ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় আকস্মিক বন্যায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারি বৃষ্টির ফলে গোমতি নদীর পানি উপচে সৃষ্ট এই বন্যার কারণে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রাজ্যে জরুরি কার্যক্রম সেন্টারের (এসইওসি) এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ৬ হাজার ৬২০টি পরিবারের ৩৪ হাজার ১০০ জন ত্রিপুরার আটটি জেলায় ছড়িয়ে থাকা ৩৪৬টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
ত্রিপুরার রাজস্ব বিভাগ জানিয়েছে, বন্যা পানিতে ডুবে এবং ভূমিধসের কারণে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে দুজন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বৃহস্পতি ও শুক্রবার ত্রিপুরার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর, উনাকোটি জেলার কৈলাসাহার, কুমারঘাট, ধলাই জেলার কামালপুর, লংট্রাইভ্যালি ও গান্ডাচেরা, সেপাহিজলার বিশালগড় ও সোনামুরা, খোয়াই জেলার টেলিয়ামুরা ও খোয়াই, গোমতি জেলার উদয়পুর, করবুক ও আমরপুর, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাবরুম, বেলোনিয়া, শান্তিরবাজার এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার সদর ও জিরানিয়া উপ-বিভাগসহ আগরতলা শহরের বিস্তৃত এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও বন্যা দেখা দিয়েছে। উদ্ধারকারী দলগুলো রাতদিন কাজ করে চলেছে। রাজ্যের বেশিরভাগ নদীর পানির স্তর বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার গোমতি জেলার গুমতি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার বিষয়ে ত্রিপুরার বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেছেন, এ ধরনের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “গুমতি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের কোনও দরজা খোলা হয়নি। এই বাঁধ ৯৪ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পানির প্রবাহ আটকাতে পারে। পানির প্রবাহ এর চেয়ে বেশি হলে তা স্বাভাবিকভাবেই বাঁধ উপচে প্রবাহিত হয়।”
প্রশাসন পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন আছে জানিয়ে এ ঘটনায় আতঙ্কের কিছু নেই বলেও জানান তিনি।
ভারি বৃষ্টির কারণে ত্রিপুরার অনেক এলাকায় ভূমিধসে খবর পাওয়া গেছে। ভূমিধসে সঙ্গে গাছ পড়ে যাওয়ার কারণে ত্রিপুরার জাতীয় মহাসড়কও বন্ধ হয়ে গেছে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা বুধবার বন্যা-কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন জেলায় কর্মকর্তারা বন্যা-কবলিত মানুষদের সহায়তা প্রদানে কাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তা করতে এগিয়ে আসার জন্য তিনি সব সামাজিক সংগঠনের প্রতিও আহ্বান জানান।
নিজের এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, “আমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা করার এবং অবিলম্বে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বন্যায় প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে তাৎক্ষণিক ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “ত্রিপুরায় ভারি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং প্রায় ৫ হাজার ৬০০ পরিবার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।”
ত্রিপুরায় বাঁধ খুলে দেওয়া বাংলাদেশে বন্যার কারণ নয় : ভারত
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের জেলাগুলোতে যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তা ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতী নদীর ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে হয়নি বলে দাবি করেছে ভারত।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ত্রিপুরার গোমতি নদীর ওপর ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে বাংলাদেশে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এটি তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।
“আমরা উল্লেখ করতে চাই, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতি নদী ও আশপাশের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে গত কয়েক দিনে এই বছরের সবচেয়ে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এই বিস্তৃত এলাকার পানি বাঁধের নিচের দিকে প্রবাহিত হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে বন্যা দেখা দিয়েছে।”
ডুম্বুর বাঁধটি সীমান্ত থেকে বেশ দূরে অবস্থিত জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাঁধটি বাংলাদেশের ওপরের দিকে ১২০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত। এটি একটি স্বল্প উচ্চতার (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ একটি গ্রিডে সরবরাহ করা হয় এবং ত্রিপুরার এই গ্রিড থেকে বাংলাদেশও ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়।”
গোমতী নদীর প্রায় ১২০ কিলোমিটার প্রবাহপথজুড়ে ভারতের আমরপুর, সোনামুরা ও সোনামুরা-২ এলাকায় পানির স্তর পর্যবেক্ষণে তিনটি কেন্দ্র রয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “ত্রিপুরা এবং সংলগ্ন বাংলাদেশের জেলাগুলোতে ২১ আগস্ট থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। নদীর পানি অনেক বেড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি প্রবাহিত হতে দেখা যায়।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার অভিন্ন নদীগুলোতে বন্যা একটি অভিন্ন সমস্যা, যার কারণে উভয় পক্ষের মানুষকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয় এবং এগুলো সমাধানের জন্য ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “নদীর পানি বিষয়ক সহযোগিতা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও কারিগরি আলোচনার মাধ্যমে পানিসম্পদ এবং নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগ সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”