Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

৪২ বছর পর ট্রেনের ভাড়া দিলেন বগুড়ার বেলাল

মঙ্গলবার টিকেটে দাম বাবদ বকেয়া সাত হাজার টাকা পরিশোধ করেন বেলাল উদ্দিন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
মঙ্গলবার টিকেটে দাম বাবদ বকেয়া সাত হাজার টাকা পরিশোধ করেন বেলাল উদ্দিন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা থেকে ১০ বছর বয়সে প্রথম ট্রেনে চড়ে বগুড়া শহরে এসেছিলেন বেলাল উদ্দিন। সেটা ১৯৭০ সালের কথা। এরপর ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বহুবার এই পথে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন তিনি। তবে এসব ভ্রমণের বেশিরভাগই ছিল বিনা টিকেটে।

বেলাল উদ্দিনের পৈতৃক নিবাস বগুড়ার সোনাতলার সুজায়েত পাড়ায় হলেও বর্তমানে তার বসবাস বগুড়া শহরের জহুরুলনগরে। বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন তিনি। সর্বশেষ তিনি কাহালু উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ২০২০ সালে তিনি অবসরে যান। তার বয়স এখন ৬৪ বছর।

দীর্ঘদিন বিনা টিকেটে ট্রেন ভ্রমণ করায় বার্ধক্যে এসে এখন অনুশোচনায় পড়েছেন বেলাল উদ্দিন। সেই অনুশোচনা থেকেই মঙ্গলবার বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে টিকেটের দাম বাবদ বকেয়া সাত হাজার টাকা শোধ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাজেদুর রহমান সাজুর কাছে গিয়ে বকেয়া পরিশোধ করেন বেলাল উদ্দিন।

তার সঙ্গে কথা হয় সকাল সন্ধ্যার। বেলাল উদ্দিন জানান, ১৯৭০ সাল থেকে সোনাতলা-বগুড়া রুটে ট্রেনে তার যাতায়াত শুরু। পরবর্তী সময়ে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টটিউটে পড়াশোনার সুবাদে এবং সেখানে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি থাকায় প্রতি সপ্তাহেই ট্রেনে যাতায়াত করতে হতো তাকে। ওই সময়গুলোতে বিনা টিকেটেই যাতায়াত করেছেন। তখন এটাকে স্বাভাবিক হিসেবেই মনে করতেন তিনি।

বেলাল উদ্দিন বলেন, “একজন মুমিন বান্দার উচিত নিজের হক, বিবি বাচ্চার হক, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনের হক এবং দেশের আপামর জনগণের হক আদায় করা। এই হক আদায় করতে গিয়ে আমি বিবেকের কাছে দংশিত হই। এরপর আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নেই– আমার জীবনের সেই হক আদায় করা দরকার।

“পরে আমি আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনি আমাকে পরামর্শ দেন– আপনি ওই টাকা টিকেটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন, যাতে সরকারের কোষাগারে যায়। পরে আজকে (মঙ্গলবার) এসে সব হিসাব করে ৭ হাজার টাকা জমা দিলাম।”

মূলত পরকালের ভয় থেকেই এই টাকাটা পরিশোধ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “মৃত্যুর পর অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। টাকা জমা দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আর এই কাজের আরও বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার স্ত্রী।”

বকেয়া টাকার হিসাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বেলাল উদ্দিন বলেন, “ডিপ্লোমা শেষে ১৯৮৩ সালে চাকরি শুরু করি। এর আগের ওই ১২ বছরে যদি সপ্তাহে আমি দুইবার যাতায়াত করে থাকি, সেই হিসাবে ৫২ সপ্তাহকে ১২ দিয়ে গুণ করেছি। আবার সেটাকে দুই দিয়ে গুণ করার যা আসে সেটাকে ওই সময়ের ট্রেনের টিকিট মূল্য ৫ টাকা দিয়ে গুণ করে ৬ হাজার টাকার কিছু বেশি পরিমাণ পাওয়া গেছে। আমি সব মিলিয়ে ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি।”

এ বিষয়ে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, “বিষয়টি অনেক ভালো লাগার। তার জমা দেওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। ট্রেন আমাদের জাতীয় সম্পদ। অনেকেই বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন।  এটা কোনোভাবেই উচিত না।” মাঝে মধ্যে অনেকে বিবেকের তাড়নায় এরকম টাকা পরিশোধ করে যান জানিয়ে তিনি বলেন, এর সংখ্যা অবশ্য কম। এর আগে এক নারী এসে ১০ টাকা জমা করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত