Beta
শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

লতিফুরের ট্রান্সকম সাম্রাজ্যে দুই মেয়ের বিরোধ যেখানে

সিমিন রহমান ও শাযরেহ হক।
সিমিন রহমান ও শাযরেহ হক।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

[publishpress_authors_box]

চাঁদপুৃরে পাটকল ছিল পরিবারের, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা জাতীয়করণ হলে নতুন ব্যবসার পথ খোঁজেন লতিফুর রহমান। নেসলের খাদ্যপণ্য আমদানিকারক হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি, তারপর ব্যবসা ছড়ান নানা দিকে, গড়ে তোলেন ট্রান্সকম গ্রুপ।

খাদ্যপণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন, ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স এমনকি সংবাদ মাধ্যমেও বিস্তৃত হয় লতিফুর রহমানের ব্যবসা, যার সম্পদমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়, জনবল গড়ায় ২০ হাজার জনে।

লতিফুর রহমানের মৃত্যুর চার বছরের মধ্যে তার রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়ে বিরোধে এখন দুই মেয়ে সিমিন রহমান ও শাযরেহ হক। ছোট মেয়ে শাযরেহ করেছেন মামলা, ফলে আদালতে গড়াবে উত্তরাধিকারের লড়াই।

এই বিরোধে একপাশে বড় মেয়ে সিমিনের সঙ্গে রয়েছেন লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান। অন্য পাশে থাকা শাযরেহ বলছেন, তার বড় ভাই প্রয়াত আরশাদ ওয়ালিউর রহমানও প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত। ভাই মারা যাওয়ায় একাই মামলার পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।

লতিফুরের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী শাহনাজ রহমান এখন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান। বড় মেয়ে সিমিন রহমান গ্রুপের সিইও, তার ছেলে যারাইফ আয়াত হোসেন ট্রান্সকমের হেড অব ট্রান্সফরমেশন।

ছোট মেয়ে শাযরেহ হক ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক রয়েছেন। লতিফুরের ছেলে আরশাদ ওয়ালিউর রহমানও গত বছর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিচালক ছিলেন।

শাযরেহ হকের অভিযোগ, ট্রান্সকম গ্রুপের ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ থেকে তাকে ও তার ভাইকে বঞ্চিত করতে তার বোন, মা ও বোনের ছেলেরা একটি ‘ডিড অব সেটেলমেন্ট’ তৈরি করেছেন, যাতে কয়েকজনের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

শাযরেহ হকের দাবি, তার বাবা তাকে ৪ হাজার ২৭০টি শেয়ার, তার ভাই ওয়ালিউর রহমানকে ৪ হাজার ২৭০টি শেয়ার এবং তার বোনকে ১৪ হাজার ১৬০টি শেয়ার হস্তান্তর করেছেন বলে তাকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি কখনোই হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষর করেননি। জালিয়াতির মাধ্যমে ওইসব নথি তৈরি করেছে আসামিরা।

এই শেয়ার হস্তান্তরের দলিলে উল্লিখিত তারিখের সপ্তাহ দুয়েক পরে (২০২০ সালের ১ আগস্ট) লতিফুর রহমান মারা যান। মৃত্যুর এক বছর আগে থেকেই তিনি অসুস্থতার কারণে কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

আরশাদ ওয়ালিউর রহমান মারা যান ২০২৩ সালের ১৬ জুন। অর্থাৎ তার মৃত্যুর আগেই এই দলিল সম্পাদন করা হয়।

শাযরেহ হক দাবি করছেন, দলিলটি রেজিট্রার্ড অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) থেকে তিনি সংগ্রহ করেন ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর। তখনই জানতে পারেন, তাকে প্রাপ্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

এ অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার শাযরেহ তার বোন সিমিন রহমান, মা শাহনাজ রহমান, বোনের ছেলে যারাইফ আয়াত হোসেনকে আসামি করে ঢাকার গুলশান থানায় তিনটি আলাদা মামলা করেন।

এই মামলাগুলোতে বলা হয়, শরিয়াহ আইন অনুযায়ী উত্তরাধিকার হিসেবে শাযরেহ হক যে পরিমাণ সম্পদের দাবিদার, সেই পরিমাণ সম্পদ তাকে না দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকে তার মা ও বোনসহ অন্যান্য আসামিরা জাল দলিল তৈরি করেছেন।

মামলায় যা অভিযোগ

একটি মামলার এজাহারে শাযরেহ হক বলেন, আসামিরা তার বাবার প্রতিষ্ঠা করা ট্রান্সকম গ্রুপের শেয়ার এবং পজেশন নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার জন্য জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে একটি ‘ডিড অব সেটেলমেন্ট’ তৈরি করেছেন। ওই দলিলটিতে তার মৃত ভাইয়ের স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে। জাল করা হয়েছে শাযরেহ হকের দুই ছেলে যোহেব আসরার হক ও মিকাইল ইমান হকের স্বাক্ষরও।

আরেক মামলায় বলা হয়েছে, লতিফুরের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও এফডিআরে ১০০ কোটি টাকার মতো ছিল। তার নমিনি ছিলেন তার মা শাহনাজ রহমান। লতিফুর মারা যাওয়ার পর সিমিন সব অর্থ তার নিজের ও মায়ের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলেন।

শাযরেহর দাবি, সিমিন অন্যায়ভাবে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্সের ১৮ শতাংশ শেয়ার কিনে নেওয়ার কথা বলে ৬০ কোটি টাকা নিজের নামে সরিয়ে নেন।

আরেক মামলায় শাযরেহর অভিযোগ, বোন সিমিন ও মা শাহনাজ ট্রান্সকমের তিন কর্মকর্তার সহযোগিতায় তিনটি হস্তান্তর দলিল তৈরি করে সেগুলো জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধকের দপ্তরে জমা দিয়ে বেআইনিভাবে তার এবং তার ভাইয়ের সই জাল করে ডিড অব সেটেলমেন্ট তৈরি করেন। পরে তা ব্যবহার করে ট্রান্সকম গ্রুপের শেয়ার নিজেদের নামে নিয়ে একজন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং অন্যজন সিইওর পদ নেন।

মামলা দায়েরের পর বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশান থেকে ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।

তারা হলেন- ট্রান্সকম গ্রুপের আইন উপদেষ্টা মো. ফখরুজ্জামান ভুইয়া, পরিচালক (কর্পোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, ব্যবস্থাপক আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক ও কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক।

তবে শুক্রবার তারা আদালত থেকে জামিন পান। জামিন আবেদনের শুনানিতে তাদের আইনজীবীরা বলেন, একই বিষয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা রয়েছে, যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। ওই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগে সম্পত্তি দখল, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা ঠিক নয়।

এর আগে গত বছর সিমিন রহমান ও তার মা শাহনাজ রহমান ওই ‘জাল-দলিল’টি নিয়ে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ঢাকার আদালতে মামলা করেন। এক সপ্তাহ পরে সেই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় বলেও শাযরেহ হক তার মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করেন।

এই পাল্টাপাল্টি মামলা ও সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে কথা বলতে সকাল সন্ধ্যা সিমিন রহমান, শাহনাজ রহমানসহ অন্য আসামিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চেষ্টা করে। তবে মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। শাযরেহ হকের ফোন নম্বরটি খোলা থাকলেও তিনি সাড়া দেননি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত