেন শুরুর ২০ মিনিট পর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। পরে অবশ্য তা কিছুটা বাড়ে। দিনশেষে এই সূচক আগের কার্যদিবসের চেয়ে প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে অবস্থান করে।
সর্বনিম্ন দর বেঁধে রাখায় অনেকে এতদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি, ফলে ফ্লোর প্রাইস ওঠার সুযোগে অনেকেই শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। সে কারণে ফ্লোর প্রাইস ওঠার প্রথম দিন যে দরপতন হবে, তা অনেকটা অনুমিতই ছিল।
এসব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামার সার্কিট ব্রেকার আগের মতই ১০ শতাংশই থাকছে। অর্থাৎ, কোনও শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।
কোভিড মহামারীর সময় শেয়ারদর ক্রমশ কমতে থাকায় ২০২০ সালের ১৯ মার্চ দেশের পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়।
ওই বছরের জুন থেকে প্রথমে বীমা খাত ও পরে আরও কিছু খাতের শেয়ারদর বাড়তে থাকলে ধাপে ধাপে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছিল কমিশন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর আতঙ্কে আবার পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হলে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয় ২৮ জুলাই।
বিনিয়োগকারীদের একাংশের দাবির মুখে একই বছরের ডিসেম্বরে ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর এমন কোম্পানিও দেখা যায়, তার দর টানা ৪০ কর্মদিবস এক শতাংশের কাছাকাছি কমেছে। পরে ২০২৩ সালের মার্চে আবার এসব কোম্পানিতে সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেওয়া হয়।
এরপর থেকে সূচক মোটামুটি একটি বৃত্তে ঘুরপাক খেলেও শেয়ারের লেনদেন একেবারেই কমে আসে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা অর্ডার বসিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে পারছিলেন না। লেনদেনও কমে আসে অনেকটাই।
ওই অবস্থায় ফ্লোর তুলে স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনসহ বড় বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানায় বিএসইসিকে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কোনও ‘ঝুঁকি’ নিতে চায়নি বিএসইসি।
শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিএসইসি।
পুঁজিবাজারে এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি, এর মধ্যে ৩৮০টির শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নিয়েছে বিএসইসি।