Beta
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

ট্রাম্পকে রিপাবলিকান পার্টির আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্স।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্স।
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। আর তার রানিং মেট তথা ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সেনেটর জেডি ভ্যান্স।

উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে সোমবার শুরু হওয়া রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিনে এই মনোনয়ন দেওয়া হয়। এদিন সম্মেলনে ট্রাম্পকে ডান কানে বড় ব্যান্ডেজ বাধা অবস্থায় হাজির হতে দেখা গেছে।

গত শনিবার পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। গুলি ট্রাম্পের ডান কানে লাগে। অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। হামলার ৪৮ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে চার দিনের এই সম্মেলন শুরু হয়েছে।

ওই ঘটনার পর ট্রাম্প সোশাল মিডিয়ায় বলেছিলেন, তিনি জাতীয় কনভেনশনে দুদিন পর যোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নেন, প্রথম দিনেই তিনি সম্মেলনে উপস্থিত হবেন।

সোমবার কানে ব্যান্ডেজ নিয়েই সম্মেলনে প্রবেশ করেন ট্রাম্প। এসময় উপস্থিত জনতা ট্রাম্পের মতোই তাদের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ‘ফাইট! ফাইট! ফাইট’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ঠিক হামলায় আহত হওয়ার পর মুহুর্তে ট্রাম্প যেভাবে ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ‘ফাইট! ফাইট!’ বলে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন।

এসময় সাবেক এই প্রেসিডেন্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং রানিং মেট সেনেটর জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে ডায়াসে দাঁড়ান।

আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে এক বক্তৃতায় আনুষ্ঠানিকভাবে দলের মনোনয়ন নেবেন ট্রাম্প। ৫ নভেম্বর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের সঙ্গে তার ভোটের লড়াই হবে।

ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভ্যান্স কে

সেনেটর জেডি ভ্যান্স একজন লেখক, যাকে ‘ট্রাম্প হুইস্পার’ বলা হয়। কারণ তিনি ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভোটার কারা সেটা খুঁজে বের করেন এবং ট্রাম্পকে সেই অনুযায়ী পরামর্শ দেন। ট্রাম্পের সমর্থকদের সম্পর্কে তার বোঝাপড়া কারণেই এবার তাকে কেবল নিউজ প্রোগ্রামগুলোতে ঘন ঘন অতিথি হিসেবে দেখা গিয়েছিল।

এক সময়ের ‘নেভার ট্রাম্প’ রিপাবলিকান ভ্যান্স (৩৯) ২০১৬ সালে তার প্রকাশিত স্মৃতিকথা ‘হিলবিলি এলিজি’র জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। ২০২১ সালে সেনেটর হিসেবে ভোটে দাঁড়ানোর আগে ট্রাম্পের মনও জয় করেন। সাবেক আইনজীবী ভ্যান্স তখন থেকেই ট্রাম্পের অনুগত সমর্থক হয়ে উঠেন। এরপর থেকে তিনি ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির জনতুষ্টিবাদী রাজনীতির বিশেষ ব্র্যান্ডের উত্তরাধিকারী হয়ে উঠেছেন।

পরিবার এবং কর্মজীবন

১৯৮৪ সালের ২ আগস্ট ওহিওর মিডলটাউনে জন্ম নেওয়া ভ্যান্সের শৈশব কাটে কেনটাকিতে। ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইয়েল ল স্কুলে পড়ার আগে তিনি ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মেরিন কর্পসে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি স্টার্টআপ বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করেন।

ভ্যান্সের স্ত্রী ঊষাও ইয়েল ল স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। ঊষা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এবং ফেডারেল আপিল বিচারক বিচারপতি ব্রেট কাভানাফের ক্লার্ক ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি ল ফার্ম মুঙ্গের, টোলেস অ্যান্ড ওলসনের একজন সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তিনি ‘জটিল সিভিল লিটিগেশন এবং আপীল’ পরিচালনা করেছিলেন। সেখানে তিনি ‘উচ্চ শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, বিনোদন এবং প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টরসহ’ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেন। সংস্থাটি থেকে সোমবার তিনি পদত্যাগ করেছেন।

ঊষা ভ্যান্স ভারতীয় বংশোদ্ভুত অভিবাসী বাবা-মায়ের মেয়ে। তিনি সান দিয়েগোর শহরতলীতে বড় হয়েছেন। ভ্যান্সের তিনটি ছোট সন্তান রয়েছে- ইওয়ান, বিবেক এবং মিরাবেল।

‘হিলবিলি এলিজি’

২০১৬ সালে জেডি ভ্যান্স তার বেস্ট সেলিং বই ‘হিলবিলি এলিজি’ প্রকাশ করেন। বইটিতে তিনি পূর্ব ওহাইওর একটি দরিদ্র শহর রাস্ট বেল্টে তার শৈশবের গল্প তুলে ধরেন। বইটিতে আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণীর জীবন-সংগ্রামের গল্পও উঠে আসে।

২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি সিএনএনের একজন কন্ট্রিবিউটর ছিলেন। তার বইটি থেকে ২০২০ সালে একটি নেটফ্লিক্স মুভি বানানো হয়, যাতে অভিনয় করেন অ্যামি অ্যাডামস এবং গ্লেন ক্লোজ।

এক সময়ের ট্রাম্প সমালোচক

গত মাসে সিএনএনের কে-ফাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যান্স ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ট্রাম্প ও তার নীতির কঠোর সমালোচনা করা টুইটে লাইক দিতেন। সেসময় ধারণা করা হয়েছিল ভ্যান্স ২০১৬ সালের ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রশাসনে কাজ করতে পারেন।

ট্রাম্পকে ‘সিরিয়াল যৌন নিপীডক’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘৃণ্য, খলনায়ক, দুশ্চিন্তাকারী সেলিব্রিটিদের একজন’ বলে অভিহিত করা টুইটেও লাইক দিয়েছেলেন ভ্যান্স। ২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের সমাবেশ নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের সমালোচনাও করেন ভ্যান্স। কিন্তু এখন তিনি ট্রাম্পের সেই অবস্থানের সমর্থন করেন।

কে-ফাইল এর আগেও রিপোর্ট করেছিল যে, ভ্যান্স ২০২১ সালের জুলাইয়ে ওহিও থেকে সেনেট নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে ট্রাম্প-বিরোধী অতীতের টুইটগুলো মুছে ফেলেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেও ভ্যান্স ব্যক্তিগতভাবে ভাবতেন যে ট্রাম্প ‘আমেরিকান হিটলার’ কিনা। তার কয়েক মাস পরে দ্য আটলান্টিকে এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ট্রাম্প একটি ‘সাংস্কৃতিক হিরোইন’।

ভ্যান্স আরও বলেন যে, তিনি এমনকি ২০১৬ সালে ক্লিনটনের পক্ষে ভোট দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন যে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইভান ম্যাকমুলিনকে ভোট দেবেন।

সেনেট

২০২২ সালের সেনেট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি ও ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়ায় ভ্যান্স সহজেই জিতে যান। তার চেয়েও জনপ্রিয় প্রার্থীদের ট্রাম্প সমর্থন দেননি। ট্রাম্প-পন্থী প্রযুক্তি মোগল পিটার থিয়েলও তাকে নির্বাচন করার জন্য প্রচুর অর্থ দেন।

রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও সাহায্য পাঠানোর আইনের বিরোধিতা করে কংগ্রেসে বিদেশি সাহায্যের বিরোধী ছিলেন ভ্যান্স।

২০২৩ সালে ওহিওর ভোটাররা গর্ভপাতের অধিকার রক্ষা করার জন্য গণভোটের পক্ষে সমর্থণ জানায়। কিন্ত একদিন পরে ভ্যান্স রিপাবলিকানদের অবস্থান সম্পর্কে ভোটারদের কাছে আরও কার্যকরভাবে বার্তা দেওয়ার জন্য এর উপর একটি ফেডারেল নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। অথচ ট্রাম্পও বলেছিলেন, বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার রাজ্যের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।

সাম্প্রতিক ট্রাম্প সমর্থন

সেনেটে ট্রাম্পের অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে ভ্যান্স তার শক্তিশালী মিত্র হয়ে উঠেন। তার সেনেট নির্বাচনে প্রচারের আগে ভ্যান্স ট্রাম্পকে ‘নিন্দনীয়’ বলার জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলেন।

২০২১ সালে ভ্যান্স সিএনএনকে বলেন, ‘অনেক লোকের মতো আমিও ২০১৬ সালে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলাম। আমি তার সম্পর্কে ভুল বলার জন্য অনুশোচনা করছি।” ট্রাম্প একজন ভালো প্রেসিডেন্ট ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন ভ্যান্স।

সম্প্রতি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের আদালতে বিচার চলাকালীনও ট্রাম্পের পাশে ছিলেন ভ্যান্স। তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন যে, তার দৃষ্টিভঙ্গি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের থেকে আলাদা। পেন্স ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জো বাইডেনের পক্ষে ইলেকটোরাল ভোট অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এতে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।

মে মাসে সিএনএন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎরের সময় ভ্যান্স ২০২৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন, বিজয়ী যেই হোক না কেন, যদি তা একটি ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনে যেকোনও ইস্যু অনুসরণ করার সুযোগ থাকা উচিৎ, যেমন তারা অতীতে করেছে। এসময় তিনি ২০০০ এবং ২০২০ সালের দিকে ইঙ্গিত করেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

শনিবার ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পরে ভ্যান্স বাইডেনের প্রচারণাকে দোষারোপ করে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন।

তিনি লেখেন, “আজকের এই ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাইডেনের প্রচারের কেন্দ্রীয় ভিত্তি হলো, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী তাকে যে কোনও মূল্যে থামাতে হবে। এই বয়ানই পরিস্থিতিকে সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হত্যাচেষ্টার দিকে নিয়ে যায়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত