বন্ধু বৃত্তি নিয়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবেন। সেই সাফল্য উদযাপন করতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে গিয়েছিলেন কয়েকজন। এক লহমায় উদযাপনের সেই রাত বিষাদের অন্ধকারে ঢেকে গেছে।
কোনোমতো প্রাণ নিয়ে ফিরলেও সেই ভয়াবহ রাতের স্মৃতি ভুলতে পারছেন না মৌনালি (ছদ্মনাম)। খাওয়া-দাওয়া-কথা বলা, সবই বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় তার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত পরিবারের সদস্যরা।
সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা হয় মৌনালির ভাই আমজাদ আলিমের। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের ট্রমা থেকে সে বের হতে পারছে না। মৌনালিকে যখন ওই ভবন থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখন চোখের সামনে একজনের মৃত্যু দেখেছে সে। এরপর থেকে কিছু খায়নি মৌনালি, কারও সঙ্গে কথাও বলছে না।
বাহ্যিকভাবে তেমন ক্ষতি না হওয়ায় বাড়িতেই রয়েছেন মৌনালি। চেকআপের জন্য চিকিৎসকের কাছে নিতে চেয়েছিলেন তার ভাই। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন মৌনালি। ফলে বাড়িতে চিকিৎসক ডেকে এনে দেখানো হয়েছে।
আমজাদ আলিম বলেন, কোনোভাবেই ওকে কিছু খাওয়ানো যাচ্ছে না। জোর করে কিছু খাওয়ালে বমি করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় চিকিৎসক শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন।
রাতেও ঠিকমতো ঘুমাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ পরপর জেগে ওঠে। অন্ধকার হলে ভয় পাচ্ছে। সারারাত বারান্দায় বসে থাকছে আর বিড়বিড় করে কথা বলছে।”
আগুন থেকে বেঁচে ফেরা বা খুব কাছ থেকে অগ্নি দুর্ঘটনা দেখা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে সকাল সন্ধ্যার। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন ভয়ঙ্কর আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকার কথা।
এদেরই একজন শারমিন শাহরিন টিকলি।
আট মাস আগে তার বাসার লাগোয়া ভবনে গ্যাসের মিটারে আগুন লেগেছিল। তিনিই প্রথম সে আগুন প্রথম দেখেছিলেন জানিয়ে বলেন, “অনেক ভয়াবহ ছিল, বিকট শব্দ। সেই ঘটনার পর আমি এত ভয় পেয়েছিলাম যে ট্রমা থেকে বের হতে প্রায় ছয় মাস সময় লেগেছে। আমি এখনও অনেক ভয় পাই, আকাশে উড়োজাহাজ উড়ে গেলেও লাফ দিয়ে উঠি।
“সেই থেকে ভোর পাঁচটার আগে ঘুমাতে পারি না, সারারাত জেগে থাকি।”
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুরে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। জীবন বাঁচাতে বিভিন্নভাবে বাণিজ্যিক এ ভবন থেকে নামার সময় দুর্ঘটনা ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২৬ জন প্রাণ হারান, আহত হন শতাধিক।
সেদিন ওই ভবনের ১৩ তলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন আবরার সুজনের বড় ভাই।
তিনি বলেন, “ভাইয়া কোনোরকমে প্রাণে বেঁচেছেন। মৃত্যুকে এত কাছে থেকে দেখার পর তিনি একদম নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এতদিন পর এখনো টেলিভিশনে বা পত্রিকায় এ ধরনের ঘটনার খবর দেখলে আগের মতো আতঙ্কিত হয়ে যান।”
দেশের একটি গণমাধ্যমে সদ্য যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নুসরাত। মাল্টিমিডিয়া টিমের হয়ে তিনি বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে নিহত আহতদের খবর সংগ্রহে গিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সেখানে সারি সারি মৃহদেহ, আহতদের কষ্ট, স্বজনদের আহাজারিতে ট্রমাটাইজড হয়ে পড়েছেন তিনি। ভবিষ্যতেও এই পেশায় এই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে, সেই আতঙ্ক থেকে এরই মধ্যে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, ট্রমা হলো এক ধরনের মনোদৈহিক চাপজনিত ঘটনা। একজন মানুষ কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি হলে তার মনে ট্রমা সৃষ্টি হতে পারে। আবার ক্ষেত্রবিশেষে একজন মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে এমন কোনও ঘটনা থেকে তার জীবনে ট্রমা সৃষ্টি হতে পারে।
একে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বা সংক্ষেপে পিটিএসডি বলা হয় ।
কোনও দুর্ঘটনা, সহিংসতা, দুর্যোগের শিকার হয়েছেন, মর্মান্তিকভাবে প্রিয় কারও মৃত্যু দেখেছেন, এরকম কোন ধরনের ভীতিকর ও কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেলে অনেকেই পিটিএসডিতে আক্রান্ত হন। সঠিক চিকিৎসা না হলে জীবনভর বয়ে বেড়াতে হয় ট্রমা।
২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি উদ্ধারকাজে হাত লাগায় অসংখ্য সাধারণ মানুষ।
এদেরই একজন ছিলেন নওশাদ হাসান হিমু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি পরিচিত ছিলেন হিমালয় হিমু নামে। ভবন ধসের দিন থেকে টানা ১৫ দিন সেখানেই কেটেছে তার রাত-দিন। আটকে পড়া শ্রমিকদের করাত দিয়ে হাত-পা কেটে উদ্ধার করেছেন।
উদ্ধারকাজ শেষ হলে আরও ১৭ দিন কাটিয়েছেন হাসপাতালে। নিজের উদ্যোগেই সেবা-শুশ্রুষা করেছেন পঙ্গু রোগীদের।
সেই অসীম সাহিসী হিমু ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ষষ্ঠ বার্ষিকীতে আত্মহত্যা করেন।
হিমুর বড় বোন নওশিন আফরোজ হিয়া জানিয়েছিলেন, রানা প্লাজার ঘটনা ভুলতে পারেননি হিমু। ডিপ্রেশনে পড়ে গিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা বারবার থাকে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসক বা কাউন্সিলরের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু হিমু রাজি হননি। সেই ডিপ্রেশন থেকেই নিজেই নিজের হন্তারক হয়েছেন।
ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী হিমুর মৃত্যুর সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, “রানা প্লাজায় চাপা পড়া মানুষের হাত-পা করাত দিয়ে কেটে বের করার কাজের যে অসহনীয় অভিজ্ঞতা তা প্রায়শই হিমুকে ঘুমাতে দিত না। বিভিন্ন সময় সে বলতো মানুষের রক্তাক্ত শরীরের কাটা টুকরোগুলো ঘুমের ভেতর হাজির হয়। এই দুঃসহ স্মৃতি প্রতিদিন পীড়া দিত, তাড়া করে বেড়াত।”
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ট্রমাটাইজড হয়ে পড়েন আহত অনেক শ্রমিক। অনেকেই শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও আর ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে।
২০১৪ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট রানা প্লাজা ধসের পর বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের ওপর একটি জরিপ চালায়৷ সেই জরিপে দেখা যায়, ৯০ ভাগ শ্রমিকই প্রাথমিক ট্রমায় আক্রান্ত। তিন মাস পর আরেকটি জরিপে দেখা যায়, কমপক্ষে ৪০ ভাগ শ্রমিক গুরুতর ট্রমার মধ্যে রয়েছে।
কথা হয় রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ বটম পোশাক কারাখানার কর্মী আনিসুল ইসলামের সঙ্গে। ঘটনার পরদিন তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। শারীরিক ক্ষতি তেমন না হলেও, তিনি মানসিকভাবে এখনো বিপর্যস্ত।
আনিসুল ইসলাম বলেন, “দুর্ঘটনার কয়েক মাস পর আমি একটি পোশাক কারখানায় কাজ নিই। কিন্তু তিন দিন পর কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। মেশিন ধরতে গেলেই আমার হাত-পা কাঁপে। বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রচণ্ড ভয় লাগে।”
রানা প্লাজায় আহতদের মধ্যে আতঙ্কগ্রস্তদের মানসিক চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছিলেন মনোসামাজিক চিকিত্সক দেওয়ান সাফায়েত আহমেদ। সেসময় তিনি বলেছিলেন, আহতদের প্রতি ১০ জনের পাঁচজন ট্রমায় আক্রান্ত। সে হিসেবে আহত দুই হাজার ৪৩৮ জনের মধ্যে অর্ধেকই ছিলেন মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড।
দেওয়ান সাফায়েত আহমেদ জানিয়েছিলেন, সঠিক চিকিত্সা না হলে এর শেষ পরিণতি আত্মহত্যা।
পিটিএসডি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি বড় দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্টদের ট্রমাটাইজড হয়ে যাওয়ার ঘটনা খুব স্বাভাবিক। কেউ মেনে নিতে পারেন, কেউ পারেন না। কারণ সবার মানসিক স্থিতিশীলতা, মানসিক শক্তি, মেনে নেওয়ার ক্ষমতা একরকম নয়। প্রতিটি মানুষ যেমন শারীরিকভাবে আলাদা, তেমনে মানসিক ভাবেও আলাদা।
তাই একই ঘটনা একজন মেনে নিতে পারছে, অন্যজন কেন পারছে না; সে প্রশ্ন করা অনৈতিক। অবান্তরও বটে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, পিটিএসডিতে আক্রান্ত হলে যে ঘটনার কারণে এটা হয়েছে তার মধ্য দিয়েই বারবার যাচ্ছেন বলে অনুভব করতে থাকেন ভুক্তভোগী। একই ঘটনা আবার ঘটতে পারে বলে আতঙ্ক বোধ করেন তিনি। অনেকেই সংশ্লিষ্ট অনেক কিছু মনে করতে পারেন না, সাময়িক স্মৃতি ভ্রম তৈরি হয়, ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখেন।
মানসিক ট্রমা বা পিটিএসডি নিয়ে কথা হয় মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব জানালেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আহত, উদ্ধারকর্মীদের কাউন্সিলিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তিনি।
সকাল সন্ধ্যাকে এই চিকিৎসক বলেন, “অনেকেই রয়েছেন তার ট্রমাটাইজড হওয়ার ঘটনা মনে করিয়ে দিতে পারে এমন যেকোনো কিছু শুনলে বা দেখলে তীব্র প্রতিক্রিয়া, আতঙ্ক, উদ্বেগ বোধ করেন, চমকে ওঠেন। তাই তাদের সঙ্গে ঘটনার কথা মনে হয়, এমন কিছু করা যাবে না, বারবার সে ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেওয়া যাবে না।
“কারণ আমরা যতবার সেটা বলব, ততোবার তিনি আরও ট্রমাটাইজড হবেন। তাকে মানসিকভাবে শান্তিতে থাকতে দিতে হবে। অযথা চাপ দেওয়া বা খোঁচাখুঁচি করা যাবে না। তিনি নিজে থেকে যদি কিছু বলতে চান, তাহলে সেই সুযোগ দিতে হবে। তাকে তার মতো করে থাকতে দিতে হবে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পত্রিকা বা অন্য কোনও মাধ্যম যেখানে সংশ্লিষ্ট ঘটনা সম্পর্কিত ছবি, ভিডিও বা যেকোনো ধরনের তথ্য পাওয়া যেতে পারে, সেসব থেকেও দূরে রাখার পরামর্শ ডা. বিপ্লবের।
এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য, কাছের মানুষদের সচেতনতার ওপর জোর দিলেন তিনি। বললেন, বড় দুর্ঘটনার পর মন খারাপ থাকা স্বাভাবিক। তবে দেখতে হবে সেইটা যেন তিন থেকে ছয় মাসের বেশি দীর্ঘস্থায়ী না হয়।
সোসাইটি ফর সুইসাইড প্রিভেনশন বাংলাদেশের উপদেষ্টা ডা. সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ‘সিভিয়ারিটি’ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
মানসিক রোগের দিক থেকে দুর্যোগকে দু ভাবে ভাগ করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রথমটিকে বলা হয় একিউট পর্ব, যার সময়কাল প্রথম তিন মাস। এক্ষেত্রে পরিবার কাছের মানুষের সহায়তা পেলে বেশিরভাগ সমস্যা এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়।
দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি বা লং টার্ম অবস্থা। এই সময় শুরু হয় তিন মাস পর থেকে।
এ পর্যায়ে অনেক মানসিক রোগের আবির্ভাব হয়। যেমন ঘুমের সমস্যা, পুরনো মানসিক সমস্যা আবার ফিরে আসা, স্ট্রেস সম্পর্কিত অসুখ, দুশ্চিন্তা, পিটিএসডি বা ট্রমা পরবর্তী স্ট্রেস জনিত অসুখ। এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর সামনে ঘটনার ফ্ল্যাশব্যাক তৈরি হয়। সাধারণত ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পিটিএসপি হতে পারে। আবার উদ্ধার কাজ বা ত্রাণকাজে যুক্ত ছিলেন এমন ১০ শতাংশ মানুষও পিটিএসডির শিকার হতে পারেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ট্রমার মধ্য দিয়ে যাওয়া কোনও ব্যক্তির সান্নিধ্যে এলে তাকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। যদি তারা কথা বলতে চান, তাহলে মন দিয়ে শুনতে হবে।
“সবচেয়ে বড় কথা, তাদের প্রতি সহানুভূতি বা করুণার পরিবর্তে সমানুভূতি বা এম্প্যাথি দেখাতে হবে। করুণা দেখালে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। তাদের আবেগ প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। সেইসঙ্গে তাদের খাদ্যাভাস এবং বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।”
শুরুতেই ট্রমা আক্রান্ত মানুষকে কোনও ধরনের সাহায্য গ্রহণ করতে বাধ্য না করার ওপর জোর দিলেন এই চিকিৎসক। বারণ করলেন অযাচিত উপদেশ দেওয়ার বিষয়েও।
ডা. হেলাল বলেন, “তারা যখন দুঃখ-দুর্দশার কথা বলবেন, তখন বাধা দেওয়া যাবে না, করুণার মতো কিছু করবেন না এবং নিজের মতামত তাকে চাপিয়ে দেবেন না। গুজবে উৎসাহিত করবেন না।
“আর এর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এ ধরনের ঘটনাকে বারবার তাদের সামনে ব্যাখ্যা করবেন না, দুর্ঘটনার জন্য তাদের দায়ী করে কথা বলবেন না। কী করলে আর কী না করলে তারা এই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতেন না, এসব কথা বলে তাদেরকে বিহ্বল করবেন না।”
পিটিএসডিতে আক্রান্ত হলে আচরণগত পরিবর্তন হতে পারে জানিয়ে ডা. হেলাল বলেন, এতে আক্রান্ত অনেকেই ক্রোধ বোধ করেন, আবেগ অনুভব করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, দুশ্চিন্তা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, বিরক্তি বোধ করেন, অনিদ্রায় ভোগেন, সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারেন না। কিছু শারীরিক প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। যেমন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বমি-ঘামের মতো সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেই এ ট্রমার কারণে মাদকাসক্তও হয়ে পড়েন।