ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে গণহত্যার অভিযোগে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে ইন্টারপোলের শরণ নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এজন্য শেখ হাসিনার নামে ‘রেড নোটিস’ জারি করতে ফ্রান্সে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থাটির সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) মাধ্যমে দুদিন আগে এই চিঠি পাঠানো হয়। শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পলাতক অন্য নেতাদের নামেও রেড নোটিস জারির অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে ভারতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাতিল করলেও দিল্লি তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধে সাড়া দেবে না বলে সে দেশের কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতের ঘটনাগুলো নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। গণহত্যার বিচার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করতে এই আদালত সচলও করা হয়েছে।
এরপর ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পাওয়া তাজুল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার নামে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। সেই পরোয়ানা কার্যকর করতেই ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
“তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেন্ডিং আছে। কিন্তু বাংলাদেশের জুরিসডিকশনের বাইরে তিনি চলে গেছেন, সে কারণে আন্তর্জাতিক পুলিশিং সংস্থা ইন্টারপোল যাতে তাকে গ্রেপ্তার করার ব্যবস্থা নেয়, অন্তত তার ব্যাপারে রেড অ্যালার্ট জারি করে, সে ব্যাপারে আমরা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি।”
এর আগে গত রবিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের যারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, তাদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তাজুল বলেন, “গত পরশুদিন (১০ নভেম্বর) ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিস বা রেড অ্যালার্ট পাঠানোর জন্য ইন্টারপোলকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। আমাদের এই দেশের এক সময় যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যিনি এই মামলার আসামি, পলাতক আছেন, দেশের বাইরে আছেন, তাকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইন্টারপোলের যে ব্যবস্থা আছে, সিস্টেম আছে সেই সিস্টেমের কাছে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি।”
শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের রেড নোটিসে আসলে কোনও কাজ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
পুলিশের এই আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড নোটিস জারি করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করায় সাহায্য করতে পেরেছে, তার নজির নেই।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামেও ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করিয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি, ওই রেড নোটিসও ইন্টারপোল বেশিদিন রাখেনি।
ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, এখন বাংলাদেশি ৬৪ জনের নামে রেড নোটিস ঝুলছে।
তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর খুনি শরীফুল হক ডালিম, রাশেদ চৌধুরী, মোসলেহ উদ্দিনের নামও রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে তাদের ফেরত আনার চেষ্টা চালিয়েও সফল হওয়া যায়নি।
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর নামেও রেড নোটিস ঝুলছে ইন্টারপোলে। হারিছ চৌধুরী কয়েক বছর আগে বাংলাদেশেই মারা গেছেন বলে তার পরিবার থেকে দাবি করা হচ্ছে, যদিও এখনও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।