পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের মধ্যে রাঙ্গামাটিতে গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানোর প্রতিবাদে এবং জড়িতদের বিচার দাবিতে ডাকা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শনিবার সকালে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরুর ৩৬ ঘণ্টা পর রবিবার সন্ধ্যায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জরুরি সভার পর প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানায় মালিক-শ্রমিকরা।
সভায় জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, সেনাবাহিনীর রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এরশাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি আলী বাবর, অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবুসহ বাস-ট্রাক মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা হামলায় আহত শ্রমিক ও যানবাহনের ক্ষতিপূরণসহ অন্যান্য দাবি তুলে ধরেন। সভায় সহায়তা প্রাপ্তির আশ্বাস পেয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, সিএনজি-বাস-ট্রাক শ্রমিকরা যারা আহত হয়েছে তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। বাস-ট্রাকসহ যে সকল পরিবহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার জন্য মন্ত্রণালয়ে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হবে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিকালে সংঘর্ষের জের ধরে রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বিকালের সংঘর্ষ ও রাতের গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত হয়।
দীঘিনালার ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটি শহরে মিছিল বের করে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল থেকে ‘ইটপাটকেল ছোঁড়া’কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে। সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কিছু যানবাহনের ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
শুক্রবারের ওই সংঘর্ষে অন্তত একজন নিহত ও দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় রবিবার সকাল ১১টার দিকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানি ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং এসব ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবিতে শুক্রবার খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’।
অন্যদিকে, সংঘর্ষের মধ্যে গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানোর প্রতিবাদে এবং জড়িতদের বিচার দাবিতে ডাকা হয় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট।
পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জারি করা ১৪৪ ধারার সঙ্গে পরিবহন ধর্মঘট ও অবরোধে স্থবির হয়ে পড়ে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি।
রবিবার জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নিলেও অবরোধ ও ধর্মঘট বহাল থাকে। এতে রবিবারও রাঙ্গামাটি শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। চলাচল করনি দূরপাল্লার যানবাহন। কাপ্তাই হ্রদে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ ছিল।
এই পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।